ঢাকা শুক্রবার, ১৭ই মে ২০২৪, ৪ঠা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


পানি উত্তোলনের আগেই বিএডিসির অর্ধকোটি টাকার সেচপাম্প অকেজো!


৯ জুন ২০২১ ১৯:১৩

আপডেট:
১৭ মে ২০২৪ ০৯:১০

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে চরাঞ্চলে নির্মিত বিএডিসির সেচপাম্প দুটির একটি নদীগর্ভে অন্যটি অচল হয়ে পড়ে আছে। সেচপাম্প দিয়ে পানি উত্তোলন না করায় সরকারের অর্ধকোটি টাকা জলে চলে গেছে বলে অভিমত স্থানীয়দের।

এদিকে সেচপাম্প দুটির বর্তমান অবস্থার বিষয়ে জানেন না জেলা বিএডিসি নির্বাহী প্রকৌশলী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সেচপাম্প কমিটির সভাপতি।

সরেজমিনে উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের ছোট নলছিয়া এলাকায় দেখা গেছে, সেখানকার প্রায় ১২০ একর জায়গা নিয়ে বিএডিসি সেচপাম্প নির্মাণ করেছে। সেচপাম্পের জন্য মেশিন রাখার ঘর, দুটি হিটার ট্যাংক, মাটির নিচ দিয়ে পাইপ স্থাপন ও বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বের হওয়ার জন্য আউটলেট স্ট্রাকচার নির্মাণ করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত মাটিতে বোরিং (পানি উত্তোলনের জন্য) করা হয়নি।

এ ছাড়া একই ইউনিয়নের চরচন্দনী এলাকায় একইভাবে আরেকটি সেচপাম্প স্থাপন করা হয়েছিল। তবে সেই সেচপাম্পের মেশিন ছাড়া বাকি স্থাপনা নদীগর্ভে চলে গেছে। ফলে দুইটি এলাকায় সেচপাম্প নির্মাণ করা হলেও এর সুফল পায়নি চরাঞ্চলের কৃষকরা। জমিতে পানি দেওয়ার জন্য কৃষকরা নিজস্ব উদ্যোগে মেশিন স্থাপন করে চাষাবাদ করছেন।

জেলা কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (ক্ষুদ্রসেচ) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে জেলার ভূঞাপুর উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নে চরাঞ্চল কর্মসূচি প্রকল্পের আওতায় প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে দুটি সেচপাম্প নির্মাণ করে বিএডিসি। ওই ইউনিয়নের চরচন্দনী গ্রামের আব্দুল বারেক ওরফে বারেক নেতা ও তার ভাই ছোট নলছিয়া গ্রামের আব্দুর রহমান রবির নামে সেচপাম্প পরিচালিত হয়।

এর আগে ওই দুই কৃষক বিএডিসিতে ছয় হাজার টাকা করে জমানত হিসেবে জমা দেয়। পরে সেই সময় পানি উত্তোলনের জন্য মাটির নিচ দিয়ে পাইপ স্থাপনসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করে বিএডিসি। কিন্তু পরবর্তীতে পানি উত্তোলনের জন্য বোরিংয়ের কাজ বাকি রাখা হয়। এরপর যমুনা নদীর ভাঙনে চরচন্দনী এলাকার সেচপাম্পটি ভেঙে নদীগর্ভে চলে যায়।
বাকি থাকে ছোট নলছিয়া এলাকার সেচপাম্পটি। কিন্তু দীর্ঘ দিনেও সেচপাম্প সচলের উদ্যোগ নেয়নি জেলা বিএডিসি। ফলে সেচপাম্পটি সেখানে অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। আর সেচপাম্পের মেশিন দুইটি স্ব স্ব কৃষকের বাড়িতে পরিত্যক্ত ঘরে ফেলে রাখা হয়েছে। তবে সরকারের বিপুল টাকা ব্যয়ে সেচপাম্প দুটি স্থাপন করা হলেও এর সুফল না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় কৃষকরা।

গাবসারার ছোট নলছিয়া গ্রামের শফিকুল ইসলাম বলেন, সরকার বিপুল টাকা ব্যয়ে চরাঞ্চলের কৃষকদের জন্য সেচপাম্প নির্মাণ করেছে। এখন পর্যন্ত সেচপাম্প দিয়ে পানি উত্তোলন হয়নি। যাদের নামে সেচপাম্প তারা মেশিন নিয়ে বাড়িতে রেখে দিয়েছে।

কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, কৃষকদের সুবিধার জন্য সেচপাম্প করেছে। মাটির নিচ দিয়ে পাইপও বসিয়েছে। কিন্তু নির্মাণের ৬ বছর পার হলেও এখনো পানি উত্তোলন হচ্ছে না সেচপাম্প দিয়ে। এতে সরকারের লাখ লাখ টাকা গচ্ছা গেছে। কৃষকদের কোনো লাভ হয়নি। সেচপাম্প চালু থাকলে চরাঞ্চলের মানুষ কম খরচে আবাদ করতে পারত।
কৃষক শহীদ আকন্দ বলেন, সেচপাম্প স্থাপন হয়েছে ঠিকই কিন্তু এখন পর্যন্ত পানি উত্তোলন হয়নি। ফলে এর সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। তবে বোরিং করাসহ সেচপাম্পটি চালুর করার জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাই।

সেচপাম্প পাওয়া আব্দুর রহমান রবি বলেন, বিএডিসিতে ৬ হাজার টাকা জমা দিয়ে সেচপাম্প নেওয়া হয়েছিল। এটির বোরিং বাদ দিয়ে সব কিছুই করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে বিএডিসি থেকে কোনো কর্মকর্তা বা কেউ যোগাযোগ না করায় সেটি অচল হয়ে পড়ে রয়েছে। সেচপাম্পের মেশিনটি বাড়িতে রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমার ভাইয়ের নামেও একটি সেচপাম্প রয়েছে। কিন্তু সেটি ভাঙনে নদীগর্ভে চলে গেছে। তবে মেশিন তার বাড়িতেই রয়েছে।

কালিহাতী উপজেলার বিএডিসির মেকানিক সজিব মিয়া বলেন, সেচপাম্প স্থাপনের বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য নেই তার কাছে। ডিজেল তেলের মাধ্যমে সেচপাম্প চালু করার জন্য ২০১৪-১৫ অর্থবছরে স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে মেশিন পরিচালনা ব্যয়বহুল হওয়ায় এটি আর চালু করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে ময়মনসিংহের নতুন একটি প্রজেক্টের মাধ্যমে সেচপাম্পটি বিদ্যুতের মাধ্যমে চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ রকম আরও দুটি সেচপাম্প ভূঞাপুর উপজেলায় অচল হিসেবে রয়েছে।

চরাঞ্চলে সেচপাম্প এর বিষয়ে কোনো তথ্য জানা নেই। আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম সেখানে বিএডিসির সেচপাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এ বিষয়ে জেনে এবং সরেজমিন পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মোছা. ইশরাত জাহান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা বিএডিসির সেচপাম্প সমিতির সভাপতি
জেলা কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (ক্ষুদ্রসেচ) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. কায়সার আহমেদ মুন্সী বলেন, সেচপাম্পের বিষয়টি জানা নেই। এ ধরনের কোনো তথ্য আমার কাছে নেই।