ঢাকা শুক্রবার, ১৭ই মে ২০২৪, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


অনার্সে দ্বিতীয় শ্রেণি, এক বিষয়ে ফেল করেও শিক্ষক


১০ জুন ২০২১ ১৮:০৭

আপডেট:
১৭ মে ২০২৪ ১২:৪৪

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম আবদুস সোবহান বিদায়বেলায় যে ১৩৭ জনকে এডহকে নিয়োগ দিয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন ১১ শিক্ষক। এই ১১ শিক্ষকের মধ্যে অনেকেরই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রকৌশল অনুষদভুক্ত ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে নিয়োগ পাওয়া ইন্দ্রনীল মিশ্রর একাডেমিক ফল প্রকাশ হওয়ার পর অনেকেই হতবাক। স্নাতক পরীক্ষার ফলাফলে দ্বিতীয় শ্রেণি পাওয়াদের মধ্যে মেধাক্রমে ১০ নম্বরে থাকা ইন্দ্রনীল একটি কোর্সে ফেলও করেছিলেন। এমন একজন ছাত্রকে বিভাগে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ায় বিস্মিত স্বয়ং বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক এমদাদুল হক।

দীর্ঘদিনের রীতি অনুযায়ী সাধারণত প্রথম শ্রেণিতে প্রথম অথবা মেধাক্রমে এর আশপাশে থাকা শিক্ষার্থীরাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে থাকেন। কিন্তু ইন্দ্রনীল মিশ্র স্নাতক (অনার্স) পরীক্ষায় পেয়েছিলেন দ্বিতীয় শ্রেণি। তার স্নাতক পরীক্ষার ফলাফলের একটি অনুলিপি দেশ রূপান্তরের হাতে এসেছে। সেখানে দেখা যায়, ইন্দ্রনীল মিশ্র স্নাতক পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণি অর্জন করতে পারেননি। দ্বিতীয় শ্রেণি পেয়ে যে ১৪ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হন তার মধ্যে ইন্দ্রনীল মিশ্র মেধাক্রম অনুযায়ী রয়েছেন দশম স্থানে। শুধু তাই নয়, তিনি স্নাতক পরীক্ষার কোর্স-৪০৩ এ ফেলও করেছিলেন। এমন একজন ছাত্রকে বিভাগে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক এমদাদুল হক।

তিনি  বলেন, ‘বিভাগে নিয়োগের জন্য সার্কুলার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই সার্কুলারের ভিত্তিতে মৌখিক পরীক্ষা না নিয়েই একজন প্রার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমাদের সার্কুলার বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী দেওয়া হয়েছে। সেখানে আবেদনকারীর স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ডিগ্রি থাকতে হবে বলা হয়েছে। এছাড়া ভাইভা পরীক্ষা নিয়ে একজন প্রার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু ইন্দ্রনীলের ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। এমন একজনকে নিয়োগ দেওয়া হলো যে কোনোভাবেই শিক্ষক পদে কাম্য নয়। ঊর্ধ্বতন কর্র্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখছে। যদি এটা বাতিল হয়, তবে বিভাগের জন্য যেমন মঙ্গল হবে, সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্যও মঙ্গল হবে।’

অধ্যাপক এমদাদুল আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের সার্কুলারে প্রথম শ্রেণি থাকতে হবে এমন বলা থাকে না। তবে যারা আবেদন করবে তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে হবে। এই নিয়ম অনুযায়ী ইদ্রনীল মিশ্রের শিক্ষক হওয়ার যোগ্যতা নেই।’

ফলাফল শিটে দেখা যায়, ইন্দ্রনীল মিশ্রের বিএসসি (অনার্স) পরীক্ষার রোল নম্বর ছিল-০৬১১৫৬২২। তিনি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। ২০০৯ সালের বিএসসি (সম্মান) ফাইনাল পরীক্ষায় (২০১০ সালে সেপ্টেম্বর-নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত) দ্বিতীয় শ্রেণি পেয়ে উত্তীর্ণ হন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা  জানান, ইন্দ্রনীল মিশ্রের বাবা অধ্যাপক চিত্ত রঞ্জন মিশ্র রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালকের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।

ইন্দ্রনীল মিশ্রের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার বিষয়ে কথা বলতে তিনি এবং তার বাবা অধ্যাপক চিত্ত রঞ্জন মিশ্রের মোবাইল ফোন নম্বরে গতকাল বুধবার বিকেলে বেশ কয়েকবার কল করা হলেও তারা রিসিভ করেননি।

এ প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, ‘এমন প্রার্থীকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া বিস্ময়কর। এটা শিক্ষা মন্ত্রণালয় দেখভাল করছে। তাদের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে আমরা পরবর্তী সময়ে তাদের যোগদান করতে দেব কিনা সেটা জানাতে পারব।’