ঢাকা শনিবার, ৫ই জুলাই ২০২৫, ২২শে আষাঢ় ১৪৩২


গাজা যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে ইতিবাচক হামাস


প্রকাশিত:
৫ জুলাই ২০২৫ ১০:৪৬

উত্তর গাজার আল-শাতি শরণার্থী শিবিরে ইসরায়েলি হামলা ধ্বংস হয়ে যাওয়া ভবনগুলোর দিকে তাকিয়ে আছেন এক ফিলিস্তিনি যুবক। ছবি: রয়টার্স

স্বাধীনতাকামী ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস জানিয়েছে, গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া সর্বশেষ প্রস্তাবের ব্যাপারে তারা মধ্যস্থতাকারীদের কাছে ‘ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া’ পাঠিয়েছে।

যত দ্রুত সম্ভব আলোচনার নতুন পর্বে অংশ নিতে আমরা আন্তরিকভাবে প্রস্তুত, বিবৃতিতে তারা এমনটাই বলেছে।

ঊর্ধ্বতন এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেছেন, হামাস প্রস্তাবের রূপরেখার সঙ্গে একমত হলেও সেখানে কিছু সংশোধনী আনারও অনুরোধ করেছে। এর মধ্যে আছে- ২০ মাস ধরে চলমান যুদ্ধ স্থায়ীভাবে বন্ধের আলোচনা যদি ব্যর্থ হয় তাহলেও যেন সংঘাত পুনরায় শুরু না হয় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তার নিশ্চয়তা চেয়েছে তারা।

এ প্রসঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে আগে এ ধরনের দাবি মানতে তেল আবিব ও ওয়াশিংটন অনীহা দেখিয়েছিল।

মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, ইসরায়েল ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য ‘প্রয়োজনীয় শর্তাবলী’ মেনে নিয়েছে। ওই যুদ্ধবিরতির মধ্যেই বিবদমান পক্ষগুলো যুদ্ধের ইতি টানতে কাজ করবে। তিনি হামাসকে তার ভাষায় ‘ফাইনাল’ বা ‘চূড়ান্ত’ প্রস্তাব মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান এবং ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীটিকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “তারা এর চেয়ে ভালো কিছু পাবে না, দিন দিন পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।”

নতুন এ প্রস্তাবে জীবিত ১০ জিম্মি ও মৃত ১৮ জিম্মির মরদেহের বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির শর্ত আছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। জীবিত-মৃত মিলিয়ে গাজায় এখন ৫০ জিম্মি আছে বলে ধারণা, তার মধ্যে অন্তত ২০ জন জীবিত আছে বলে আশা তেল আবিবের। প্রস্তাবে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির তত্ত্বাবধানে গাজায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ সরবরাহে অনুমতি দেওয়ার কথাও আছে বলে জানা গেছে। এই ত্রাণ কেবল জাতিসংঘ ও তার অংশীদাররাই সরবরাহ করতে পারবে এবং ইসরায়েল পরিচালিত ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) বিতর্কিত ত্রাণ বিতরণ পদ্ধতি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে বলে হামাস দাবি জানিয়েছে, বলেছেন ফিলিস্তিনি ওই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।

প্রস্তাবে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ যে সংশোধনী চেয়েছে হামাস, সেটি হচ্ছে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার। মার্কিন প্রস্তাবে গাজার উত্তর ও দক্ষিণ অংশ থেকে ধাপে ধাপে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে বলে আন্দাজ করা হচ্ছে। কিন্তু হামাস চাইছে, মার্চে আগের যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়ার পর আগে ইসরায়েলি বাহিনী যেখানে ছিল, সেনারা এখনই যেন সেখানে ফিরে যায়, বলছেন ওই কর্মকর্তা।

ফিলিস্তিনি এ কর্মকর্তা জানান, স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আলোচনা ব্যর্থ হলে আকাশ ও স্থলপথে ইসরায়েলি অভিযান যেন ফের শুরু না হয় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তার নিশ্চয়তাও চাইছে হামাস।

মার্কিন প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতির প্রথম দিন থেকে যুদ্ধ বন্ধে আলোচনা শুরুর কথা বলা হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু অবশ্য আগে সব জিম্মি মুক্তির আগে এবং হামাসের সামরিক ও সরকার পরিচালনার সক্ষমতা ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ বন্ধের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছিলেন। শুক্রবার যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল যখন হামাসের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় তখনও তেল আবিবের সেনারা গাজা ভূখণ্ডজুড়ে বোমাবাজি অব্যাহত রেখেছে। শুক্রবার বিকালে গাজার হামাস-পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, ইসরায়েলি হামলায় ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে খবর পেয়েছে তারা।

আগের রাতে গাজার দক্ষিণের খান ইউনিসে উদ্বাস্তুদের আশ্রয় দেওয়া দুটি তাঁবুতে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১৫ জন নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় নাসের হাসপাতাল। এ নিহতদের মধ্যে আছে ১৩ বছর বয়সী মায়ার আল-ফারের ভাই মাহমুদও। “যুদ্ধবিরতি তো আসবে, কিন্তু আমি যে ভাইকে হারালাম? ভাই হারানোর আনে আগেই তো যুদ্ধবিরতি হওয়া উচিত ছিল,” ভাইয়ের শেষকৃত্যে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন মায়ার।

ইসরায়েলি হামলায় ভাতিজা আশরাফকে হারানো আদলার মুয়ামার বলেছেন, “আমাদের হৃদয় ভেঙে গেছে। আমরা চাই তারা রক্তপাত থামাক, যুদ্ধ বন্ধ হোক।”

এসব হামলার বিষয়ে এখন পর্যন্ত ইসরায়লি সামরিক বাহিনীর কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে আগে এমন ক্ষেত্রে তারা বলেছিল, তাদের বাহিনী ‘হামাসের সামরিক সক্ষমতা চুরমার করে দিতে অভিযান চালাচ্ছে’।