ঢাকা সোমবার, ১২ই মে ২০২৫, ৩০শে বৈশাখ ১৪৩২


দুই প্রকল্পে বাংলাদেশকে ৮৫ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক


২৪ এপ্রিল ২০২৫ ১৫:২৮

আপডেট:
১২ মে ২০২৫ ১৬:১৭

ফাইল ছবি

গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বাংলাদেশকে ৮৫ কোটি ডলার ঋণ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। সে লক্ষ্যে বুধবার (২৩ এপ্রিল) বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে দুটি চুক্তি সই করেছে সংস্থাটি। দেশীয় মুদ্রায় এ অর্থের পরিমাণ ১০ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে)।

এদিন ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী এবং বিশ্বব্যাংকের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. গেইল মার্টিন দুই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। এ সময় বাংলাদেশের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রাইজার ছিলেন বলে বিশ্বব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। এ অর্থায়ন তাদের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (আইডিএ) মাধ্যমে প্রদান করা হবে।

বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী ও দৃঢ় অংশীদারিত্ব রয়েছে যা দেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করে। এ প্রকল্পগুলো দেশের জলবায়ু সহনশীলতা এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।

বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর গেইল মার্টিন বলেন, টেকসই প্রবৃদ্ধির পথে টিকে থাকতে বাংলাদেশকে প্রতি বছর শ্রমবাজারে প্রবেশকারী প্রায় ২০ লাখ তরুণের জন্য মানসম্পন্ন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, এই অর্থায়ন প্যাকেজটি বাণিজ্য ও রফতানিযোগ্যতার প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এবং দরিদ্র জনগণকে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে এসে শ্রমবাজারে প্রবেশের জন্য একটি গেম চেঞ্জার হবে।

বে-টার্মিনাল মেরিন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প (৬৫ কোটি ডলার): এ প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের রফতানিযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে, কারণ এটি বন্দরের সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং পরিবহণ ব্যয় ও সময় কমাবে। প্রকল্পটি একটি ৬ কি.মি. দীর্ঘ জলবায়ু-সহনশীল ব্রেকওয়াটার ও অ্যাক্সেস চ্যানেলসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণে সহায়তা দেবে।

বৃহৎ জাহাজ গমনের সুবিধা থাকায় পোর্টে জাহাজের ঘুরে যাওয়ার সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে, যা প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ ডলার সাশ্রয় করতে পারে।

বে টার্মিনাল দেশের মোট কনটেইনার চলাচলের প্রায় ৩৬ শতাংশ পরিচালনা করবে, যার ফলে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাজারে সংযোগের উন্নতির মাধ্যমে ১ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ পরিবহন সুবিধা এবং সরাসরি উপকৃত হবে। এই প্রকল্প নারীদের মালিকানাধীন ব্যবসার বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং নারীদের বন্দর পরিচালনায় অংশগ্রহণেও সহায়তা করবে।

সামাজিক সুরক্ষা জোরদারকরণ প্রকল্প (এসএসপিআইআরআইটি) ২০ কোটি ডলার: প্রকল্পটি ৪৫ লাখ মানুষের জন্য নগদ সহায়তা এবং জীবিকা উন্নয়ন সেবা দেবে, যা থেকে যুবক, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, নারী এবং জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলের শ্রমিকরা অগ্রাধিকার পাবে।

প্রকল্পটি ডেলিভারি সিস্টেমকে আধুনিকীকরণ করবে, সহায়তা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন এমন ব্যক্তিদের কাছে পৌঁছাবে এবং সম্ভাব্য জলবায়ু বা অর্থনৈতিক ধাক্কায় দ্রুত সাড়া দেওয়া সম্ভব হবে।

প্রকল্পের আওতায় সহায়তা প্রাপ্তদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে একটি জাতীয় গতিশীল সামাজিক রেজিস্ট্রি তৈরি করা হবে। নগদ সহায়তার পাশাপাশি দক্ষতা উন্নয়ন, ক্ষুদ্র ঋণ, উদ্যোক্তা তৈরি এবং পরামর্শ সেবা দেওয়া হবে, যার মাধ্যমে প্রায় ২৫ লাখ মানুষের আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান প্রস্তুতি নিশ্চিত করা যাবে। বাংলাদেশের শ্রমবাজার ও দারিদ্র্যপীড়িত পরিবার, বিশেষ করে নারী ও তরুণদের 'উন্নয়নের সিঁড়ি' বেয়ে উপরে উঠতে সহায়তা করাই এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।