ঢাকা মঙ্গলবার, ১১ই ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৯শে মাঘ ১৪৩১


ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এর সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত


১৭ জানুয়ারী ২০২৫ ২১:২৩

আপডেট:
১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০১:২১

বাংলাদেশ বর্তমানে একটি সংকটময় মুহূর্ত ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যার মূল কারণ হলো; সীমিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, আমদানি খরচ বৃদ্ধি, উচ্চ জ্বালানি ব্যায়, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ঋণ প্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতা সহ উচ্চ সুদহার। তাছাড়া বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় অর্থনীতির বিদ্যমান এসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে শতাধিক পণ্যের উপর ভ্যাট বৃদ্ধি সহ বেশকিছু পণ্যের কর হার বৃদ্ধি এবং শিল্পে গ্যাসের মূল্য দ্বিগুনের বেশি বাড়ানোর উদ্যোগ আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহ সামগ্রিক অর্থনীতর জন্য আন্তঘাতী সিদ্ধান্ত বলে মনে করেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ। শনিবার ১১ জানুয়ারি, ২০২৫ ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এক ‘সংবাদ সম্মেলন’-এ তিনি দেশের সম-সাময়িক অর্থনীতির বিভিন্ন দিক উপস্থাপনকালে এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

উল্লেখ্য অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ অর্থনীতির ১১টি বিষয়বস্তুর উপর বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরার, পাশাপাশি ২০২৫ সালে ডিসিসিআই’র কর্মপরিকল্পনার উপর মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ সময় তিনি জানান, বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় অর্থনীতিতে এর প্রভাব, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, আমদানি খরচ বৃদ্ধি, উচ্চ জ্বালানি ব্যয় ও নিরবিচ্ছিন্ন জ্বালানি প্রাপ্তির অনিশ্চয়তা, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, ঋণ প্রাপ্তিতে বাঁধা ও সুদের উচ্চ হার, উচ্চ শুল্ক হার, ভ্যাট হার বৃদ্ধি এবং সর্বোপরি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি প্রভৃতি কারণে দেশের বেসরকারিখাত এমনিতেই বেশ চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। তিনি জানান, এবছর ঢাকা চেম্বার সুদের হার কমানো, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখার উপর অধিক হারে গুরুত্বারোপ করবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নত্তোরকালে তিনি বলেন, সিএসএমই খাতে ঋণ প্রাপ্তি হলেও তা কাঙ্খিত মাত্রায় নয়, এটি বাড়াতে হবে এবং এখাতের উদ্যোক্তারা যেন সহজশর্তে ও স্বল্পসুদে ঋণ পায় তা নিশ্চিতকরণের কোন বিকল্প নেই, কারণ আমাদের এসএমই খাত সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে থাকে।

অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার গৃহীত সংষ্কারের উদ্যোগের বিষয়ে তিনি বলেন, সরকার দ্রুত এ সংষ্কার কার্যক্রম লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী সম্পন্ন করবে, বেসরকারিখাতের পক্ষ হতে এটি আমরা প্রত্যাশা করছি। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ৫টি অর্থনৈতিক অঞ্চলে যদি সরকার প্রয়োজনীয় অবকাঠামো সহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়, তাহলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আরো আশাবাদী হবেন এবং বিনিয়োগ কার্যক্রম সম্প্রসারিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।

নীতির ধারাবাহিকতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদী সহায়ক কর কাঠামো প্রাপ্তি সাপেক্ষে উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে উৎসাহিত হন, সেক্ষেত্রে হঠাৎ মাঝপথে কর কিংবা শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত উদ্যোক্তাদের মাঝে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, যা মোটেই কাম্য নয়, ফলে স্থানীয় বিনিয়োগের পাশাপাশি বৈদেশিক বিনিয়োগ বাধাগ্রস্থ হয়, যা মোটেই কাম্য নয়।

এলডিসি উত্তোরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে আমরা অর্থনৈতিকভাবে মোটামোটি সঠিক পথেই অগ্রসর হচিছলাম, তবে কোডিভ মহামারী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা, স্থানীয় রাজনৈতিক অস্থিরতা পরবর্তী পট-পরিবর্তন সহ আর্থিক খাতে তারল্য সংকটের ফলে এলডিসি উত্তরণ মোকাবেলার প্রস্তুতি বেশ বাধাগ্রস্থ হয়েছে। এমতাস্থায় তিনি বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে আমরা কতটা প্রস্তুত তা নির্ধারণে সরকারি-বেসরকারি ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের মাঝে বিশদ আলোচনার ভিত্তিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যেতে পারে। বিষয়টি যদি পেছানোর প্রয়োজনীয়তা অনুভত হয়, তবে দেশের সার্বিক অর্থনীতির কথা বিবেচনায় নিয়ে সরকার এলডিসি উত্তরণে আরো কিছুটা সময় নিতে পারে এবং এলক্ষ্যে সকলের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের কোন বিকল্প নেই। তবে মনে রাখতে হবে ২০২৬ সালে আমাদের এলডিসি উত্তরণ হলে এর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ হতে বেসরকারিখাত কে সার্বিক সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে।

এমনিতেই আমাদের জিডিপিতে করের অবদান বেশ কম। এরূপ পরিস্থিতিতে বিদ্যমান অর্থনৈতিক চাপ মোকাবেলায় সরকারী ব্যয়ে কৃচ্ছতা সাধনের কোন বিকল্প নেই বলে ডিসিসিআই সভাপতি মত প্রকাশ করেন এবং সরকারকে এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। সেই সাথে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ না করা এবং এডিপি বাস্তবায়নে স্বচ্ছতার পাশাপাশি সময়মত প্রকল্প সমাপ্তিতে নজরদারি বাড়ানোর উপর জোরারোপ করেন।

উক্ত সংবাদ সম্মেলনে ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী এবং সহ-সভাপতি মোঃ সালিম সোলায়মান । এনামুল হক পাটোয়ারী সহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।