ঢাকা রবিবার, ১৯শে অক্টোবর ২০২৫, ৪ঠা কার্তিক ১৪৩২


সাবরাংয়ের মাদক সম্রাট জুবাইরের কোটি টাকার সাম্রাজ্য উন্মোচন


প্রকাশিত:
১৮ অক্টোবর ২০২৫ ১৫:৫১

দেশের সীমান্ত সুরক্ষা ও মাদকের বিরুদ্ধে 'জিরো টলারেন্স' নীতি বাস্তবায়নে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) এক দুঃসাহসিক অভিযান সম্পন্ন করেছে। দীর্ঘদিনের নিবিড় গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে গতকাল ১৬ অক্টোবর, একটি সঙ্ঘবদ্ধ মাদক পাচারকারী চক্রের আস্তানায় আঘাত হেনে বিজিবি ১৯,২০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ১০ লক্ষাধিক টাকা এবং চোরাচালানে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম জব্দ করেন। সফল অভিযানটি সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি দেশের তরুণ প্রজন্মকে মাদকের ভয়াল গ্রাস থেকে রক্ষা করার বিজিবি'র দৃঢ় প্রতিজ্ঞার ফসল।

টেকনাফ ব্যাটালিয়নের গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার এবং টেকনাফ এলাকায় সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে নিবিড় গোয়েন্দা জাল বিছিয়ে সম্প্রতি বেশ কিছু মাদকবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে আসছে। এ সকল অভিযানে আটককৃতদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সাবরাং মন্ডলপাড়া গ্রামে মাদক কারবারের মূলহোতা মোঃ জুবাইর-এর সন্ধান পায় ২ বিজিবি। গোয়েন্দা তথ্যে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, জুবাইরের বিলাসবহুল ও সুরক্ষিত বাড়িটিই মাদক মজুত ও বিপণন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। টেকনাফের শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় লেঃ কর্নেল আশিকুর রহমান, পিএসসি-এর সরাসরি নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক বিজিবি সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত ২ বিজিবির একটি বিশেষ আভিযানিক দল ১৬ অক্টোবর সন্ধ্যায় রহস্যময় বাড়িটিকে ঘিরে ফেলে অভিযান শুরু করেন। মাদক চক্রের আস্তানায় প্রায় ৮ (আট) ঘণ্টাব্যাপী কঠোর ও নিরলস তল্লাশি চালায় বিজিবি। অভিযান চলাকালে, হটপটের ভিতরে লুকায়িত বিপুল পরিমাণ ইয়াবা নিয়ে দেওয়াল টপকে পালানোর সময় আইয়ুব আলী (৩৭) কে গ্রেফতার করেন বিজিবি। একইসাথে, বাড়ির অভ্যন্তরে আত্মগোপন করে থাকা মূলহোতার স্ত্রী ফাইজা আক্তার (১৯) কেও আটক করা হয়। দীর্ঘসময় ধরে চলা এই মাদক বিরোধী অভিযানে বিজিবি সদস্যদের অদম্য ধৈর্য এবং পেশাদারিত্বের ফলে বাড়ির বিভিন্ন গোপন কুঠুরি থেকে বিশেষ কৌশলে লুকিয়ে রাখা সর্বমোট ১৯,২০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করেন। মাদক বিক্রয় ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহিংস চক্রটির ব্যবহৃত ৭টি চাপাতি এবং ৪টি চাকুসহ মোট ১১টি দেশীয় অস্ত্র জব্দ করেন। তাছাড়া, বাড়ির ভেতরে ও বাইরে মাদক কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যবহৃত ২টি ওয়াকিটকি সেট এবং ৪টি সার্ভেল্যান্স সিসি ক্যামেরা উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও, মাদক বিক্রয় হতে প্রাপ্ত নগদ ১০,৩০,০০০ টাকা এবং বিপুল পরিমাণ ব্যাংক লেনদেনের প্রমাণাদি জব্দ করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, তল্লাশির একপর্যায়ে বাড়ির ভেতর থেকে মাদকদ্রব্য প্যাকেজিং এর জন্য ব্যবহৃত মেশিন এবং গোপনে ইয়াবা পরিবহন করার জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুতকৃত মোটরসাইকেলের দুইটি তেলের ট্যাংক উদ্ধার করা হয়। তবে, মাদক কারবারী চক্রের মূল হোতা মোঃ জুবাইর (৪০) এখনও পলাতক থাকলেও, তাকে দ্রুত আইনের আওতায় আনতে বিজিবি অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল আশিকুর রহমান জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। তার দলের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানায় দায়েরকৃত মাদকের মামলা রয়েছে। ধৃত আসামীরা হলেন ইয়াবা সম্রাট মোঃ জুবাইয়ের এর স্ত্রী ফাইজা আক্তার (১৯) টেকনাফের আবুল কালামের পুত্র আইয়ুব আলি (৩৭)।একই সাথে পলাতক আসামী ইয়াবা সম্রাট টেকনাফের মন্ডল পাড়া এলাকার ইয়াবা গড়ফাদার ফজল হকের পুত্র মোঃ জোবাইর (৪০) কে পলাতক আসামী করেছে টেকনাফ ২ বিজিবি।

টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) এর অধিনায়ক লেঃ কর্নেল আশিকুর রহমান, পিএসসি বলেন, "আপনাদের ভবিষ্যৎ আমাদের কাছে আমানত। যত শক্তিশালী চক্রই হোক, দেশের মাটি থেকে মাদক চোরাচালানের কালো ছায়া সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলার জন্য বিজিবি'র সকল সদস্য সদা প্রস্তুত ও অঙ্গীকারবদ্ধ। আমাদের এই নিরলস পরিশ্রম মাদকমুক্ত টেকনাফ গড়ার প্রত্যয়কে আরও মজবুত করবে। সীমান্ত সুরক্ষার এই সংগ্রামে আমরা সবসময় আপনাদের পাশে আছি।"

আটককৃত আসামীদের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দায়েরপূর্বক টেকনাফ থানায় হস্তান্তর করেছে টেকনাফ বিজিবি।