নেছারাবাদের বলদিয়ায় মেয়ের জামাইয়ের প্রতিহিংসার খপ্পরে দিশেহারা অসহায় পরিবার

নেছারাবাদের বলদিয়া ইউনিয়নের উড়িবুনিয়ায় শালা বউয়ের সাথে দুলাভাইয়ের পরকীয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। সরেজমিনে জানা যায়, নেছারাবাদের বলদিয়া ইউনিয়নের উড়িবুনিয়া গ্রামের (৮ নং ওয়ার্ড) কেরাম উদ্দিন তালুকদার বাড়ির মোঃ সোবাহান তালুকদারের ছেলে মোঃ রবিউল তালুকদার বিগত প্রায় তিন বছর আগে সামাজিক ও ধর্মীয় নিয়ম মেনে পার্শ্ববর্তী এলাকা কলারদোয়ানিয়ার স্থায়ী বাসিন্দা মোঃ ইউনুস তালুকদারের মেয়ে মোসাঃ ইসরাত জাহানের (তানিয়া) সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের সংসার জীবনের কিছু দিন পার হতেই তাদের সংসারে অশান্তি শুরু হয়। রবিউল ও তার স্ত্রী তানিয়ার সাথে বুনিবোনাদ না হওয়ার কারণে ঝগড়া বিবাদ শুরু হয়। একপর্যায়ে রবিউলের স্ত্রী তানিয়া বাপের বাড়ি চলে যায়। এমতাবস্থায় স্থানীয়ভাবে দুই একবার শালিস বিচার করেও তাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে ইসরাত জাহান তানিয়া রবিউল ও তার পরিবারের নামে বিজ্ঞ জুডিশিয়াল মেজিস্ট্রেট আমলী আদালত পিরোজপুর এ একটি মামলা দায়ের করেন, যার সি আর মামলা নং- ৩৫/২০২৫, ফৌজদারী কার্যবিধী ৬৮ ধারা। এরপর রবিউলের সাথে তানিয়া সংসার করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এবং পরবর্তীতে আরো দুটি মামলা দায়ের করেন, একটি বিজ্ঞ জুডিশিয়াল মেজিস্ট্রেট আদালত, ঢাকা এ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন- ২০০০ ( সংশোধনী ২০০৩) নং ১১ (গ) ফৌজদারি কার্যবিধি ৬৮ ধারা।
যার সিআর মামলা নং ৫৭০/২০২৫। অপরটি পিরোজপুর সদর থানায় জিডি নং ৬২৫/২০২৫, ৩২৩/৫০৬(২) ধারা।
অভিযোগ রয়েছে তানিয়ার এই মামলা দায়েরের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতা ও প্ররোচনা দেন রবিউলের বড় বোনের জামাই (স্বামী) মোঃ মামুন খান। তিনি পূর্ব নলুয়া, বাকেরগঞ্জ, বরিশালের মোঃ হাফিজ খানের ছেলে। রবিউল সহ তার ছোট বোন মাহফুজা, ছোট বোনের স্বামী রুবেল ও তার পিতা সোবাহান তালুকদারের দাবি- ইসরাত জাহান তানিয়া ও রবিউলের বড় বোনের স্বামী মোঃ মামুন খানের সাথে অনৈতিক/ অবৈধ বা পরকীয়ার সম্পর্ক রয়েছে। তার যথাযথ প্রমান তাদের হাতে রয়েছে।
ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, রবিউল ও তার পরিবারের সকলকে বারবার মামুন খান অপমান অপদস্ত করেছে, মিথ্যা মামলা দিয়েছে, মেরে ফেলার হুমকি ধমকি প্রদান করেছে, এমনকি মামুনের শ্বশুর বৃদ্ধ সোবাহান তালুকদারের গায়ে হাত দিয়েছে / আঘাত করেছে। একপর্যায়ে এ সকল বিষয়ে সমাধানের লক্ষ্যে রবিউল ও তার পরিবার তাদের আপনজন ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে বিচার সালিশের দাবি করেন এবং গত ২৪/০৮/২০২৫ তারিখ শুক্রবার স্থানীয় মহিউদ্দিন তালুকদারের উঠানে সোবাহানের বড় মেয়ের জামাই মামুনের উপস্থিতিতে মিমাংসা বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বৈঠকের একপর্যায়ে দুই পক্ষের কথা কাটাকাটির কারণে বৈঠকস্থলে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয় এবং জামাই মামুন সবার সামনে উত্তেজিত হয়ে সোবাহান তালুকদারের উদ্দেশ্যে বলে, আমি আপনার মেয়েকে তালাক দেবো তালাকের ব্যবস্থা করেন এবং তাদেরকে প্রকাশ্যে বিভিন্ন প্রকার অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন, মামলা হামলার হুমকি প্রদান করেন। এতে রবিউল সহ উপস্থিত অন্যরা ক্ষিপ্ত হয়, একপর্যায়ে দুপক্ষের মাঝে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এরপর শালিশদাররা কোন মিমাংসা করতে না পেরে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। পরবর্তীতে ঘটনার মোড় অন্য দিকে ঘোরে।
