ঢাকা সোমবার, ২৫শে আগস্ট ২০২৫, ১০ই ভাদ্র ১৪৩২


সিংহ বাড়ায় ভারতে শঙ্কিত সংরক্ষণবিদরা


প্রকাশিত:
১৬ জুলাই ২০২৫ ১৩:৪০

ছবি : সংগৃহীত

ভারতের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য গুজরাটের বন বিভাগ ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের পর দেশের প্রথম সিংহ গণনার ফল প্রকাশ করে গত ২১ মে। ওই জরিপ অনুযায়ী, গুজরাটেই বন্যসিংহের সংখ্যা গত পাঁচ বছরে ৩২ শতাংশ বেড়ে ৮৯১-এ পৌঁছেছে।

ভারতের সিংহ সংরক্ষণ বহুদিন ধরেই গির অরণ্য ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকাকে কেন্দ্র করে পরিচালিত হয়ে আসছে, বিশেষ করে ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দে গির ন্যাশনাল পার্ক এবং স্যাংচুয়ারি গঠনের পর থেকে।

এখন গিরের বাইরের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে ১১টি জেলায় স্থায়ীভাবে বসতি গড়েছে সিংহ।

প্রথমবারের মতো শুমারিতে দেখা গেছে, গিরের মূল এলাকার (৩৯৪টি) চেয়ে অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়া সিংহের সংখ্যাই (৪৯৭টি) বেশি। এসব এলাকার মধ্যে গির সংলগ্ন বারদা ওয়াইল্ডলাইফ স্যাংচুয়ারি, জেটপুর শহরের আশপাশের এলাকা এবং বাবরা ও জাসদান শহরের আশপাশের নতুন তিনটি সম্প্রদায় অন্তর্ভুক্ত।

বড় বিড়ালের সংরক্ষণে বিশেষজ্ঞ যাদবেন্দ্রদেব ঝালা বলেন, ‘যতক্ষণ খাদ্য এবং আশ্রয় থাকবে, এবং মানুষ আক্রমণ করবে না, ততক্ষণ সিংহের সংখ্যা বাড়তেই থাকবে। খাদ্য হিসেবে রয়েছে গবাদি পশু, মৃত পশুর দেহ, এবং বুনো গরু।‘

নতুন শুমারিতে দেখা গেছে, উপকূলবর্তী ভাভনগর জেলা ও সংলগ্ন এলাকায় ২১২টি সিংহ রয়েছে। উপকূলের কাঁটাযুক্ত এক ধরনের বিশেষ গাছ দিনে আশ্রয় এবং রাতে কৃষি জমিতে খাবার খুঁজতে সিংহ কাজে সহায়তা করছে বলে জানান ঝালা।

২০১০ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে গুজরাটে সিংহের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। তাদের পরিসর ৭৫% বৃদ্ধি পেয়ে ২০,০০০ থেকে ৩৫,০০০ বর্গকিলোমিটার হয়েছে। অথচ এর মধ্যে মাত্র ১,৮০০ বর্গকিলোমিটার সংরক্ষিত এলাকা, যার মধ্যে শুধু সিংহের এলাকা মাত্র ২৫০ বর্গকিলোমিটার। গণনা অনুযায়ী, ৪৫% সিংহ বনভূমির বাইরে, যেমন- পতিত জমি, কৃষিজমি, মানুষের বাসস্থানের কাছে ঘুরে বেড়ায়।

বিশিষ্ট জীববিজ্ঞানী রবি চেল্লাম বলেন, ‘সিংহের খোলা কূপে পড়ে যাওয়া, গাড়ি বা ট্রেনে চাপা পড়া, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া এবং সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। সিংহকে বাড়ির ছাদ, হোটেলের বেসমেন্ট পার্কিং, ব্যস্ত হাইওয়েতে দেখা গেছে।‘ চেল্লামের মতে, এই অঞ্চল বহুলাংশে ধারণক্ষমতা ছাড়িয়ে গেছে।

এ নিয়ে উদ্বেগে ঝালাও একমত—মানুষ তাদের সঙ্গে সিংহের সহাবস্থান কতটা সহ্য করবে!

কনজার্ভেশন বায়োলজি জার্নালে প্রকাশিত এক সমীক্ষা বলছে, প্রতি বছর গুজরাটের গ্রামগুলোতে গবাদিপশু আক্রমণের ঘটনা ১০% এবং মৃত গবাদি পশুর সংখ্যা ১৫% হারে বাড়ছে।

ঝালা বলেন, ‘একটি বড় মাংসাশী প্রাণীর সঙ্গে থাকা সহজ নয়। বাচ্চাদের রাতে মাঠে যেতে দেয়া যায় না, ঘরের কাছে জঙ্গল পরিষ্কার করতে হয়, সন্ধ্যায় বাইরে শৌচকর্ম এড়াতে হয়, গবাদিপশুর জন্য প্রাচীরওয়ালা ঘর প্রয়োজন।‘

চেল্লামের কথায়, ‘সংখ্যা বৃদ্ধিকে সরকার ইতিবাচকভাবে দেখলেও, বাস্তবে এর ফলে সিংহ ও মানুষের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।‘

প্রথমবারের মতো বারদা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে ১৭টি সিংহের বসতি হয়েছে। তবে চেল্লাম ও ঝালা বলেন, এর আকার ও গিরের কাছাকাছি অবস্থানের কারণে এটি প্রকৃতপক্ষে সিংহের স্বতন্ত্র সংখ্যাকে প্রকাশ করে না।

গুজরাটের বাইরে কেন সিংহ পাঠানো হচ্ছে না— এই প্রশ্নে ভারতের সুপ্রিম কোর্টও হতাশ। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে শীর্ষ আদালত গুজরাট সরকারকে মধ্যপ্রদেশের কুনো ন্যাশনাল পার্কে সিংহ স্থানান্তরের নির্দেশ দেয়। কিন্তু ১২ বছর পরও সেই নির্দেশ কার্যকর হয়নি।

চেল্লামের মতে, গুজরাটে সিংহের একক উপস্থিতি রীতিমতো যেন ‘টাইম বম্ব’! তিনি বলেন, ‘মানুষের বসতির মধ্যে সিংহের সংখ্যা এভাবে বাড়া বিপজ্জনক। সরকারকে এখনই স্বীকার করতে হবে যে গুণগত আবাসের অভাব একটি গুরুতর সমস্যা।‘