বৃদ্ধাশ্রমের আড়ালে শিশু পার্ক, অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ!

গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার প্রাণকেন্দ্রে জনকল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠানের নামে গড়ে ওঠা একটি প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। ‘বৃদ্ধাশ্রম ও অসহায় প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্র’ নামে পরিচিত হলেও, বাস্তবে এটি অল্প বয়সী তরুণ-তরুণীদের জন্য অনৈতিক কর্মকাণ্ডের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
কালীগঞ্জ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বালীগাঁও এলাকায় টঙ্গী-কালীগঞ্জ-ঘোড়াশাল আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে অবস্থিত এই প্রতিষ্ঠানের প্রবেশদ্বারে টানানো সাইনবোর্ডে দুটি নাম দেখা যায়- ‘বৃদ্ধাশ্রম ও অসহায় প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্র’ এবং ‘শিশু মিতালী’ নামে একটি শিশু পার্ক। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই দুই নামের আড়ালে চলছে মূলত অসামাজিক কর্মকাণ্ড।
প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা বকুল চৌধুরী শুরুতে জনকল্যাণের উদ্দেশ্যে এটি গড়ে তোলার কথা জানালেও, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা রূপ নিয়েছে এক ধরনের রিসোর্টের পরিবেশে। স্থানীয়দের ভাষ্য, এখানে তরুণ-তরুণীরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাত্র ২০ টাকায় প্রবেশ ও অবস্থানের সুযোগ পায়।
পুরো এলাকায় চারপাশ ঝোপঝাড় আবৃত। স্কুল-কলেজের পোশাক পরা ও সাধারণ বস্ত্রধারী তরুণ-তরুণীরা দীর্ঘ সময় ধরে সেখানে অবস্থান করে। সেখানে কোনো বৃদ্ধ বা প্রতিবন্ধীর দেখা মেলেনি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘বৃদ্ধাশ্রম ও অসহায় প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্র’ নামে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সমাজসেবা অধিদপ্তরের কোনো নিবন্ধন নেই প্রতিষ্ঠানটির। অন্যদিকে, ‘শিশু মিতালী’ নামে একটি শিশু পার্ক হিসেবে এটি পৌরসভার ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে পরিচালিত হচ্ছে, যা বাস্তবে রিসোর্ট ব্যবসার অনুকূলে কাজ করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, মালিক বকুল চৌধুরী অত্যন্ত প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে সবাই ভয় পায়। যারা প্রতিবাদ করেছেন, তাদের বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগও পাওয়া গেছে।
প্রতিষ্ঠানের ‘শিশু মিতালী’ অংশের টিকিট বিক্রেতা আরিফুল রহমান আরিফ বলেন, “এখনো বৃদ্ধাশ্রম কার্যক্রম শুরু হয়নি এখানে। শুরুতে কিছু দাতা সংস্থা সহায়তা করেছিল, তবে সরকারের অনুমোদন না থাকায় তা ফেরত দিতে হয়েছে। বর্তমানে এখানে মসজিদ নির্মাণের কাজ চলছে এবং শিশু পার্কের টিকিটের আয় সেই কাজেই ব্যয় করা হচ্ছে।”
তিনি আরো বলেন, “এই পার্কটি মূলত গত রোজার ঈদের সময় চালু হয়েছে। ঈদ বা ছুটির সময় দর্শনার্থী সংখ্যা বেশি থাকে। অন্য সময় দিনে গড়ে মাত্র ৫-৬ জন দর্শনার্থী আসে। সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত খোলা থাকে পার্ক।”
এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী বকুল চৌধুরী বলেন, “আমার এবং প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে যে তথ্য পেয়েছেন, তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। আমি এখানে একটি বৃদ্ধাশ্রম স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। বর্তমানে আমাদের এখানে ‘মিতালী’ নামে একটি শিশু বিনোদন কেন্দ্র রয়েছে। যেখানে ছেলে-মেয়েসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ বিনোদনের জন্য আসেন। তবে কিছু অসাধু ব্যক্তি বাইরে থেকে মেয়েদের নিয়ে এসে ভেতরে ছবি তোলা ও ভিডিও ধারণ করে। পরে সেগুলো ইউএনও, ওসি এবং সাংবাদিকদের দেখিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। আমি একজন হাজী মানুষ, হাজী হয়ে এখানে অসামাজিক কার্যকলাপ হতে দেবো, তা কখনো সম্ভব নয়।”
কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আলাউদ্দিন বলেন, “এসব বিষয়ে এখনো লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে মৌখিকভাবে কিছু তথ্য এসেছে। বিষয়টি পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তদন্তে সত্যতা পেলে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ বলেন, “সামাজিক অবক্ষয় রোধে প্রশাসন কঠোর অবস্থানে আছে। কোনো অভিযোগ পেলে কিংবা প্রমাণ পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত।”