আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পরিবেশ অধিদপ্তরের যোগসাজশে চলছে ইটভাটা

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে রামপুর ইউনিয়নের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মেসার্স বামনী ব্রিকস ম্যাুংফ্যাকচারিং কোম্পানী নামে ইটভাটা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতা ছিদ্দিক উল্যাহ ভুট্রু। তিনি কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।
অভিযোগ উঠেছে, খোদ জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের যোগসাজশে চলছে এ ইটভাটা। নিষেধাজ্ঞা থাকলেও এ ভাটায় নিয়মিত পোড়ানো হয় কাঠ। এতে চিমনি থেকে নির্গত বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় আশপাশের বাসিন্দা বিশেষ করে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এ অবৈধ ইটভাটা স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না নোয়াখালী পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের ৭নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য রামপুরে ঘনবসতিপূর্ণ বনজ ও কৃষিজমি, ৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, একটি মসজিদ ও ৩৫০টি পরিবার বেষ্টিত। প্রায় ২ একর জায়গার ওপর ২০১৭ সালে সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র আব্দুল কাদের মির্জার রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ছিদ্দিক উল্যাহ ভুট্রু এই ইটভাটা নির্মাণ করেন। তিনি এলাকায় কাদের মির্জার ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। ওই সময় অবৈধ ইটভাটা নির্মাণ বন্ধে স্থানীয় বাসিন্দা ইসমত আরা রুমা, আবু নাছের,মহসিন ওরফে লাল মিয়া ও মো.সেলিম বাদী হয়ে নোয়াখালী জেলা অধিদপ্তর কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করে কোনো প্রতিকার পাননি। এমনকি হাইকোর্ট রিট পিটিশন দায়ের করেও কাদের মির্জার হুমকিতে তুলে নিতে বাধ্য হয়। গণ–অভ্যুত্থানে পটপরিবর্তনে স্থানীয় বাসিন্দা মো. সেলিম পুনরায় ২০২৫ সালে রিট পিটিশন দায়ের করলে হাইকোর্ট ১২৭৪/২০২৫নম্বর রিট পিটিশনের ৩.৩.২০২৫ তারিখের আদেশে বামনী ব্রিকস ম্যাুংফ্যাকচারিং কোম্পানীর কার্যক্রম দুই মাসের মধ্যে বিবাদীদের সম্পূর্ণ বন্ধের নির্দেশ দেন।
সরেজমিন ইটভাটায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানে আইন অমান্য করে গড়ে উঠেছে ইটভাটা। কৃষিজমির মাটি কেটে তৈরি করা হচ্ছে ইট। বসতবাড়ির আশপাশেও নির্মাণ করা হয়েছে ইটভাটার চিমনি। ইট বানাতে অবৈধভাবে এসব কাঠ পোড়ানো হয়। এতে স্থানীয়রা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছেন। পাশাপাশি কাঠ পোড়ানোর কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য বিপন্ন হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো.সেলিম বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা ভুট্রুর ইটভাটার কোন পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। এ অবৈধ ইটভাটা বন্ধে ২০১৭ সালে হাইকোর্টে আমি রিট পিটিশন করি। তৎকালীন সময়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই আব্দুল কাদের মির্জার হুমকিতে আমি ওই রিট পিটিশন প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হই। না হলে আমাকে প্রাণে মেরে ফেলত। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ইটভাটা তৈরি করলে পরিবেশের কোনো ক্ষতি হয় না। জনবসতিপূর্ণ ও আবাসিক এলাকা, স্কুল-কলেজ, কৃষিজমি, বনাঞ্চল এবং ৫০টির অধিক ফলগাছ আছে, এমন জায়গায় ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। তবে আওয়ামী লীগ নেতা ভুট্রু এসব নিয়ম-কানুন না মেনেই ইটভাটা তৈরি করছেন। তার এই ইটভাটার ট্রাক্টরের কারণে সরকারের গ্রামীণ সড়ক ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ইটভাটায় কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হয় কাঠ। এতে সৃষ্ট ধোঁয়া ও ছাই থেকে পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। দূষণে বিভিন্ন বয়সী মানুষ বিশেষ করে নারী ও শিশুরা সর্দি-কাশিসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। পাশাপাশি ভাটা এলাকার আশপাশের গাছের ফলমূল সব নষ্ট হয়ে যায়।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মেসার্স বামনী ব্রিকস ম্যাুংফ্যাকচারিং কোম্পানী মালিক ছিদ্দিক উল্যাহ ভুট্রু বলেন, আদালতের স্টে অর্ডারের বিষয়টি শুনেছি। আমার ইটভাটার প্রথমে পরিবেশ ছাড়পত্র ছিল। পরে আর নবায়ন দেয়নি কর্তৃপক্ষ। এজন্য জেলা প্রশাসকের অনুমোদনও হয়নি। তখন পরিবেশ বলছে আপনারা চালান আমরা কিছু বলব না।
নোয়াখালী জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মিহির লাল সরদার বলেন, ঊনাদের অবস্থানগত ছাত্রপত্র আছে। তাদের পরিবেশ গত ছাড়পত্রের আবেদনটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাদের যে সকল সমস্যা রয়েছে এজন্য কিছু দিন আগে মেসার্স বামনী ব্রিকসকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, অবৈধ ইটভাটা বন্ধে জেলা প্রশাসন তৎপর রয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।