ঢাকা মঙ্গলবার, ২০শে মে ২০২৫, ৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২


৫৭ ঘণ্টা অনশনের পর কুয়েটের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যকে অব্যাহতি


২৪ এপ্রিল ২০২৫ ১১:৩১

আপডেট:
২০ মে ২০২৫ ০৪:৩০

উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে লাশের খাটিয়া নিয়ে মিছিল করেন কুয়েটের শিক্ষার্থীরা। ছবি: সংগৃহীত 

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ এবং উপ-উপাচার্যকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের টানা ৫৭ ঘণ্টার অনশনের পর এ ঘোষণা দেওয়া হয়। ঘোষণায় অনশন ভেঙে আনন্দ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল বুধবার দিবাগত রাত ১টার পর তাঁরা অনশন ভাঙেন।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মামুন অর রশিদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যের অব্যাহতির বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। অব্যাহতির খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এ সময় অনশনরত শিক্ষার্থীদের জুস খাইয়ে অনশন ভাঙান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা।

শিক্ষার্থীরা এ সময় ‘আমাদের বিজয় হয়েছে’, ‘সত্য কখনো হারে না!’ , ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’, ‘উপাচার্যের পদত্যাগ নয়, পতন হয়েছে’ ইত্যাদি মন্তব্যের মাধ্যমে গণমাধ্যমের কাছে আনন্দ প্রকাশ করেন। পরে তাঁরা ক্যাম্পাসে একটি আনন্দ মিছিল বের করেন।

এর আগে গতকাল বুধবার রাতেই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে কুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শরিফুল ইসলামকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মামুন অর রশিদ গণমাধ্যমের কাছে বিবৃতিটি পাঠান। এতে বলা হয়, ‘খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত সংকট নিরসন এবং শিক্ষা কার্যক্রম দ্রুত শুরু করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। অনতিবিলম্বে একটি সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে এ দুটি পদে নতুন নিয়োগ প্রদান করা হবে।’

প্রসঙ্গত, ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্রদল-যুবদল কর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষে শতাধিক আহত হয়। এরপর ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম ও হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

তবে ১৩ এপ্রিল শিক্ষার্থীরা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন। পরে ১৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।

এই পরিস্থিতিতে কুয়েটের ৩২ জন শিক্ষার্থী উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে ২২ এপ্রিল থেকে আমরণ অনশনে বসেন। শিক্ষা উপদেষ্টা ও মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দল অনশন ভাঙাতে গেলেও ব্যর্থ হন। আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও উপাচার্যের পদত্যাগের আলটিমেটাম দেন। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সভায় ৩৭ শিক্ষার্থীর সাময়িক বহিষ্কার প্রত্যাহার এবং হলগুলোতে খুলে দেওয়া হয়।

এর আগে, প্রফেসর অধ্যাপক ড. মাছুদ নিজে থেকে পদ ছাড়তে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, ‘সরকার চাইলে পদ ছাড়ব, নিজে থেকে নয়।’ শেষ পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকেই তাঁকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম বজায় রাখার স্বার্থে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের মধ্য থেকে একজনকে সাময়িকভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব দেওয়া হবে। একই সঙ্গে শিগগিরই স্থায়ী নিয়োগের জন্য সার্চ কমিটি গঠনের প্রস্তুতিও চলছে।