ঢাকা মঙ্গলবার, ৩রা ডিসেম্বর ২০২৪, ২০শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১


বছরে প্রায় ২০ কোটি টাকার মাছ ছিনিয়ে নিচ্ছেন মাওয়া-পাগলা কোস্ট গার্ডের দুই সদস্য


৯ নভেম্বর ২০২৪ ২০:২০

আপডেট:
৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১২:১৯

সাতক্ষীরা থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাছ পরিবহণকালে কোস্ট গার্ডের মাওয়া-পাগলা স্টেশনের জিনায়েত হোসেন ও মোঃ ইমরান হোসেনের নেতৃত্বে ট্রাক থামিয়ে বছরে প্রায় ২০ কোটি টাকার মাছ ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে। এতে সহযোগীতা করছেন ওই এলাকার কথিত সোর্স রাজিব। বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখিয়ে ছিনিয়ে নেয়া বাগদা গলদা, ভেটকি, ভাঙানসহ বিভিন্ন প্রজাতির এসব মাছ পুনরায় বিক্রি করা হচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে’।

শনিবার (০৯ নভেম্বর) বেলা ১২টায় সাতক্ষীরা জেলার মৎস্য ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র মৎস্য ব্যবসায়ীদের আয়োজিত মানববন্ধনে এসব অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। এসময় এসব ঘটনা চাক্ষুস স্বাক্ষী ভুক্তভোগী ট্রাকচলকরা এসব ঘটনা তুলে ধরে বক্তব্য দেন।

সাতক্ষীরা সুলতানপুর বড় বাজারের মৎস্য ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী আব্দুর রহমানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন মৎস্য ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী মোঃ শফিকুল ইসলাম, মোঃ আনোয়ার হোসেন, মোঃ জয়নাল আবেদীন, আবু জাফর, রোকনুজ্জামান, রহমত উল্লাহ, উত্তম বাবু, রনো বাবু, ট্রাক চালক রবিউল ইসলাম, শাহজাহান আলী প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, ‘আমাদের সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর, আশাশুনি, কালিগঞ্জ, দেবহাটা ও সাতক্ষীরা সদরসহ পাশর্^বর্তী জেলা খুলনার পাইকগাছা, কয়রা এবং যশোর জেলার মনিরামপুর, কেশবপুর থেকে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টি ট্রান্সপোর্ট দৈনিক ১০০ থেকে ১৫০টি ট্রাকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মাছ সরবরাহ করি। কিন্তু বিগত প্রায় দুই বৎসর যাবৎ আমাদের জেলাসহ পাশর্^বর্তী জেলার উল্লেখিত এলাকা সমূহের চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির এসব মাছ পরিবহণকালে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ঢাকা জোনের বিসিজি মাওয়া স্টেশনের সদস্য জিনায়েত হোসেন এবং বিসিজি পাগলা স্টেশনের সদস্য মোঃ ইমরান হোসেনের নেতৃত্বে কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা/কর্মচারী ও মাওয়া-পাগলা বিসিজি স্টেশানের প্রধান সোর্স রাজিবসহ একাধিক সোর্সের যোগসাজসে মাছ বোঝাই ট্রাকগুলো পদ্মসেতু পার হওয়ার পর সিভিল পোশাকে সিগনাল দিয়ে ট্রাক থামানো হয়। তারপর ড্রাইভার হেলপারের মোবাইল কেড়ে নিয়ে তাদেরকে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে ট্রাক থেকে মাছ নামিয়ে নিয়ে মাছে পুশ করা আছে মর্মে তাদের থেকে স্বীকারোক্তি নিয়ে চিংড়িসহ বড় সাইজের ভেটকি, ভাঙান ও বিভিন্ন প্রজাতির বড় মাছ ছিনিয়ে নেয়’।

বক্তারা আরো বলেন, ‘উক্ত ট্রাকগুলো সারারাত আটকে রেখে ভোরে ছেড়ে দেয়। ফলে ট্রাকগুলো সময়মত গন্তব্যে পৌঁছাতে না পেরে কম দামে মাছগুলো বিক্রি করতে হয়। অরপদিকে কোনপ্রকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই অপদ্রব্য পুশ করা বলে ছিনিয়ে নেয়া মাছগুলো সকালে ঢাকাসহ বিভিন্ন বাজারে সোর্সের মাধ্যমে বিক্রয় করে উক্ত টাকা তারা পকেটস্থ করেন। যার কয়েকটি মাছ বিক্রির রশিদ সাতক্ষীরার ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন মাধ্যমে সংগ্রহ করেছেন’।

বক্তারা আরো বলেন, ‘একটি ট্রান্সপোর্টের ট্রাক থেকে ১১টি ঘটনায় মোট ৪০৩ কর্কসিট মাছ ছিনিয়ে নিয়েছেন তারা। যার বাজার মূল্য প্রায় ১ কোটি টাকা। এভাবে প্রতিনিয়ত তারা সকল ট্রান্সপোর্টের ট্রাক থেকে বছরে প্রায় ২০ কোটি টাকার বৈধ চিংড়ি ও বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ছিনিয়ে নিচ্ছেন। এতে সাতক্ষীরা জেলার মৎস্য ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ীসহ ক্ষুদ্র মৎস্য ব্যবসায়ীরা ব্যবসায়িকভাবে এবং আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির মুখে পড়ছেন। সেই সাথে দক্ষিণ বঙ্গের চিংড়ি সহ মৎস্য খাত দিন দিন হুমকির মুখে ফেলছেন এসব অসাধু কর্মকর্তারা’।

মানববন্ধনে তারা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ মহাসড়কে গাড়ি থামানো বন্ধ করে প্রয়োজনে মাছের লোড পয়েন্ট এবং আনলোড পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়ে ট্রাকগুলো চেক করা এবং গভীর রাতে নির্জন মহাসড়কে এমন ধরনের চেক করার নামে মাছ লুট বন্ধ করার জোর দাবি জানান ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা। এছাড়া ইতিমধ্যে কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালক, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা। মানববন্ধনে এসময় সাতক্ষীরার মৎস্য ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ী রহমত আলী, বিশ্বনাথ মেম্বার, শান্তি, আব্দুস সামাদ, ক্ষুদ্র মাছ ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম, চয়ন ফিসের কুশ, সুকুমার বিশ্বাস, মিন্টু, তাইজুল বিশ্বজিৎ দাস, ইউনুস আলী, বাপ্পীসহ শতাধিক ভুক্তভোগী উপস্থিত ছিলেন।