পঙ্কজের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়, দখল বাণিজ্য করে কোটিপতি

*পঙ্কজ দেবনাথকে দল থেকে ওএসডি
* ঢাকা ও তার গ্রামের বাড়িতে নিজস্ব সন্ত্রাসী ও ক্যাডার বাহিনী
*সরকারি খাস জমি বরাদ্দের নামেও বাণিজ্য
*১/১১-এর সময় শীর্ষ দুর্নীতিবাজ হিসেবে গ্রেফতার হন পঙ্কজ
*প্রধানমন্ত্রীর কাছে পঙ্কজের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন নেতা কর্মীরা
পঙ্কজ দেবনাথকে দলীয় সকল কার্যক্রম থেকে বাইরে থাকতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। মূলত পঙ্কজ দেবনাথকে দল থেকে ওএসডি করা হয়েছে। এতেই শেষ নয়, পর্যায়ক্রমে এর চেয়ে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
দলীয় সূত্র জানায়, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথকে সম্মেলনের কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ক্যাসিনো অভিযানে বিতর্কিত হওয়ায় সংগঠনের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওসারকে সংগঠন থেকে অব্যাহতির একদিন পরেই এ সিদ্ধান্তের কথা জানা গেল।
অভিযোগে জানা গেছে, পঙ্কজ দেবনাথ স্বেচ্ছাসেবক লীগের নামে ঢাকা ও তার গ্রামের বাড়িতে নিজস্ব সন্ত্রাসী ও ক্যাডার বাহিনী গঠন করে খেয়াঘাট, টেম্পো স্ট্যান্ড, জলাশয়, লঞ্চঘাট, হাট-বাজার, নদীর বালু, মাছের পাড়া, খাদ্য গোডাউন, ভূমি অফিস, ইটভাটা থেকে লাখ লাখ টাকা লুটপাট করেছেন। তিনি সরকারি খাস জমি বরাদ্দের নামেও বাণিজ্য করেছেন। দখল বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছেন।
তার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করে জানানো হয়, সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথের অসাংগঠনিক কার্যক্রম, দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন, দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, ও লুটপাটের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
এবিষয়ে সংগঠনের নেতা আনোয়ার হোসেন সাগর বলেন, পঙ্কজ দেবনাথ ১/১১-এর সময় শীর্ষ দুর্নীতিবাজ হিসেবে গ্রেফতার হন। বর্তমানে তার নির্বাচনি এলাকা বরিশাল-৪ আসনসহ রাজধানীর উত্তরা ও ধানমন্ডিতে বিলাসবহুল বাড়ি, অভিজাত এলাকায় নামে-বেনামে একাধিক প্লট, ফ্ল্যাট ও গার্মেন্টস এবং পরিবহন রয়েছে। ভারতেও তার একাধিক বাড়ি ও মার্কেট রয়েছে। তিনি হুন্ডি, মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে দেশের বাইরে শত শত কোটি টাকা পাচার করেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, ২০১৭ সালে মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় বিভিন্ন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৫৫ জন নৈশ প্রহরী কাম দফতরি অবৈধভাবে নিয়োগ দেন পঙ্কজ দেবনাথ। এর জন্য প্রত্যেকের কাজ থেকে ৫-৭ লাখ টাকা নেন তিনি। এছাড়াও হাইস্কুল ও কলেজে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে ডোনেশনের নামে প্রত্যেকের কাছ থেকে ১০-১৫ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নেন এই এমপি।
দলীয় সূত্র বলছে, ২০১২ সালের ১১ জুলাই স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই কমিটিতে সভাপতির দায়িত্ব পান মোল্লা আবু কাওছার। আর সাধারণ সম্পাদক হন পঙ্কজ দেবনাথ। দায়িত্ব পাওয়ার পর কার্যত কোনো উন্নয়ন দেখাতে পারেননি এই দুই নেতা। বরং অহঙ্কারের ভারে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ঝিমিয়ে পড়েছে।
দলীয় সূত্র মতে, দশম জাতীয় নির্বাচনে বরিশাল-৪ আসন থেকে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন পঙ্কজ দেবনাথ। এরপর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি একই আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন।
১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্মেলন এ পর্যন্ত দুইবার হয়েছে। ২০০৩ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম সম্মেলনে বাহাউদ্দিন নাছিমের সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন পঙ্কজ দেবনাথ। এরপর ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সম্মেলনেও তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। এই সম্মেলনে প্রথমবারের মতো সভাপতি হয়েছিলেন মোল্লা আবু কাওছার।
সংগঠনের তৃতীয় সম্মেলন আগামী ১৬ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে হওয়ার কথা রয়েছে। মোল্লা কাওছার ও পঙ্কজ দেবনাথকে ছাড়া সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সংগঠনের অন্য নেতাকর্মীরা।