এবার রাংপানি থেকে দিনে-দুপুরে পাথর লুট!

এখনো সিলেটের পাথরকাণ্ড ‘টপ অব দ্যা কান্ট্রি’। একের পর এক পর্যটন কেন্দ্র থেকে পাথর লুটপাটের ঘটনায় গত এক সপ্তাহ ধরে তোলপাড় চলছেই। লুট হওয়া পাথর উদ্ধারে মাঠে নেমেছে যৌথবাহিনী। এর মধ্যেই পাথরখেকোদের চোখ পড়েছে জৈন্তাপুর উপজেলার শ্রীপুরে অবস্থিত রাংপানি নদীতে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শ্রীপুর রাংপানি জিরো পয়েন্ট এলাকাটির অনেকাংশ পাথরশূন্য। বিশেষ করে জিরো পয়েন্টের দক্ষিণ দিকের সব পাথর লুট করে নিয়ে গেছে পাথরখেকোরা। একটা সময় এই জায়গার যেদিকে চোখ যেত সেদিকেই শুধু পাথরের বিছানা দেখা মিলতো। এখন সেখানকার চারিদিকে পানি আর পানি।
সেখানে অবস্থান করলে দেখা যায়, সকাল থেকে একদল শ্রমিক রাংপানি জিরো পয়েন্টের উত্তর দিকের বড় পাথরগুলো হাতুড়ি দিয়ে ভাঙছেন। আরেক দল সেইসব পাথর নৌকায় তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। তারা যেখান থেকে পাথর লুট করছেন, সেখানে একবার বিজিবির একটি টহল দল এসে বাঁশি বাজাল। কিন্তু সেদিকে পাথরখেকোদের কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই। টহল দলকে তোয়াক্কা না করে পাথর ভাঙছে তারা। বিজিবিও অন্য কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে চলে গেল।
সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় যে যার মতো করে নৌকা দিয়ে পাথর লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। পর্যটকরা প্রতিবাদ করলে ক্ষিপ্ত হচ্ছে পাথরখেকোরা। এমনকি তারা পর্যটকদের ওপর ঢিল ছোড়ে। এছাড়া সাংবাদিকদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার হুমকি দেয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসন নিশ্চুপ থাকার কারণে এমন ঘটনা ঘটছে। পর্যটকরা জানায়, প্রশাসনের দুর্বল ভূমিকার কারণে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর রাংপানির পাথরলুটের সুযোগ পাচ্ছে লুণ্ঠনকারীরা।
সম্প্রতি ঢাকা থেকে রাংপানি এলাকায় ঘুরতে আসেন একটি ট্রাভেল গ্রুপ। তাদের সঙ্গে আলাপকালে আসিফ মাহমুদ নামের এক পর্যটক অভিযোগের সুরে বলেন, ‘দিনের আলোয় প্রকাশ্যে ছোট-বড় সব পাথর নিয়ে যাচ্ছে। কেউ ভিডিও করতে চাইলে মারমুখী হয়ে এগিয়ে আসে। এসে হুমকি দিয়ে ভিডিও বন্ধ করতে বলে। প্রশাসনের ব্যার্থতার কারণে এভাবে পাথর চুরি হচ্ছে। প্রশাসন যদি এখনই ব্যবস্থা না নেয় তাহলে রাংপানিতে আর কোনো পাথর থাকবে না।’
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে জৈন্তাপুর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে এসি ল্যান্ড (সহকারী ভূমি কমিশনার) ফারজানা আক্তার লাভনী বলেন, ‘রাংপানিতে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। সেখানে আগেও আমরা মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেছি। লুটপাট বেড়ে গেলে আবারও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করব।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে জাইলে বিজিবির সিলেট ব্যাটালিয়নের (৪৮ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. নাজমুল হক বলেন, ‘রাংপানিতে পাথর তোলার খবর পেয়ে আমি ফোর্স পাঠিয়েছিলাম। যেখান থেকে পাথর তোলা হচ্ছে, সেটা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের শূন্যরেখা (জিরো পয়েন্ট)। পাথরখেকোরা আড়ালে থেকে সাধারণ শ্রমিকদের ব্যবহার করছেন। তারা পাথর ইন্ডিয়ার সীমান থেকে তুলছে। আমি এরই মধ্যে বিষয়টি বিএসএফকে জানিয়েছি।’
উল্লেখ্য, জৈন্তাপুরের শ্রীপুরে অবস্থিত রাংপানি পর্যটন স্পট হিসেবে বেশ পরিচিত এবং পুরোনো। এখানে ষাটের দশক থেকে শুরু করে আশির দশক পর্যন্ত এ স্থানটি নিয়মিত শুটিং স্পট হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এখানে চিত্রায়িত হয়েছে অসংখ্য কালজয়ী বাংলা সিনেমার গান। ঐতিহ্যবাহী এই পর্যটন স্পটটি সুরক্ষিত না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে এখান থেকে পাথর লুট হচ্ছে।