নেছারাবাদে জমির বিরোধে চাচা ভাতিজা ও ভাইয়ে ভাইয়ে মারামারি

পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার স্বরূপকাঠি ইউনিয়নের জগন্নাথকাঠি গ্রামের মোঃ ফরিদুল ইসলাম ওরফে কাজলের সাথে তারই মৃত ভাইয়ের ছেলে মোঃ সাইফুল ইসলাম ওরফে রাজিব, কাজল মিয়ার ছোট ভাই মোঃ ইমামুল ইসলাম খোকনের সাথে দীর্ঘদিন যাবত তাদের পৈতৃক সম্পত্তির ভাগাভাগি এবং দখল নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার (৩ মার্চ) সীমানা প্রাচীর বা পাঁকা ওয়াল উঠানোকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মাঝে ব্যাপক মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে দুপক্ষের মোট চার জন আহত বা জখম হয়। তারা সবাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করেন।
জানা যায়, এ ব্যাপারে মোঃ ফরিদুল ইসলাম কাজলের মেয়ে মোসাঃ সায়মা ইসলাম বাদী হয়ে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। পরবর্তীতে নেছারাবাদ থানার অফিসার ইনচার্জের নির্দেশে থানা পুলিশ সরেজমিনে গিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনার ব্যাপারে অবগত হন। সাময়িকভাবে থানা পুলিশ দুপক্ষকে শান্ত হওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন এবং বিষয়টির ব্যাপারে সঠিক তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বিবাদটি সুরাহা করার আশ্বাস দেন।
অভিযোগ কারী/ ভুক্তভোগীর ভাষ্যমতে, ঘটনার দিন সোমবার (৩ মার্চ) ফরিদুল ইসলাম কাজল তার পৈত্রিকভিটা হিসেবে দাবিকৃত এবং দীর্ঘদিন যাবত দখলকৃত তার ঘর/ বিল্ডিং এর পাশের জায়গায় সীমানা প্রাচীর বা ওয়াল স্থাপন করা শুরু করলে ওইদিন রাত আনুমানিক সাড়ে নয়টা থেকে দশটার দিকে সাইফুল ইসলাম রাজীব (৩৫) পিতা মৃত আমিরুল ইসলাম নিলু, মোঃ ইমামুল ইসলাম খোকন (৪৫) পিতা মৃত আবুল কাশেম এবং নাসিরুল ইসলাম বাদল সহ আরো অজ্ঞাত ৪-৫ জন মিলে ফরিদুল ইসলাম কাজলের করা পাঁকা ওয়াল ভেঙ্গে ফেলে। একপর্যায়ে কাজল মিয়া,তার মেয়ে সায়মা ইসলাম ও তার স্ত্রী বিপক্ষকে ওয়াল ভাঙতে নিষেধ করার জন্য এগিয়ে আসলে রাজিব ও খোকন তাদের উপরে চড়াও হয় এবং একপর্যায়ে দু পক্ষের মাঝে মারামারির ঘটনা ঘটে।
কাজল মিয়া ও তার পরিবারের দাবি রাজিব ও খোকন তাদের মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে দেশীয় অস্ত্র হাতুড়ি, দা, কুড়াল দিয়ে আমাদের তিনজনকেই ব্যাপকভাবে আঘাত করে এবং আমাদের পরিবারের সবাইকে মেরে নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যায়। এমতাবস্থায় আমারা খুব ভয়ে, আতংকে ও জীবনের অনিশ্চয়তায় দিন পার করছি।
কাজল মিয়ার মেয়ে সায়মা ইসলাম বলেন, হাতুড়ির আঘাতে আমার মায়ের পিঠে মারাত্মক জখম হয় এবং বাবার পায়ে ও মুখমন্ডলে প্রচন্ড রকমের আঘাত পায় ও জখম হয়। আমার বৃদ্ধ বাবা দীর্ঘদিন যাবত স্ট্রোকের কারনে অসুস্থ। এসময় আমাকেও ওরা টেনে হিচরে নিয়ে গিয়ে বেধম মারধর করে। এতে আমরা সকলে রক্তাক্ত হই এবং ভিশন অসুস্থ হয়ে পড়ি। পরক্ষণে আমরা প্রতিবেশীর সহযোগিতায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেই। চিকিৎসার ডাক্তারি প্রেসক্রিপশন সহ সকল ডকুমেন্টস আমাদের হাতে আছে।
ফরিদুল ইসলাম কাজল ও তার পরিবারের দাবি, বিপক্ষরা আমাদের বৈধ দখলকৃত জায়গা দীর্ঘদিন যাবত জোরপূর্বক দখলে নিতে চায় এবং এরকমভাবে প্রায় ১৫-২০ বছর যাবত মাঝেমধ্যে আমাদের হেনস্থা করে আসছে। এই জমির মালিক হিসেবে সকল দালিলিক প্রমাণাদি আমাদের কাছে আছে। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি। তবে এ ব্যাপারে সায়মা ইসলাম জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই কোর্টে মামলা করার প্রক্রিয়া চলছে।
অভিযুক্ত মোঃ সাইফুল ইসলাম রাজীব ও ইমামুল ইসলাম খোকন মুঠোফোনে দৈনিক আমাদের দিনকে বলেন, ফরিদুল ইসলাম কাজল দীর্ঘদিন যাবত ক্ষমতার অপব্যবহার করে আমাদের জায়গা জোরপূর্বক বেদখল করে খাচ্ছে। সকল শরীকদার একত্রিত হয়ে সঠিক সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত এই জায়গায় কোনরকম স্থায়ী ঘর বা ওয়াল নির্মাণ করতে বারবার বারণ করা সত্বেও গায়ের জোরে সে ওখানে পাঁকা দেওয়াল স্থাপন করছে। সেই কাজে আমরা বাঁধা প্রদান করলে এবং দেয়ালের কিছু অংশ ভেঙে ফেললে এরা সপরিবারে আমাদের উপর চড়াও হয় এবং আক্রমণ করে। দু পক্ষের মাঝে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে হাতাহাতি বা মারামারির ঘটনা ঘটে।
ইমামুল ইসলাম খোকন বলেন, তারা আমাকে দাও দিয়ে কোপ মারে এতে আমার বাম হাতের বৃদ্ধাঙুল কেঁটে যায় এবং এতে আমার প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। তাৎক্ষণিক আমি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেই এবং প্রমাণস্বরূপ এই চিকিৎসার প্রেসক্রিপশন আমার কাছে আছে। আর জায়গার/ জমির সকল সঠিক কাগজপত্র আমাদের হাতে আছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিবেশী কয়েকজন ঐ দিনের মারামারির ঘটনা প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে দেখেছেন এবং ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।
এ বিষয়ে নেছারাবাদ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ বনি আমিন দৈনিক আমাদের দিনকে বলেন, থানায় জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে মারামারির ঘটনায় গত মঙ্গলবার (৪ মার্চ) একটি অভিযোগ পাওয়ার পর থানা পুলিশ সরেজমিনে যায়। আপাতত দুপক্ষকে শান্ত হওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয় এবং সঠিক প্রমাণাদি ও সকল শরীকদারের উপস্থিতিতে এর সঠিক সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত সকল প্রকার স্থাপনা নির্মাণ ও কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়। তবে মারামারির ঘটনায় থানায় এখনো কোন মামলা হয়নি।