ঢাকা শুক্রবার, ১৮ই এপ্রিল ২০২৫, ৬ই বৈশাখ ১৪৩২


সৌদি আরবে প্রবাসীর মৃত্যু

‘আমার স্বামীকে আমার কাছে ফিরায় দেন’


১০ এপ্রিল ২০২৫ ১২:৩৪

আপডেট:
১০ এপ্রিল ২০২৫ ১২:৩৬

নিহত হাবিবুর রহমানের পরিবার, ইনসেটে হাবিবুর রহমান

কী দিন আল্লাহ আমারে দিয়া গেলো রে? তিন অবুঝ শিশুরে আমি ক্যামনে বাঁচায় রাখবো। আমি আমার স্বামীরে দেখতে চাই। আমার স্বামীকে আমি চাই। আপনাদের কাছে আবেদন আমার স্বামীকে আমার কাছে ফিরায় দেন তারে দেশে নিয়া আসেন। তারে দেশে পাঠাইয়া দেন। সে না আইলে আমার সন্তানদের এখন দেখবে কে?

সৌদি আরবে গাড়ি চাপায় হাবিবুর রহমানের (৪২) মৃত্যুর খবর পেয়ে এভাবেই বিলাপ করছিলেন তার স্ত্রী শারমিন আক্তার (৩৫)। স্বামীর এ করুণ মৃত্যুকে মেনে নিতে পারছেন না তিনি।

বিলাপ করতে করতে শারমিন আক্তার বলছিলেন, ঈদুল আজহার আগে দেশে আসার কথা বলেছিলেন হাবিবুর। বলেছিলেন এক সাথে সবাই ঈদ করবো।

হাবিবুর রহমান শেখ ও শারমিন দম্পতির তিন সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে লিমা আক্তার (১৭) ভাঙ্গা পৌর শহরের দাড়িয়ার মাঠ মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে। দ্বিতীয় সন্তান ছেলে সামিউল শেখ (১১) বাড়ির কাছের খামিনার বাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী। ছোট মেয়ে আয়শা আক্তার (৫) এখনও পড়াশোনা শুরু করেনি।

গতকাল হাবিবুর রহমানের বাড়ি গিয়ে দেখা যায় বড় মেয়ে লিমা ও ছেলে সামিউল কান্নাকাটি করলেও ৫ বছর বয়সী ছোট মেয়ে আয়শা আক্তার একেবারেই নীরব। সে হয়তো এখনও জানে না তার কী সর্বনাশ হয়ে গেছে।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টার দিকে সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় হাবিবুর রহমানের। তার পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ১৪-১৫ ধরে সৌদি আরবে কাজ করছিলেন। মঙ্গলবারও দাম্মাম শহরে সড়ক ডিভাইডারের (বিভাজন) কাজ করছিলেন। এ সময় দ্রুত গতির একটি মাইক্রোবাস তাকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

সর্বশেষ দুই বছর আগে তিনি দেশে এসেছিলেন। আগামী ঈদুল আজাহার আগে তার দেশে আসার কথা ছিল।

হাবিবুর রহমান শেখের শ্যালক আলাউদ্দিন শেখ (২৫) বলেন, ঘটনার ঘণ্টা দুই পরে আমরা খবর পাই যে, দুলাভাই গাড়িচাপায় মারা গেছেন। এরপর আমরা দুলাভায়ের রুমমেটের সাথে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের বাকিটা জানান।

লাশ দেশে আনার ব্যাপারে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাবো বলেও জানিয়েছেন তিনি।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে ঘারুয়া ইউনিয়ন পরিষদের এক নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুল মান্নান বলেন, সৌদি আরবে মাইক্রোবাস চাপায় আমাদের গ্রামের হাবিবুর রহমান মারা গেছেন। জীবন ও জীবিকার জন্য তিনি বিদেশে পাড়ি দিয়েছিলেন।