ঢাকা শনিবার, ১১ই মে ২০২৪, ২৯শে বৈশাখ ১৪৩১


অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলে লাঞ্ছিতের ঘটনায় ৪ ছাত্রলীগ নেতা বহিষ্কার


১৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ০২:০৫

আপডেট:
১১ মে ২০২৪ ১৪:১৭

রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিনকে লাঞ্ছিত ও ধাক্কা দিয়ে পুকুরে ফেলে দেওয়ার ঘটনায় প্রতিষ্ঠানটির চার শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হচ্ছে। একইসঙ্গে ১৬ ছাত্রের বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।

অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দিন জানান, তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ইনস্টিটিউটের একাডেমিক কাম প্রশাসনিক পরিষদের সভায় সম্প্রতি এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এর মধ্যে চার শিক্ষার্থীকে স্থায়ী বহিষ্কার, পাঁচ শিক্ষার্থীর মূল সদনপত্র আগামী তিন বছর আটকে রাখা ও সাত শিক্ষার্থীকে টিসি (ট্রান্সফার সার্টিফিকেট) দিয়ে অন্য কোনো ইনস্টিটিউটে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।


অপরাধী চিহ্নিত হওয়া ছাত্ররা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী। এরই মধ্যে এসব সিদ্ধান্ত কার্যকরের জন্য কারিগরি শিক্ষা বোর্ডসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

সভায় যাদের ছাত্রত্ব বাতিল বা রেজিস্ট্রেশন বাতিলের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে তারা হলেন- অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলার মূল হোতা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ২০১৫-১৬ সেশনের কম্পিউটার বিভাগের ৮ম পর্বের শিক্ষার্থী কামাল হোসেন ওরফে সৌরভ, একই সেশনের ইলেকট্রনিক্স মেডিক্যাল বিভাগের ৭ম পর্বের শিক্ষার্থী রায়হানুল ইসলাম, ২০১৭-২০১৮ সেশনের ইলেকট্রনিক্স বিভাগের ৫ম পর্বের ছাত্র মুরাদ হোসেন ও ২০১৮-২০১৯ সেশনের মেকানিক্যাল বিভাগের ৩য় পর্বের শিক্ষার্থী সাজিব হোসেন।

সরাসরি ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠান থেকে পাস করা পাঁচ শিক্ষার্থীর মূল সনদপত্রসহ অন্যান্য কাগজপত্র আগামী তিন বছরের জন্য আটকে রাখার সুপারিশ করা হয়েছে।


তারা হলেন- ২০১৫-২০১৬ সেশনের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের কৌশিক জামান ওরফে বনি, ইলেকট্রো-মেডিক্যাল বিভাগের সালমান রহমান ওরফে টনি, পাওয়ার বিভাগের সাব্বির অহম্মেদ, মেকাট্রনিক্স বিভাগের হাসিবুল হাসান ও কম্পিউটার বিভাগের মারুফ হোসেন।

এছাড়াও পরোক্ষভাবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে সাত শিক্ষার্থীকে অন্যত্র বদলি করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

তারা হলেন- ২০১৫-২০১৬ সেশনের পাওয়ার বিভাগের ৬ষ্ঠ পর্বের (অকৃতকার্য) নাঈম ইসলাম, ২০১৬-২০১৭ সেশনের ইলেকট্রনিক্স ৭ম পর্বের প্লাবন কুমার কুন্ডু, মেকাট্রনিক্স ৭ম পর্বের মেহেদী মাহমুদ, মেকানিক্যাল বিভাগের ৭ম পর্বের মহেদি হাসান, ২০১৭-১৮ সেশনের ইলেকট্রনিক্স বিভাগের ৫ম পর্বের ওমর আজিজ, ২০১৮-২০১৯ সেশনের ৩য় পর্বের কম্পিউটার বিভাগের মাহবুবুর রহমান ও পাওয়ার ৩য় পর্বের মাসুদ রানা মীম।

শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে রাজশাহী পলিটেকনিকে রাজনৈতিক কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ও পুলিশ প্রশাসনের সহায়তা চেয়েছে ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ।

প্রসঙ্গত, মিডটার্মে ফেল ও ক্লাসে অনুপস্থিত থাকা দুই শিক্ষার্থীকে চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে অধ্যক্ষ প্রকৌশলী ফরিদ উদ্দিনের চাপ দেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।

এ নিয়ে গত ২ নভেম্বর কার্যালয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। এরই জের ধরে ওই দিন দুপুরে অধ্যক্ষকে লাঞ্ছিত করার পর টেনে হিঁচড়ে ক্যাম্পাসের ভেতরের একটি পুকুরের পানিতে ফেলে দেয় ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরা। এ নিয়ে মামলা করেন অধ্যক্ষ। এতে সাতজনের নাম উল্লেখসহ ৫০ জনকে আসামি করা হয়।

অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলে দেয়ার ঘটনায় ওই সময় ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গত ৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাডেমিক কাম প্রশাসনিক পরিষদের সভায় তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব মুস্তাফিজুর রহমান তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।