নেছারাবাদে গৃহপরিচারিকাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ : দুই মাসের ভ্রুন নষ্ট
পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার ২ নং সোহাগদল ইউনিয়নে একটি লোমহর্ষক ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া যায়। অভিযোগটি করেন ধর্ষিতা / ভুক্তভোগী মোসাঃ জেসমিন আক্তার (৪০) স্বামীঃ মোঃ ইমরান, পিতাঃ আলী আকবর। তিনি নেছারাবাদ উপজেলাধীন ২ নং সোহাগদল ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ড বরছাকাঠি গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। গরিব অসহায় তিন সন্তানের জননী জেসমিনের ছোট্ট একটি ভাঙ্গাচোরা কাঠের ঘরে বসবাস। স্থানীয় বরছাকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিছনে তার বসতঘর।
অভিযুক্ত ধর্ষণকারীর নাম মোঃ রাসেল (২৫), পিতাঃ আব্দুল লতিফ (বীর মুক্তিযোদ্ধা)। ধর্ষিতা এবং ধর্ষণকারীর বাড়ি একই এলাকায়। জেসমিনের বাসার পার্শ্ববর্তী রাসেলের বাড়ি।
রাসেল বর্তমানে একজন মুদি মনোহারির দোকানদার। দোকানটিও তার বাড়ির সামনে অবস্থিত। তাদের বিলাসবহুল একটি বিল্ডিং বাড়ি রয়েছে। রাসেলের মামা মফিজ এলাকায় মাদকের ডিলার। গাজা সহ বিভিন্ন মাদক মামলার আসামি।
ধর্ষিতা জেসমিন জানান, বেশ কয়েক বছর যাবৎ আমার স্বামী অন্যত্র আর একটি বিয়ে করে সংসার করায় আমি বাড়িতে আমার ছোট মেয়ে রাবেয়াকে নিয়ে খুব কষ্টে জীবন যাপন করছি। অভাবের তারনায় মানুষের বাসায় কাজ করে খাই। একপর্যায়ে রাসেলের মা আমাকে তাদের বাসায় গৃহপরিচারিকা হিসেবে কাজ দেয়। আমি কয়েকমাস (৫/৬ মাস) যাবৎ তাদের বাসায় কাজ করে আসছি। প্রথম থেকেই রাসেল আমার দিকে খারাপ নজর দেয় এবং বিভিন্ন মিথ্যা প্রলোভন এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে সে আমাকে ধর্ষণের চেষ্টায় লিপ্ত ছিলো। একপর্যায়ে সে আমাকে তাদের বাসার ভিতরে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। প্রায়ই এরকম করতে থাকে। আমাকে বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি দেওয়া ও কাজ হারানোর ভয়ে কাউকে জানাতে বা মুখ খুলতে পারিনি।
পরবর্তীতে আমি যখন প্রায় ২ মাসের অন্তস্বত্বা হই তখন আমি এবং আমার আপনজন ভাবিরা পেটের অবস্থা দেখে সন্দেহ করে। তারপর যখন আমরা জয়স্ট্রিপ দিয়ে প্রস্রাব টেষ্ট করি তখন প্রাথমিক পরিক্ষায় পজেটিভ ধরা পড়ে।
এ বিষয়ে যখন আমি রাসেল এবং তার মাকে জানাই তখন রাসেল এবং ওর মা সহ তাদের পরিবারের সবাই আমাকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি ও হুমকি ধমকি প্রদান করে এবং আমাকে পেটের বাচ্চা নষ্ট করার জন্য ঔষধ খেতে বলে। এতে আমার শারিরীক সমস্যা হতে পারে ভেবে আমি অপারগতা প্রকাশ করলে তারা আমাকে বাড়ি ছাড়া করা এবং মেরে ফেলার হুমকি দেয়। পরবর্তীতে তারা ঔষধ এনে জোরপূর্বক আমাকে খাইয়ে দেয়। এতে আমি ভিষন অসুস্থ হয়ে পরি এবং ব্লাডিং শুরু হয়। খুব খারাপ অবস্থা দেখে আমার পাশের বাসার ভাসুরের স্ত্রী (ভাবী) গত ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখ আমাকে নিয়ে নেছারাবাদ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যায় এবং সেখানে আমার পরিক্ষা নিরীক্ষা করে ওয়াসের মাধ্যমে পেটের ভ্রুন ফেলে দেওয়া হয়।
জেসমিন আরো জানান, পরবর্তীতে বিষয়টি আমি এলাকার বর্তমান মেম্বার শামীম, চৌকিদার ইমদাদুল সহ এলাকার মুরব্বি ইদ্রিস পালকে জানাই। তারা আমার কথা শুনে এবং এর একটা সুষ্ঠ বিচারের আশ্বাস দেয়। কিন্তু আজো পর্যন্ত এ নিয়ে তারা কোনো সুরাহা বা বিচার করেনি। উল্টো আমাকে অসহায় পেয়ে রাসেল এবং তার পরিবার বিভিন্ন রকমের হুমকি ধমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। এমতাবস্থায় আমি খুবই কষ্টে এবং ভয়ে দিন কাটাচ্ছি। আমাকে তারা ঔষধ বাবদও কোনো খরচপাতি দেয়নি, এমনকি আমার ঘরে কোনো চাল ডাল বাজার সদায়ও নেই। পাশের প্রতিবেশীরা কিছু দিলে খাই নাহলে না খেয়ে দিন কাটাই। তাছাড়া এই কলঙ্কের কারনে আমাকে প্রতিবেশীরাও আর আগের মতো দেখেনা এবং বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রণা দায়ক কথা শুনতে হয়। এতে আমার চরম মানহানী ঘটেছে। মাঝে মাঝে মনে চায় গলায় ফাঁস দিয়ে মরে যাই কিন্তু পারিনা ৮ বছরের ছোট মেয়েটার কথা ভেবে। আমার পাঁচটি সন্তান তার মধ্যে দুইটি ছেলে ছিলো জমজ, তারা মারা যায়। এখন তিনটি মেয়ে আছে যার দুইজনকে বিবাহ দিয়েছি, আর ৮ বছরের ছোট মেয়েটি আমার কাছে থেকে বরছাকাঠি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেনীতে অধ্যায়নরত আছে।
এমতাবস্থায় তারা হুমকি দেয় আমি যেনো আর এ বিষয়টি নিয়ে কাউকে কিছু না বলি এবং কোনো ঝামেলা না হয়। আমি বিচারের আশায় এতোদিন অপেক্ষা করেছি কিন্তু এলাকা থেকে কোনো রকম সুরাহা পাইনি। আমি তাদের ভয়ে এবং আমার শারীরিক অসুস্থতার কারনে এতোদিন থানায় বা কোনো আইনি সংস্থায় অভিযোগ করতে পারিনি।
এখন আমি অসহায় হয়ে মিডিয়ার সহযোগিতায় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যাতে আমি এর একটা যথাযথ বিচার পাই এবং এই ধরনের কলঙ্কিত ঘটনার কবলে এলাকায় আর কোনো নারী যেনো না পড়ে।
