ঢাকা বৃহঃস্পতিবার, ২রা মে ২০২৪, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১


বিএমইটি জিম্মি দুর্নীতিবাজ এক সহকারী পরিচালকের কাছে!


১৮ জুন ২০২১ ০৬:৩১

আপডেট:
১৮ জুন ২০২১ ০৬:৪৯

জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) ১৯৭৬ সালে তৎকালীন “জনশক্তি উন্নয়ন ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের” সংযুক্ত বিভাগ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে এর কর্মযাত্রা শুরু করে। বৈদেশিক কর্মসংস্থানে অভিবাসী কর্মী নিয়োগ ও প্রেরণের লক্ষ্যে এ ব্যুরো প্রতিষ্ঠিত হয়।

বর্তমানে বিএমইটি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনে অভিবাসন ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানে নিয়োগ প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধানে অভিবাসী কর্মীদের অধিকার সংরক্ষণ ও দক্ষতা প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের অধিকতর সুযোগ সৃষ্টি করে দেশের কর্মোপযোগী জনগোষ্ঠীকে যথাযথভাবে কাজে লাগানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

অভিবাসী কর্মী চাকুরী অন্বেষী ও সংশ্লিষ্ট অংশীজনের জন্য প্রয়োজনীয় সকল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিএমইটি ব্যাপক অবদান রেখে চলেছে। কিন্তু সরকারের এই লাভজনক ও জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানকে কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কিছু রিক্রটিং লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান মিলে বিশাল এক অদৃশ্য সিন্ডিকেট করে প্রতিষ্ঠানটিকে দুর্নীতির এক নরকে পরিনত করেছে। এইসব  নামধারী প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স থাকা স্বত্ত্বেও কর্মী রিক্রুট না করে কেবল ম্যানপাওয়ার প্রসেসিং করে কোটি কোটি টাকা অবৈধ পথে আয় করেছে।

কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে মিশে এইসব প্রতিষ্ঠান কর্মকর্তাদের দিয়ে নিয়মিত বৈধ পথে রিক্রুটমেন্ট করে এমন প্রতিষ্ঠানের ফাইলগুলোকে কোয়ারী দিয়ে দিনের পর দিন হয়রাণীর মাধ্যমে কৃত্তিম সংকট সৃষ্টি করে। পক্ষান্তরে কর্মকর্তাদের মনোনীত সেসব লাইসেন্সে একই ক্যাটাগরির ফাইল অনুমোদন হয়। কিন্তু বৈধ পথে যেসব রিক্রুটিং এজেন্সী কাজ করে, উপায়ন্তর না পেয়ে তারা অতিরিক্ত টাকা দিয়ে কর্মকর্তাদের মনোনীত ফাইলে উপস্থাপন করতে বাধ্য হয়। এই সিন্ডিকেট এতই শক্তিশালী যে কোন ডিরেক্টর বা ডিজি কথা না শুনলে বা ডিষ্ট্রাব করলে মন্ত্রণালয়ে গিয়ে ঐসব কর্মকর্তা/রি-এজেন্সীর মালিকগণ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিভিন্নভাবে দুর্নাম ছড়িয়ে তাদের অবস্থা নাস্তানাবুদ করে তোলে এবং মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য রিক্রুটিং সংগঠনগুলোকেও তাদের সম্পর্কে নেগেটিভ বার্তা প্রদান করে। যাতে করে ডিজি/ডিরেক্টর বা অন্যান্য কর্মকর্তারা ঐ সিন্ডিকেটের সম্বন্ধে একটা শক্তিশালী নেগেটিভ বার্তা গ্রহণ করে।

ফলে একটা পর্যায়ে ডিজি চুপ হয়ে যায় অথবা ডিরেক্টরকে বদলি করা হয়। উক্ত সিন্ডিকেট বিএমইটিকে এমন একটা বলয় সৃষ্টি করে রেখেছে যে ঐ সিন্ডিকেট ভেদ করে কোন ডিজি/ডিরেক্টর এর পক্ষে ভালো কাজ করে সুনাম কুড়ানোর কোন সুযোগ বিএমইটিতে নেই।

