আজও সচিবালয়ে বিক্ষোভ, স্মারকলিপি দেওয়ার পরিকল্পনা কর্মচারীদের

সরকারি চাকরি আইন সংশোধন অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ের বাদামতলায় জমায়েত হয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন কর্মচারীরা।
রোববার বেলা ১১টায়, ২০ থেকে ৩০ জনের একদল কর্মচারী তথ্য ভবনের দিক থেকে মিছিল নিয়ে বাদামতলায় মিলিত হয়। এসময় হ্যান্ডমাইকে অন্য সহকর্মীদের মিছিলে যোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন তারা। ১১টা ১০ মিনিটের দিকে ১১ নম্বর ভবন থেকে শখানেক মানুষের আরেকটি মিছিল বাদামতলায় যায়।
এদিন দাবি আদায়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টার বরাবর স্মারকলিপি জমা দেওয়ার কথা রয়েছে আন্দোলনরত কর্মচারীদের। এর আগে বুধবার সচিবালয়ে আন্দোলনরত কর্মচারীরা ঘোষণা দিয়েছিলেন বৃহস্পতিবার থেকে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এক ঘণ্টার শান্তিপূর্ণ কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করবেন তারা।
উপদেষ্টা পরিষদগত ২২ মে সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ আকারে জারি করার প্রস্তাবে সায় দেয়। এর প্রতিবাদে ২৪ মে সকাল থেকে দিনভর সচিবালয়ে বিক্ষোভ করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাদের আপত্তির মধ্যেই রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ২৫ মে রাতে অধ্যাদেশ জারি করা হয়। সেখানে পুরনো আইনের সঙ্গে ‘৩৭ক’ নামের আরেকটি ধারা সংযোজন করা হয়।
নতুন ধারায় একজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে দুই দফায় সাত দিন করে নোটিসের পর, দায়ী হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা রাখার বিধান রাখা হয়েছে। অধ্যাদেশে ‘আচরণ বা দণ্ড সংক্রান্ত’ বিশেষ বিধানে বলা হয়েছে-
>> কেউ যদি এমন কাজ করে যা অনানুগত্যের সামিল এবং যা অন্য কর্মচারীদের মাঝে অনানুগত্য সৃষ্টি করতে পারে বা শৃঙ্খলা বিঘ্ন ঘটাতে পারে বা অন্যের কর্তব্য পালনে বাধার সৃষ্টি করতে পারে;
>> এককভাবে বা সম্মিলিতভাবে ছুটি ব্যতীত কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলে। কাউকে কর্মবিরতিতে বাধ্য বা উস্কানি দেওয়া, অন্য কর্মচারীকে কাজে বাধা দেওয়া হলে;
>> কোনো কর্মচারীকে তার কর্মস্থলে আসতে বা কাজ করতে বাধা দেওয়া হলে তা দণ্ডনীয় অপরাধ হবে।
এসব অপরাধের শাস্তি হিসেবে পদাবনতি বা গ্রেড অবনতি, চাকরি থেকে অপসারণ কিংবা চাকরি থেকে বরখাস্ত করার বিধান রাখা হয়েছে। এসব অসদাচরণের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অভিযোগ গঠন, সাত দিনের সময় দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিস, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কারণ জানিয়ে জবাব না দিলে আবার সাত দিনের নোটিস দেওয়ার পর তা বিবেচনা করে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে। তবে অভিযুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীর আপিল রাখার সুযোগ রয়েছে। দণ্ডের নোটিস হাতে পাওয়ার ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে আপিল করা যাবে।
নতুন এই অধ্যাদেশকে আন্দোলনকারীরা বলছেন ‘নিবর্তনমূলক কালো আইন’। এর পর সচিবালয়ে আন্দোলন বিক্ষোভ আরো জোরদার করেন কর্মচারীরা। ওই সময়ে অধ্যাদেশ সংশোধন নয়, পুরোপুরি বাতিলের দাবি তোলেন আন্দোলনকারীরা। পরে ভূমি সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব, পরিসংখ্যান সচিব, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব ও যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সেই বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই আন্দোলনের বিষয়টি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের কাছে তুলে ধরেন দায়িত্বপ্রাপ্ত সচিবরা।
জাপান সফর শেষে দেশে ফেরার পর প্রধান উপদেষ্টার কাছে বিষয়টি তুলে ধরবেন বলে জানিয়েছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ। মাঝে একদিনের জন্য আন্দোলন স্থগিত রেখেছিলেন আন্দোলনরতরা। পরে প্রতিদিন এক ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।