ফেনীতে ৬ দফা দাবিতে রেল ও সড়কপথ অবরোধ

৬ দফা দাবিতে ফেনীর গোডাউন কোয়াটার এলাকায় রেল ও সড়কপথ অবরোধ করেছেন কারিগরি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এতে ঢাকা, চট্টগ্রাম রেলপথ প্রায় ৩ ঘন্টা যোগাযোগ বন্ধ ছিলেন।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টার পর শিক্ষার্থীরা গোডাউন কোয়াটার এলাকায় রেল ও সড়কে অবস্থান নেন।
ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামসুজ্জামান জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৫শতাধিক শিক্ষার্থী ফেনী রেলক্রসিং এলাকায় অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ করে। এর আগে যে ছয় দফা দাবিতে তাঁরা সড়কে নেমেছিলেন, আজও একই দাবিতে সড়কে অবস্থান নিয়েছেন।
গোডাউন কোয়াটার ও রেলক্রসিং এলাকায় রেল ও সড়কপথ অবরোধকারীদের মধ্যে সরকারি—বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, কম্পিউটার ইনস্টিটিউট, ফেনী টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতাভুক্ত শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষার্থীরা যে ছয় দফা দাবিতে সড়ক অবরোধ করেছেন, এর মধ্যে -
প্রথম দাবি : জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের ৩০ শতাংশ প্রমোশন কোটা বাতিল করতে হবে। জুনিয়র ইনস্ট্রাক্টর পদে ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের অবৈধ পদোন্নতির রায় হাইকোর্ট কর্তৃক বাতিল করতে হবে। ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের পদবি পরিবর্তন, মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের চাকরিচ্যুত করতে হবে। ২০২১ সালে রাতের আঁধারে নিয়োগপ্রাপ্ত ক্র্যাফট ইনস্ট্রাক্টরদের নিয়োগ সম্পূর্ণভাবে বাতিল এবং সেই বিতর্কিত নিয়োগবিধি অবিলম্বে সংশোধন করতে হবে।
দ্বিতীয় দাবি : ডিপ্লোমা ইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে যেকোনো বয়সে ভর্তির সুযোগ বাতিল করতে হবে। উন্নত বিশ্বের আদলে চার বছর মেয়াদি মানসম্পন্ন কারিকুলাম চালু করতে হবে এবং একাডেমিক কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে ইংরেজি মাধ্যমে করতে হবে।
তৃতীয় দাবি : উপসহকারী প্রকৌশলী ও সমমান (১০ম গ্রেড) থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকা সত্ত্বেও যেসব সরকারি, রাষ্ট্রীয়, স্বায়ত্তশাসিত ও স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নিম্ন পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
চতুর্থ দাবি : কারিগরি সেক্টর পরিচালনায় পরিচালক, সহকারী পরিচালক, বোর্ড চেয়ারম্যান, উপসচিব, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, অধ্যক্ষসহ সংশ্লিষ্ট সব পদে কারিগরি শিক্ষাবহির্ভূত জনবল নিয়োগ নিষিদ্ধ করতে হবে এবং তা আইনানুগভাবে নিশ্চিত করতে হবে। এই পদগুলোয় অনতিবিলম্বে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনবল নিয়োগ ও সব শূন্য পদে দক্ষ শিক্ষক ও ল্যাব সহকারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে।
পঞ্চম দাবি : স্বতন্ত্র ‘কারিগরি ও উচ্চশিক্ষা’ মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা ও ‘কারিগরি শিক্ষা সংস্কার কমিশন’ গঠন করতে হবে।
ষষ্ঠ দাবি : পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগের লক্ষ্যে একটি উন্নত মানের টেকনিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পাশাপাশি নির্মাণাধীন চারটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (নড়াইল, নাটোর, খাগড়াছড়ি ও ঠাকুরগাঁও) পলিটেকনিক ও মনোটেকনিক থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পাস এবং ডুয়েটের আওতাভুক্ত একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে আগামী সেশন থেকে শতভাগ সিটে ভর্তির সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম রাতুল জানায়, কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষণা অনুযায়ী সারা দেশের ন্যায় আমরাও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতাভুক্ত ফেনীর সকল স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা দাবি না মেনে নেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া হবে। দীর্ঘক্ষন রেললাইন পথ বন্ধ শুনে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা নাসরিন কান্তা ঘটনাস্থলে এসে ছাত্রদের সাথে কথা বলে অবরোধ তুলে নিতে অনুরোধে করে ব্যর্থ হয়।
খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম ঘটনাস্থলে এসে ছাত্রদের সাথে কথা বলে অবরোধ থেকে সরিয়ে নেন। ফেনী রেলওয়ে ষ্টেশন মাস্টার হারুন উর রশিদ জানান, হঠাত করে রেলপথ অবরোধ করে আন্দোলন চলার কারনে ফেনী সহ ঢাকা চট্টগ্রাম রেলপথে বেশ কয়েকটি ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় হয়েছে।
জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আওতাভুক্ত সকল স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা দাবি যোক্তিক। ৬টি দাবির বিষয়ে মন্ত্রনালয়ে চিঠি পাঠাবো। এছাড়াও আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে নানান বিষয়ে কথা বলে রেল ও সড়ক পথ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়।
এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুলতানা নাছরিন কান্তা, সহকারী পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আরিফুর রহামান ও ফেনী মডেল থানার তদন্ত কর্মকর্তা ইকবাল হোসেন, ফেনী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জি.এম তাজ উদ্দিন পলাশসহ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।