রবিউল ও তার পরিবারের সকলের এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে জানা যায়, একপর্যায়ে মামুন খান রাগারাগি করে ঘটনাস্থল থেকে চলে যেতে চাইলে রবিউলের ছোট বোন চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা মাহফুজা তার দুলাভাই মামুনকে শান্ত করার চেষ্টা করলে তাকেও মারধর করে এবং মাহফুজার পেটে লাথি মারে, এতে মাহফুজা গুরুতর আহত হয়।
এই ব্যাপারে মাহফুজা বলেন, আমি দুলাভাইকে শান্ত করার চেষ্টা করি ও একপর্যায়ে তার চলে যাওয়া থামাতে চাইলে তিনি আমাকে চড় থাপ্পড় মারে, টেনেহিচড়ে আমার পড়নের বোরখা ছিঁড়ে ফেলে এবং আমাকে তলপেটে লাথি মারে, এতে আমি ভীষণ আঘাতপ্রাপ্ত হই এবং বর্তমানে আমি শারিরীকভাবে মারাত্মক অসুস্থ বোধ করছি।
তিনি আরো বলেন, এর আগেও আমার দুলাভাই মামুন আমাকে ফোন করে বিভিন্ন রকমের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে এবং মামলা হামলার হুমকি দেয় এতে আমি ও আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি এবং সবসময় ভয়ে দিন কাটাচ্ছি।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত মামুন খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি সবকিছু স্বীকার করেন। তবে গত ২৪/০৮/২৫ তারিখ শুক্রবার বৈঠকের দিন মারামারির বিষয়টি তিনি অস্বীকার করে বলেন, আমি কাউকে মারিনি বরং এরা সবাই মিলে আমাকে বেধম মেরেছে। আর আমার ও তানিয়ার ব্যাপারে যে পরকিয়ার বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
মামুনের শ্বশুর সোবাহান তালুকদার ও তার পরিবারের সকলের সাথে তার বিরোধের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি একটি মেয়ে ঠিক করেছিলাম আমার শ্যালক রবিউলের বিবাহের জন্য কিন্তু রবিউল তাকে বিবাহ করেনি এবং আমাকে তারা অপমান অপদস্থ করেছে, সেই প্রতিহিংসা ও রাগে আমিও তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি এবং তাদের সাথে আত্মীয়তার স্বাভাবিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছি, শশুর বাড়িতে আসা যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি।
এবং তাদের বিরুদ্ধে পাওনা টাকা আদায়ের জন্য বিজ্ঞ জুডিশিয়াল মেজিস্ট্রেট আদালত ঢাকায় দুটি মামলা করেছি, যার সিআর মামলা নং ৩১৭/২০২৫, ধারা ৪০৬/৪২০/৫০৬, এবং অপরটি পিটিশন মামলা নং ৯৯/২০২৫, ধারা ১০৭/১১৭।
অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্তে নেছারাবাদ থানার এএসআই মোঃ মনিরুজ্জামান মনির সহ স্বরূপকাঠি প্রেসক্লাবের সাংবাদিক শীর্ষ খবর ও দৈনিক আমাদের দিন পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার সোহেল রায়হানের উপস্থিতিতে সকলে তাদের নিজ নিজ জবানবন্দি পেশ করেন এবং এলাকার প্রত্যক্ষদর্শীদেরও বক্তব্য / মতামত নেওয়া হয়।
অভিযোগকারী রবিউল ও তার বৃদ্ধ পিতা মোঃ সোবাহান তালুকদার সহ পরিবারের সকলের দাবি- মামুন একজন মামলাবাজ ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তি, সে পারে না এমন কোন কাজ নেই। এমনকি মামুন তার ফেসবুক আইডি থেকে রবিউলের স্ত্রীর একটি আপত্তিকর ছবি মামুনের ছোট ভাই সুমন ও চাচাতো ভাই সোহাগের মেসেঞ্জারে পাঠান এবং রবিউলের স্ত্রী তানিয়াকে প্ররোচিত করে রবিউল, রুবেল ও মাহফুজার বিরুদ্ধে থানায় একটি মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেন।
রবিউল ও তার পিতা সোবাহান সহ ভুক্তভোগী পরিবারের সকলে বলেন, আমরা মামুনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাই এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ও আইন প্রশাসনের কাছে এ বিষয়টির সঠিক তদন্তের মাধ্যমে যথাযথ সুরাহা কামনা করছি।