সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ আল-আমিন
দুবাই বসেই ঢাকার শ্যামলীর ‘কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ
![দুবাই বসেই ঢাকার শ্যামলীর ‘কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ](https://www.amader-din.com/uploads/shares/kishor_gang-2023-03-30-03-07-40.jpg)
শ্যামলীর বিভিন্ন স্থানে ‘কিশোর গ্যাং’ অপ্রতিরোধ্য। উঠতি বয়সি তরুণ-যুবকদের এই গ্যাংয়ের অনেক সদস্য ভয়ংকর হয়ে উঠেছে। শ্যামলীর স্কুল-কলেজ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সামনে আড্ডা, ইভটিজিং ও মাদকসেবনে পাড়া-মহল্লায় আতঙ্কের নাম কিশোর গ্যাং। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অভিযান ও উদ্যোগেও কিছুতেই লাগাম টানা যাচ্ছে না তাদের। বরং প্রতিনিয়ত তাদের কর্মকাণ্ড আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিব্রত করছে। শ্যামলীর পাড়া-মহল্লায় গড়ে উঠা কিশোর গ্যাং সদস্যদের রয়েছে মোটরসাইকেল বহর। সংগ্রহে রয়েছে আগ্নেয়াস্ত্র। তাদের নেপথ্যে প্রশ্রয়দাতা হিসেবে রয়েছে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা মোহাম্মদ আল-আমিন। তিনি বর্তমান দুবাই থেকে এসব নিয়ন্ত্রণ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানার বিজলি এলাকার সালাম মাতুব্বরের ছেলে আল-আমিন । এক সময় ছাত্রলীগ করতেন , পরবর্তী ছিনতাই মামলার ১ নম্বর আসামি হয়ে অপরাধ জগতে পা রাখেন শক্তপোক্ত ভাবেই। তিনি একসময় মোহাম্মদপুর থানা ছাত্রলীগের ২৯ নং ওয়ার্ড এর জয়েন্ট সেক্রেটারিও ছিলেন। তখন থেকেই তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ রাজধানী শ্যামলীর এলাকার লোকজন। চাঁদাবাজি ছিল তার নিত্যদিনের কর্ম।
আল আমিন ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর কিশোর গ্যাং নিয়ে কুমিল্লার দাউদকান্দি কান্দি এলাকায় একটি মালবুঝাই লড়ি ছিনতাই করতে গিয়ে ধরা পড়ে। এ ঘটনায় কুমিল্লার দাউদকান্দি থানায় আল-আমিন কে ১ নাম্বার আসামি করে আরো ৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের হয়।
এরপর জেল থেকে বের হয়ে আল আমিন এর অপরাধ যেন বেড়েই চলছিল। একসময় আল আমিন শ্যামলী এলাকায় বিশাল এক কিশোর গ্যাং তৈরি করে, যার উদ্দেশ্য ছিল চাদাবাজি, ছিনতাই, মারামারি সহ বিভিন্ন অপরাধ। দিনের পর দিন অপরাধ করে করে আল আমিন কালো টাকার পাহাড় গড়ে তুলে এবং সেই টাকা নিয়ে দুবাই চলে যায়। সে এখন দুবাই থেকে শ্যামলীর কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করে।
ভুক্তভোগী কয়েক জন এর সাথে কথা বলে জানা গেছে আল আমিন দুবাই থেকে ফোন করে চাঁদা দাবি করে, চাঁদা না পেলে এই কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মারামারি ভাংচুরসহ বিভিন্ন ভাবে ক্ষতি করে। বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অত্যাচার যেন কোনভাবে বন্ধ ই হচ্ছে না।
কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক, সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ তৌহিদুল হক বলেন, কিশোর গ্যাং নতুন কিছু নয়। তারা নতুন নতুন ঘটনায় যুক্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, পারিবারিক বন্ধন একটা বড় ব্যাপার। পারিবারিক শৃঙ্খলায় ঘাটতি হলে কিশোররা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। তারা খুন, ধর্ষণ, ইভটিজিং, মাদকসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিশোরদের রাজনৈতিক কারণে ব্যবহার করা হচ্ছে। কতিপয় রাজনৈতিক নেতা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে তাদের দিয়ে গ্রুপ তৈরি করাচ্ছে। অল্পতে তুষ্ঠ কিশোররা রাজনৈতিক আশ্রয়, অস্ত্র ও অর্থ পেয়ে অপরাধে জড়াচ্ছে। এতে একেক ঘটনার পেছনে একেক গল্প তৈরি হচ্ছে। তিনি বলেন, দেশে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম স্থিমিত হওয়ায় এর জায়গা দখল করে নিয়েছে প্রযুক্তি। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য সাংস্কৃতিক চর্চার জায়গা উন্মুক্ত করতে হবে উল্লেখ করে এই সমাজবিজ্ঞানী বলেন, কিশোররা যেভাবে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে বা অপরাধপ্রবণ হচ্ছে তা ভবিষ্যতের জন্য উদ্বেগজনক। এ জন্য প্রতিটি পরিবারকে সহনশীল হতে হবে। গঠনমূলক কাজ করতে হবে। পরিবারে পরস্পরের সহযোগিতা-সমঝোতা বাড়াতে হবে। সামাজিক আস্থা বাড়াতে হবে । সরকারকে এ নিয়ে ভাবতে হবে। সবমিলিয়ে ইতিবাচক ফল পেতে কমপক্ষে ১০ বছর সময় লাগতে পারে। তাৎক্ষণিক ফল আশা করা ঠিক হবে না।
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এআইজি (মিডিয়া) সোহেল রানা বলেছেন, বিভিন্ন জায়গায় কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্যরোধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আইনি পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে বয়স কম হওয়ায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে বিকল্প ভাবতে হচ্ছে। তিনি বলেন, শুধু আইন প্রয়োগ করে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। এ জন্য সামাজিক সচেতনতা বাড়তে কাজ করছে পুলিশ। পরিবার থেকেও সন্তানদের ব্যাপারে সতর্ক থাকতে সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ। প্রতিটি থানায় এ ব্যাপারে তৎপরতা রয়েছে বলেও জানান তিনি।