ঢাকা সোমবার, ২১শে এপ্রিল ২০২৫, ৯ই বৈশাখ ১৪৩২


রাস্তা ও সেতুর অভাবে চরম দুর্ভোগ

শ্রীবরদীতে স্বাধীনতার অর্ধ শতাব্দী পেরুলেও উন্নয়ন বঞ্চিত গোবিন্দপুর


১৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১২:১৯

আপডেট:
২১ এপ্রিল ২০২৫ ০৭:১৭

স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও একটি রাস্তা ও সেতুর অভাবে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন শ্রীবরদী উপজেলার সিংগাবড়ুনা ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রাম।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা থেকে ১৫ কিলোমিটার উত্তর প্রশ্চিমে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের কোলঘেঁষা উন্নয়ন বঞ্চিত প্রান্তিক জনপদ গোবিন্দপুর গ্রাম। সিংগাবড়ুনা মোড় হতে গোবিন্দপুর প্রযন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার রাস্তা তালিকাভুক্ত থাকলেও বুঝার উপায় নেই এটা রাস্তা, সংস্কার এর অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে চলাচল এর অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এই গ্রামের ভিতর দিয়ে পাহাড়ী ঢেওফা নদী প্রবাহিত হয়ে গেছে, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, নেই কোন সেতু।

এই গ্রামের ভিতর দিয়ে পার্শ্ববর্তী প্রায় ৮ গ্রামের হাজারো মানুষের যাতায়াত, তারপরেও কেন এই গ্রামে রাস্তা ও ব্রীজের উন্নয়ন সাধিত হয়নি সে উত্তর আজও খুঁজে পাচ্ছে না গোবিন্দপুর গ্রামের সাধারণ জনগণ। অত্যাধিক ভোগান্তিতে রয়েছেন কোমলমতী শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ-বয়োজ্যেষ্ঠ ও গর্ভবতী নারীরা। সেতু ও রাস্তার অভাবে শিক্ষার্থীরা ঠিকমত স্কুলে যেতে পারে না। স্কুলে যেতে শিক্ষার্থীদের একটি নদী ও দুইটি নালা পার হতে হয়। শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হাঁটার পথ থাকলেও বর্ষা মৌসুমে ঘর থেকেও বের হওয়া প্রায় অসম্ভব। অনেক শিক্ষার্থীর রাস্তা ও সেতুর অভাবে উচ্চশিক্ষার আশা ফিকে হয়ে বন্ধ হয়ে গেছে পড়াশুনা, বেড়েছে বাল্যবিবাহের হার, এ যেন এক অন্ধকারাচ্ছন্ন জনপদ।

গোবিন্দপুর গ্রামের মোজাম্মেল হোসেন বলেন, যুদ্ধের পর থেকে শত চেষ্টা করেও একটি রাস্তা ও ব্রীজের দাবি জানিয়ে আসলেও আজ পর্যন্ত মেলেনি কোন প্রতিকার। রাস্তা ও ব্রীজের জন্য ছেলেমেয়েদের বেশী দূর লেখাপড়া করাইতে পারি নাই। কেমনে লেখাপড়া করবো ব্রীজ তো নাই, সাতার কেটে পার হয়ে স্কুলে যাওয়া সম্ভব হয়নি ছেলেমেয়েদের। আমি কৃষিকাজ করে সংসার চালাই, রাস্তার অভাবে বর্ষা মৌসুমে ধান, পাট বিক্রি করতে পারি না। মসজিদে নামাজ আদায় করতে গেলেও নদী পার হয়ে যেতে হয়। সামনে শীতকাল খুব কষ্ট করে আমাদের চলাফেরা করতে হচ্ছে। আমাদের একটাই দাবি- একটা রাস্তা ও ব্রীজ চাই।

গোবিন্দপুরের স্থানীয় বাসিন্দা মনু মিয়া বলেন, আমি বৃদ্ধ মানুষ। সড়ক ও সেতুর অভাবে নিদারুণ কষ্ট করছি। ব্রীজ ছাড়া এই নদী পারাপার হওয়া আমাদের জন্য খুব ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু জীবনের তাগিদে ঝুঁকি নিয়ে আমাদের নদী পারাপার হতে হচ্ছে। অনেক নেতাকর্মী ব্রীজ ও রাস্তার আশ্বাস দিলেও আমাদের ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি। আমি কি মৃত্যুর আগে রাস্তা ব্রীজ দেখে যেতে পারবো? মনের অজান্তেই সবার কাছে প্রশ্ন রেখেছেন তিনি।

সিংগাবড়ুনা গ্রামের বিপ্লব মিয়া বলেন, রাস্তা ও সেতুর ভোগান্তি শুধু গোবিন্দপুর গ্রামের বাসীদের নয়, আশেপাশের ইউনিয়নের ৭ গ্রামের মানুষ এই রাস্তা ব্যবহার করে যাতায়াত করেন। এই গ্রাম দিয়ে, ভায়াডাংগা, হাসধরা, চিংগুততার, বাঘহাতা, বড়ুকুচি, সিংগাবড়ুনা, মাটিফাটা, কুতুবপুর লোকজন বেশী চলাচল করেন। এই গ্রামের রাস্তা ও সেতু নির্মিত হলে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের লোকজনের প্রায় ১০ কিঃ মিঃ রাস্তার দূরত্ব ও সময় দুইটায় কমে যাবে। তিনি দ্রুত রাস্তা সংস্কার ও সেতু দাবি করেন।

খলিলুর রহমান বলেন, গোবিন্দপুর গ্রামে রাস্তা ও সেতু নির্মিত হলে এই এলাকা সাধারণ জনগন সহ ইউনিয়নের সকল জনগণ সুবিধা ভোগ করবে। কারণ আমরা কৃষিকাজ করি। ধান, পাট, গম, আলু, বিক্রির মৌসুমে এই রাস্তা ব্যবহার করে আমাদের কৃষিপণ্য হাট-বাজারে নিয়ে যেতে হয়। এই রাস্তা নির্মিত হলে সকল ইউনিয়নবাসী উপকৃত হবে।

সিংগাবড়ুনা ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ড মেম্বার নুর আলম জানান, এই এলাকার সাধারণ জনগণ চরম দুর্ভোগে বসবাস করছে। শিক্ষা ব্যবস্থা একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে। গর্ভবতী নারীরা ও সাধারণ জনগণের তাৎক্ষণিক উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন হলে রাস্তা ও সেতুর অভাবে মিলছে না চিকিৎসা। তিনি আরো জানান, পরিষদ থেকে উন্নয়নের জন্য যে টাকা বাজেট হয় তা দিয়ে এই সমস্যা উত্তরণ করা সম্ভব না। এই সমস্যা প্রতিকারের জন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, শ্রীবরদী উপজেলা প্রকৌশলী মশিউর রহমান বলেন, আমরা চেষ্টা করি কোন এলাকা যাতে উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত না হয়। গোবিন্দপুর এলাকায় রাস্তা ও সেতুর প্রয়োজন, আমাদের কাছে উপর মহল থেকে প্রকল্প বাস্তবায়নের অনুমতি আসলে, আমরা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে পারবো।