উল্লেখ্য নূরুল ইসলাম বিএসসি মন্ত্রী থাকাকালীন এই সিন্ডিকেটের প্রধান সমন্বয়ক তৎকালীন সময়েও মূল সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেছেন। ঐ সমন্বয় বিএমইটির একজন সহকারী পরিচালক। কিন্তু বিএমইটির এমন কোন কর্মকর্তা/কর্মচারী নেই যে তাকে সমীহ করে চলে না। কারণ তাহার আছে একটি বিশাল পলিটিক্যাল বাহিনী।

ঢাকা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা তাকে সেল্টার দিয়ে থাকেন। তাহার ভয়ে কেউ টু-শব্দটা করে না। বিগত ০১/০৬/২০২১ ইং তারিখে বিএমইটির ডিজি শামশুল আলমের মেয়াদ শেষ হলে তিনি এলপিআরে চলে যান। কিন্তু শামশুল আলম সাহেবকে ম্যানেজ করে বিভাগীয় অফিসের দায়িত্বে থেকেও অতিরিক্ত দায়িত্বে বহির্গমন শাখায় স্থানান্তর হয়ে প্রথমে বহির্গমনের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিয়ে নেন উক্ত সহকারী পরিচালক। পরবর্তীতে দুবাইয়ের অসত্যায়িত কাজ থেকে শুরু করে সৌদি আরব, ওমান ও ইউরোপের সকল অবৈধ কাজ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এককভাবে নিজে নিয়ন্ত্রণ করেন। তবে তৎকালীন ডিরেক্টর তাদের এইসব অবৈধ কাজে বাধা হয়ে দাড়ান এবং তাদের চুরি ধরার জন্য প্রত্যেকটা ফাইল নিজে চেক করে থাকেন। সঙ্গত কারণে ডিরেক্টর তাদের রোষানলে পড়ে বহির্গমন শাখা থেকে বদলী হয়ে অন্য শাখায় স্থানান্তর হয়ে যান। ডিজিকে ভুলভাল বুঝিয়ে তাদের স্বার্থ হাসিল করেন।

উল্লেখ্য তৎকালীন ডিরেক্টরকে তারা বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকিও দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয় যুবলীগের এক নেতাকে দিতে ডিরেক্টরের কাছে চাঁদা দাবী করেন। ডিরেক্টর চাঁদা অস্বীকৃতি জানালে তারা আরও ক্ষুব্ধ হয়ে যায়। একজন এডি হয়ে তিনি এতো ক্ষমতা কোথায় পান তা নিয়ে প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের।। বগুড়া বাড়ী হওয়ায় সরকারের বিভিন্ন সমালোচনা করতেও তিনি পিছপা হন না। বর্তমান ডিজি শহীদুল আলম নিয়োগ পাওয়ার পরে দ্বিগি¦দিক ছোটাছুটি করছেন তাহার অনুকম্পা পাওয়ার জন্য। যেকোন সময় হয়ত বর্তমান ডিজিকে ম্যানেক করে পুরোদমে আবার তাদের অবৈধ কার্যক্রম শুরু করবে বলে অন্যান্য বৈধ এজেন্সীর মালিকদের বিশ্বাস ও আতঙ্কের ব্যাপার।

বিশেষজ্ঞদের মতে সিন্ডিকেট প্রথা বাতিল না হলে বৈধ যাত্রীগণ হেনস্তার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং সরকারের রেমিটেন্সের অন্যতম এই খাতে যেকোন সময় ধস নামতে পারে।

উল্লেখ থাকে যে, বর্তমান ডিজি জনাব শহিদুল আলম সাহেব বিএমইটির ডিজি যাতে না হতে পারে সেই জন্য উক্ত সিন্ডিকেটের হোতা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে উড়োচিঠি প্রেরন করেন। কারন তাদের মনোনীত প্রবাসী কল্যান মন্ত্রণালয়ের আরেক এডিশনাল সেক্রেটারীর ডিজি হওয়ার জন্য ব্যাপক চেষ্টা তদবির করেন এবং প্রচুর ইন্ভেস্টমেন্ট করেন। তারা বিএমইটিতে এহেন কোন অপকর্ম নেই যা তারা করেননি।