ঢাকা শনিবার, ৭ই জুন ২০২৫, ২৫শে জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২


ত্রুটিপূর্ণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় রাজধানীতে বাড়ছে মাছি ও মাছিবাহিত রোগ


৭ মে ২০২৫ ১২:৫৪

আপডেট:
৭ জুন ২০২৫ ১২:০১

ছবি : সংগৃহীত

নগরবাসীর বড় ভোগান্তি ও আতঙ্কের নাম মশা। এবার তার সঙ্গে যোগ হয়েছে মাছিও। গত কয়েক মাসে ঢাকায় বেড়েছে মাছির উপদ্রব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ত্রুটিপূর্ণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে মশার সঙ্গে মাছির উপদ্রবও বেড়েছে।

নগরবাসীর বড় ভোগান্তি ও আতঙ্কের নাম মশা। এবার তার সঙ্গে যোগ হয়েছে মাছিও। গত কয়েক মাসে ঢাকায় বেড়েছে মাছির উপদ্রব। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ত্রুটিপূর্ণ বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কারণে মশার সঙ্গে মাছির উপদ্রবও বেড়েছে। সঙ্গে বেড়েছে মাছিবাহিত বিভিন্ন রোগবালাই।

রাজধানী দক্ষিণ মান্ডার গৃহিণী মহিমা। বাসাবাড়িতে মাছির যন্ত্রণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ঘরে কোনো খাবারই খোলা রাখা যায় না। খোলা রাখলেই মাছি এসে বসে। আগে এত মাছি ছিল না। সম্প্রতি মাছির উপদ্রব অস্বাভাবিক রকম বেড়েছে। এভাবে মশা-মাছির যন্ত্রণা বাড়তে থাকলে নাগরিক জীবনে আরো বিপর্যয় নেমে আসবে।’

কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন, গৃহস্থালি ভেজা বর্জ্য মাছির বংশবিস্তারে সহায়ক। কয়েক মাস ধরে ঢাকায় বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ঢিলেমি ও বিশৃঙ্খলা বেড়েছে। ফলে রাজধানীর সড়কে খোলা বর্জ্য পড়ে থাকছে, একই সঙ্গে নতুন নতুন জায়গায় বর্জ্য ফেলার প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে। এতে মাছির বংশবিস্তারে উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে।

কারওয়ান বাজারের ফল বিক্রেতা আকবর আলী বলেন, ‘হঠাৎ করে ঢাকায় মাছির সংখ্যা বেড়ে গেছে। ফলের দোকানে সবসময় মাছি থাকে। এবারের মতো এত বেশি মাছি গত এক দশকে দেখা যায়নি।’

একই পরিস্থিতির কথা বলেছেন এজিবি কলোনির চা বিক্রেতা কামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘চা-রুটি বিক্রি করি। পাশেই ময়লার ভাগাড়। শ্রমজীবী মানুষ এখানে বসে খাওয়াদাওয়া করে। খাবারে মাছি এসে বসে। রোগবালাই ছড়াবে, এটা জানি। তার পরও আমরা এভাবেই চলছি।’

মাছির সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক ড. শেফালী বেগম বলেন, ‘‌যে পরিবেশে মাছি জন্মায় সে পরিবেশ পাচ্ছে বলেই মাছির সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। অপরিষ্কার, নোংরা, নর্দমার মতো জায়গায় মাছি জন্মে। আমরা দেখতে পাচ্ছি চারদিকেই নোংরা-অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ। সড়ক ও বাসাবাড়িতে বর্জ্যের পরিমাণ খুব বেড়েছে। ফলে মাছি আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। বিষয়টি নিয়ে এখনো কোনো জরিপ হয়নি। তবে অবস্থা যদি আরো বেগতিক হয় তখন সরকারকে পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে।’

গতকাল ঢাকা দক্ষিণ ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সড়কেই পড়ে রয়েছে বর্জ্যের স্তূপ। জুরাইন থেকে দয়াগঞ্জ পর্যন্ত এক কিলোমিটার পুরো সড়কে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে বর্জ্য। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ও আশপাশ এলাকা, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের নিচেও দেখা গেছে বর্জ্যের স্তূপ। এছাড়া এজিবি কলোনি, মান্ডা, বাড্ডা, গুলশান, গুদারাঘাটসহ যেসব এলাকায় সিটি করপোরেশনের সেকেন্ডারি বর্জ্যের ভাগাড় রয়েছে সেখানে মাছির উৎপাত দেখা গেছে।

কয়েক মাস ধরেই ঢাকা দক্ষিণ সিটির নাজিরাবাজার এলাকায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পেছনের সড়কে বর্জ্যের বিরাট স্তূপের দেখা মিলছে। স্থানীয়রা জানান, এভাবে সড়কের প্রায় অর্ধেকজুড়ে আগে বর্জ্য ফেলে রাখা হতো না। বর্জ্য ব্যস্থাপনার দুর্বলতা বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ সফিউল্লাহ সিদ্দিক ভূঁইয়া বলেন, ‘‌অপেক্ষাকৃত ভোরবেলায় সড়কে বর্জ্য পড়ে থাকার কারণ হলো আমরা বর্জ্য পরিষ্কারের সময়ে পরিবর্তন এনেছি। আগে আমরা রাতে বর্জ্য অপসারণ করতাম। সকালের মধ্যে আবার নোংরা হয়ে যেত। এখন আমরা ভোর ৪টা থেকে সকাল ৮টার মধ্যে বর্জ্য অপসারণ করছি। ফলে মানুষজন ওই সময়ে সড়কের বর্জ্যটা চোখে দেখছে। তবে এটা ঠিক, কয়েক মাস আগে আমাদের লোকজন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে করার সুযোগ পায়নি। ওই সময় আমিও মাছি বৃদ্ধির বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করি। এখন সে সমস্যা আর নেই বলে মনে হচ্ছে।’

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, মশা-মাছি বৃদ্ধির বিষয়টি সরাসরি জনস্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে। মাছি বাড়লে টাইফয়েড, ডায়রিয়া, আমাশয়ের প্রকোপ বাড়ে। এ প্রসঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, ‘‌কোনো সন্দেহ নেই আমাদের বর্জ্য অব্যবস্থাপনার প্রভাব পড়ছে জনস্বাস্থ্যে। বর্জ্য বাড়লে মশা-মাছি ও ছোট ইঁদুর বেড়ে যায়। মাছি বর্জ্য থেকে জীবাণু বহন করে খাবারে নিয়ে ফেলে। ওই খাবার খেয়ে মানুষ টাইফয়েড, কলেরার মতো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়। তবে মাছি বাড়ার কারণে কোনো রোগ বাড়ছে কিনা সেটা আলাদা করে বলার সুযোগ নেই। কেননা সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব আগে থেকেই বেশি। নানা কারণেই আমরা জ্বরসহ নানা রোগী পাচ্ছি। সরকারকে অবশ্যই জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নত করে মাছিবাহিত রোগ কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে।’