ইতালি পাচার করার সময় ভয়ংকর মাদক কিটামিন জব্দ, গ্রেফতার ২

গাজীপুরে টঙ্গীর একটি কুরিয়ার সার্ভিস থেকে ইতালিতে পাচার করার সময় টাওয়ালের মধ্যে বিশেষ কায়দায় লুকিয়ে রাখা সাড়ে ছয় কেজি ভয়ংকর মাদক কিটামিন জব্দ করেছে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি)।
এই ঘটনায় চাঁদপুর ও ফরিদপুর থেকে মাসুদুর রহমান জিলানী ও আরিফুর রহমান খোকা নামে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ডিএনসি সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএনসি’র মহাপরিচালক হাসান মারুফ।
হাসান মারুফ জানান, ডিএনসি’র গোয়েন্দা বিভাগ দীর্ঘদিন ধরে কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবহার করে মাদক পাচারের বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি করে আসছে। এই গোয়েন্দা বিভাগের তৎপরতায় বিভিন্ন সময় বেশ কিছু চালান জব্দ করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে, ডিএনসি’র কাছে গোপন তথ্য ছিল যে একটি চক্র আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবহার করে দেশের বাইরে মাদক পাচার করছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে ফেডেক্সের সার্বিক সহযোগিতায় ঢাকা থেকে ইতালীগামী একটি পার্সেল জব্দ করা হয়। পার্সেলের সার্বিক অবস্থা ও অস্বাভাবিক ওজন দেখে সন্দেহ হলে পার্সেলটি পরীক্ষা করে একটি খাকি রঙয়ের কার্টুনের ভিতর পৃথক সাতটি সাদা তোয়ালে পাওয়া যায়। ঘটনাস্থলেই ডিএনসি’র রাসায়নিক পরীক্ষক দ্বারা তোয়ালের রাসায়নিক পরীক্ষা করে দ্রবীভূত অবস্থায় ৬.৪৪ কেজি ‘ক’ শ্রেণির ভয়াবহ মাদক কিটামিন পাওয়া যায়। পরবর্তীতে জব্দকৃত পার্সেলে দেওয়া ঠিকানা, সিসিটিভি ফুটেজ ও অন্যান্য গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা চাঁদপুরের মতলব ও ফরিদপুর থেকে দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মূলত, তোয়ালে বা মোটা কাপড় ব্যবহার করে মাদক পাচার একটি গোপন কৌশল। যেখানে তোয়ালের ভেতরে গঠন পরিবর্তন করে মাদক লুকিয়ে রাখা যায়। কেমিক্যাল ইমপ্রেগনেশনে তোয়ালে মাদকের দ্রবণে ভিজিয়ে শুকানো হয়, ফলে মাদক ফাইবারে মিশে যায়। কাপড় বা তোয়ালেটি মাদক শোষণ করলে সেটি দেখতে স্বাভাবিক কাপড়ের মতোই মনে হয়, ফলে এটি সহজে শনাক্ত করা যায় না। পাচারকারীরা পরে বিশেষ কেমিক্যাল বা ল্যাব প্রসেস ব্যবহার করে ওই কাপড় থেকে পুনরায় মাদক উত্তোলন করে। এই পদ্ধতি কোকেন, হেরোইন ও কিটামিন পাচারে বেশি ব্যবহৃত হয়।
তিনি আরও জানান, কিটামিন মূলত একটি ডিসোসিয়েটিভ অ্যানেস্থেটিক ওষুধ, যা অতীতে চিকিৎসা ক্ষেত্রে অপারেশনের সময় অজ্ঞান করার জন্য ব্যবহৃত হতো। কিন্তু বর্তমানে এটি ব্যাপকভাবে মাদক হিসেবে অপব্যবহার করা হচ্ছে, বিশেষ করে পার্টি ড্রাগ হিসেবে। কিটামিন একটি অত্যন্ত ক্ষতিকর মাদক, যা স্বল্পমেয়াদে বিভ্রান্তি, হ্যালুসিনেশন ও শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি করে। দীর্ঘমেয়াদে এটি কিডনি ও মূত্রথলির গুরুতর ক্ষতি, মানসিক সমস্যা এবং আসক্তির দিকে ঠেলে দেয়। নিয়মিত সেবনে জীবনের জন্য ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি করে।
মহাপরিচালক জানান, এই চক্রের কোনো সদস্য ঢাকায় অবস্থান করে না। এই সকল মাদকগুলো তারা পাওয়ার পর প্রসেস করে ঢাকায় এসে বুকিং দিয়ে আবারও চলে যায়। এই চক্রের সঙ্গে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের সহযোগিতা রয়েছে। যদিও গ্রেফতারকৃতদের কেউই প্রবাসী ছিল না। তবে তাদের পরিচিত প্রবাসীদের সহযোগিতায় এই চক্র গড়ে ওঠে। এই মাদকের ব্যবহার আমাদের দেশে তেমন একটা নেই। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে মাদকটি আসে। এরপর প্রসেস হয়ে বিদেশে চলে যায়।