২৬ দেশের নিন্দা সত্ত্বেও ইসরাইলি হামলায় আরও ৭৩ ফিলিস্তিনি নিহত

যুক্তরাজ্য, ইইউ, কানাডাসহ ২৬টি দেশের নিন্দা জানানো সত্ত্বেও গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর বর্বর হামলা অব্যাহত রয়েছে। ইসরাইলি বাহিনী গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় আরও ৭৩ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এর মধ্যে দুজন ক্ষুধাজনিত কারণে মারা গেছে, যার মধ্যে একজন ৬ বছরের শিশু রয়েছে। যা ইসরাইলি অবরোধের আরেক করুণ চিত্র।
বুধবার (১৩ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আল-জাজিরা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় নিহতদের মধ্যে ১৯ জনকে খাদ্য সহায়তা সংগ্রহের চেষ্টাকালে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরাইলের গণহত্যামূলক আগ্রাসনে এ পর্যন্ত ৬১,৫৯৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১,৫৪,০৮৮ জন আহত হয়েছে।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্যসহ ২৬টি দেশ গাজার ‘অকল্পনীয় মাত্রার’ দুর্ভোগের নিন্দা জানিয়েছে এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত এ অঞ্চলে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে দুর্ভিক্ষ বন্ধ ও অবরোধ সম্পূর্ণভাবে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে উত্তর গাজার জিকিম ক্রসিংয়ের কাছে সহায়তা প্রত্যাশীদের ওপর হামলার বর্ণনা দিতে গিয়ে সাইয়্যেদ নামে বেঁচে যাওয়া এক ব্যক্তি বলেন, ‘চারপাশে গুলি চলছিল, আমরা কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। আমাদের সামনে মানুষ মরছে, গুলি আমাদের পায়ের মাঝ দিয়ে উড়ে যাচ্ছে, আর আমরা কিছুই করতে পারছিলাম না।’
মোহাম্মদ আবু নাহল নামের আরেক ফিলিস্তিনি বলেন, ‘গুলি চলার মধ্যে আমি পেটের ওপর ভর করে হামাগুড়ি দিয়েছি। আমাদের নিচে অনেক লাশ পড়ে ছিল, আমরা তাদের টেনে বের করছিলাম। আমি শুধু আমার সন্তানদের খাওয়ানোর জন্য এসেছি। খাবার আর পানি থাকলে আসতাম না। কী করব? চুরি করব? লুট করব?’
চলতি বছরের মে মাসের শেষ দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত ও বর্বর ইসরাইলি বাহিনী পরিচালিত জিএইচএফ-এর কার্যক্রম শুরুর পর গাজায় সহায়তা সংগ্রহকারীদের মৃত্যুর সংখ্যা ১,৮৩৮ জন ছাড়িয়েছে।
এদিকে নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্স জানিয়েছে, অপুষ্টিতে মারা গেছে ৬ বছরের জামাল ফাদি আল-নাজ্জার এবং ৩০ বছরের উইসাম আবু মোহসেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে শতাধিক শিশুসহ ২২৭ জন ক্ষুধাজনিত কারণে মারা গেছে।
পশ্চিমা দেশগুলোর নিন্দা
ইইউ এবং ২৬টি দেশের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘গাজায় মানবিক দুর্ভোগ অকল্পনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। দুর্ভিক্ষ আমাদের চোখের সামনে unfold হচ্ছে। এখনই জরুরি পদক্ষেপ দরকার। মানবিক সহায়তার ক্ষেত্র সুরক্ষিত রাখতে হবে, এবং সহায়তা কখনো রাজনৈতিক হাতিয়ার হওয়া উচিত নয়’।
তারা ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষকে ইসরাইলের ‘মারণাস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহারেরও নিন্দা জানিয়েছে এবং আন্তর্জাতিক এনজিওগুলোর সহায়তা পাঠানো ও মানবিক সংস্থাগুলোর কাজের অনুমোদন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
‘নিরাপদ অঞ্চল’ ও উদ্ধারকর্মীদের ওপর হামলা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ইসরাইলের কাছে আহ্বান জানিয়েছে, যেন তারা গাজায় চিকিৎসা সরঞ্জাম মজুতের সুযোগ দেয়, বিশেষ করে ইসরাইলি সেনারা গাজা সিটি দখলের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা যাওয়ার পর।
ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, গত তিন দিন ধরে গাজা সিটিতে সব ধরণের অস্ত্র দিয়ে হামলা চলছে—বোমা, ড্রোন, উচ্চ বিস্ফোরকসহ। উদ্ধার অভিযানেও হামলা হয়েছে; ১৩৭ জন সিভিল ডিফেন্স সদস্য যুদ্ধ শুরুর পর থেকে নিহত হয়েছেন।
খাদ্য অবরোধ
গাজার সরকারি গণমাধ্যম দপ্তর জানিয়েছে, ইসরাইল ৪৩০টির বেশি খাদ্যপণ্য গাজায় ঢুকতে দিচ্ছে না—এর মধ্যে রয়েছে সব ধরনের হিমায়িত মাংস, মাছ, চিজ, দুগ্ধজাত পণ্য, হিমায়িত শাকসবজি ও ফল।
তারা বলেছে, ইসরাইল শুধু সহায়তা আটকাচ্ছে না, বরং ৪৪টি খাদ্য ব্যাংক এবং ৫৭টি খাদ্য বিতরণকেন্দ্র বোমায় উড়িয়ে দিয়েছে।
এদিকে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিষ্ক্রিয়তাকে গাজার ‘গণহত্যা’ অব্যাহত রাখার জন্য দায়ী করেছে।