রুট বদলেও থামেনি চোরাচালান, নাইক্ষ্যংছড়িতে বিজিবির অভিযানে আটক ১৫ বর্মী গরু
সীমান্তে নজরদারি জোরদারের পর পুরোনো পাচারপথ পরিত্যাগ করে নতুন সড়ক ব্যবহার শুরু করলেও শেষ পর্যন্ত রক্ষা পেল না চোরাচালান চক্র। কক্সবাজারের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর অভিযানে পাচারকালে জব্দ হয়েছে ১৫টি বর্মী গরু।
শনিবার গভীর রাতে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার মিয়ানমার সীমান্তবর্তী ৫১, ৫২ ও ৫৩ নম্বর সীমান্ত পিলারসংলগ্ন এলাকায় এই অভিযান পরিচালনা করে বিজিবির ১১ ব্যাটালিয়ন। বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে সীমান্ত এলাকায় টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি পাওয়ায় চোরাচালানকারীরা পুরোনো দুর্গম পাহাড়ি ট্রেইল এড়িয়ে পাকা ও আধা-পাকা সড়ক ব্যবহার করে গরু পাচারের নতুন কৌশল নেয়।
নতুন রুট, পুরোনো চক্র গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিজিবি জানতে পারে, চোরাচালানকারীরা নাইক্ষ্যংছড়ি-পাইনছড়ি-কুরিক্ষ্যং-চিকনছড়ি-বাইশারী সড়ক ব্যবহার করে গরুগুলো ঈদগাঁও অথবা খুটাখালী এলাকায় পৌঁছে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এসব এলাকা থেকে পরে দেশের বিভিন্ন জেলার হাটবাজারে সরবরাহ করা হয় বলে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন।
তথ্য পাওয়ার পর শনিবার রাতে ওই সড়কে অতিরিক্ত টহল ও চেকপোস্ট বসানো হয়। এ সময় বিজিবির উপস্থিতি টের পেয়ে চোরাচালানকারীরা গরুগুলো রাস্তার পাশে ফেলে রেখে পাহাড়ি জঙ্গল ও অন্ধকারের সুযোগ নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থল থেকে ১৫টি বর্মী গরু জব্দ করা হয়, যেগুলোর আনুমানিক বাজারমূল্য কয়েক লাখ টাকা।
সীমান্ত অর্থনীতিতে চোরাচালানের প্রভাব সীমান্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, মিয়ানমার থেকে অবৈধভাবে গরু পাচার দীর্ঘদিন ধরে একটি সংঘবদ্ধ চক্রের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। স্থানীয় দালাল, পরিবহন শ্রমিক ও সীমান্তের কিছু অসাধু নেটওয়ার্কের সহায়তায় এই পাচার কার্যক্রম চলে বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে একদিকে সরকার বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে স্থানীয় বৈধ খামারিরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন।
বিজিবি জানায়, সীমান্ত এলাকায় চোরাচালান দমনে নিয়মিত টহল, গোয়েন্দা নজরদারি এবং বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এই ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করতে তদন্ত চলছে এবং জব্দকৃত গরুগুলোর বিষয়ে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।
বিজিবির এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, “চোরাচালানকারীরা কৌশল বদলালেও বিজিবির নজরদারি আরও আধুনিক ও তথ্যভিত্তিক হচ্ছে। সীমান্তে যেকোনো ধরনের অবৈধ অনুপ্রবেশ ও পাচার রোধে আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছি।”
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শুধু অভিযানের পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, স্থানীয় প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয় এবং পাচারের অর্থনৈতিক চেইন ভাঙতে পারলেই এই অপরাধ কার্যকরভাবে নিয়ন্ত্রণে আসবে।
নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে সাম্প্রতিক এই অভিযান আবারও প্রমাণ করলো—রুট বদলালেও চোরাচালান বন্ধ হয়নি, তবে কঠোর নজরদারি থাকলে পাচারকারীদের পরিকল্পনা
