ঢাকা শুক্রবার, ৩রা মে ২০২৪, ২১শে বৈশাখ ১৪৩১


ঢামেক হাসপাতালের ওয়ার্ডবয়, এলাকায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তার!


৭ জুলাই ২০২১ ০৭:৩৬

আপডেট:
৩ মে ২০২৪ ১৯:৫৭

নগরীর উত্তর কাট্টলী এলাকায় ধরা পড়লেন অষ্টম শ্রেণি পাস ‘বিশেষজ্ঞ’ চিকিৎসক খোরশেদ আলম (৫০)। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের এই ওয়ার্ডবয় এক ফার্মেসিতে বসে প্রতি রোগী দেখার নামে ফি নিচ্ছিলেন ৫০০ টাকা। নিউরোমেডিসিনের ডাক্তার সেজে বসা এই প্রতারককে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘করোনা মেডিসিন ব্যাংক’-এর সহায়তায় গ্রেপ্তার করে আকরব শাহ থানাপুলিশ।

খোরশেদ আলম নিজেকে পরিচয় দেন ঢামেক হাসপাতালের নিউরোমেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে। তার নামের পাশে লেখা বড় বড় ডিগ্রিগুলোর মাঝে আছে এমবিবিএস (ডিএমসি), বিসিএস (স্বাস্থ্য), এফসিপিএস (মেডিসিন), এমডি (নিউরোলজি) ও এফআরসিপি (লন্ডন)। এই ‘বিশেষ অজ্ঞ চিকিৎসক’ গত সাত বছরে কুমিল্লা, মাগুরা ও সবশেষ চট্টগ্রামে তিনবার গ্রেপ্তার হয়েছেন। কারাগারে ছিলেন দেড় বছর। প্রতিবারই কারাগার থেকে বের হয়ে এসে আবারও জড়িয়ে পড়েন ভুয়া পেশায়। জানা গেছে, খোরশেদ আলম বেশ কিছুদিন ধরে উত্তর কাট্টলীর কর্নেল জোন্স সড়কের কাট্টলী ফার্মেসিতে বসে

নিজেকে নিউরোমেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও এমডিসহ (নিউরোলজি) বিভিন্ন ডিগ্রিধারী পরিচয় দিয়ে রোগী দেখে আসছিলেন। রোগীপ্রতি তিনি ৫০০ টাকা করে নিতেন।

আকরব শাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ জহির হোসেন আমাদের সময়কে বলেন, আমরা এক ভুয়া ডাক্তারকে গ্রেপ্তার করেছি। তিনি ছয় মাস ধরে এখানে ফার্মেসিতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নাম দিয়ে রোগী দেখছিলেন। এ ধরনের অপরাধের কারণে এর আগেও তিনি গ্রেপ্তার ও কারাভোগ করেছেন। পুলিশ বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে।

মিথ্যা পরিচয়ে চিকিৎসাসেবার নামে প্রতারণা এই প্রথম নয় খোরশেদের। এর আগে মাগুরায় স্থানীয় এক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিউরোমেডিসিন এবং মেডিসিন ও স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ হিসেবে দুই মাস ধরে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। ২০১৭ সালের এপ্রিলে সেখানে ধরা পড়ার পর ভ্রাম্যমাণ আদালত এই ভুয়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে এক বছরের কারাদ- দেন। মাগুরার জেল থেকে বের হয়ে খোরশেদ চলে আসেন চট্টগ্রামে। বাড়িও তার চট্টগ্রামেই। নগরীর পাঁচলাইশ এলাকার আবদুর রহিমের ছেলে তিনি।

২০১৩ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ভ্রাম্যমাণ আদালত কুমিল্লার ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালিয়ে খোরশেদ আলমকে আটক করেন। ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক ভুয়া চিকিৎসক হিসেবে তাকে ছয় মাসের কারাদ- ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

কাট্টলী ফার্মেসি ছাড়াও নগরীর ডাক্তারপাড়া বলে পরিচিত জামাল খানের আল্ট্রা অ্যাসে নামের একটি ডায়গনস্টিক সেন্টারেও তিনি রোগী দেখছেন বলে তার ভিজিটিং কার্ডে লেখা আছে। তবে পুলিশের হাতে ধরা পড়ার পর তার রোগী দেখার সিরিয়াল দেওয়ার জন্য যে মোবাইল ফোন নম্বরটি দেওয়া হয়েছে, সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা করোনা মেডিসিন ব্যাংকের উদ্যোক্তা লায়ন ডা. মেসবাহ উদ্দিন তুহিন বলেন, আমরা তার পরিচয় নিশ্চিন্ত হয়ে পুলিশকে খবর দিই। পুলিশ তার বিভিন্ন সনদ দেখতে চাইলে তিনি দেখাতে পারেননি। ডাক্তারদের সংগঠন বিএমআই-এর রেজিস্ট্রেশনও ছিল না। চিকিৎসাসেবার মতো মহৎ একটি পেশাকে অষ্টম শ্রেণি পাস একজন প্রতারক কীভাবে নিচে নামিয়েছেন। তার কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত।