ঢাকা শনিবার, ৫ই জুলাই ২০২৫, ২২শে আষাঢ় ১৪৩২


ডেঙ্গুর হটস্পট দাউদকান্দি

সবখানে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার পাত্রই হয়েছে কাল


প্রকাশিত:
২৬ জুন ২০২৫ ১৬:৪৫

কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসভার ঘরে ঘরে রয়েছে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার এসব পাত্র।
গৃহস্থালীর কাজের জন্য কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসভার প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে বৃষ্টির পানি প্লাস্টিক বা মাটির পাত্রে দীর্ঘদিন ধরে জমিয়ে রাখার প্রবণতা রয়েছে। সেসব পাত্রেই প্রতিনিয়ত জন্ম নিচ্ছে এডিশ মশার লার্ভা; যা থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হচ্ছে বাড়ির লোকজন।

গোটা কুমিল্লা জেলায় যত লোক ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে তার প্রায় পাঁচ গুণ বেশি আক্রান্ত এক দাউদকান্দি উপজেলাতেই। এরই মধ্যে সেখানে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ছয়জনের প্রাণ গেছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য মতে, জুন মাসেই সেখানে আক্রান্ত হয়েছে এক হাজার ৮৫০ জন; যেখানে গোটা জেলায় সরকারি হিসেবে আক্রান্তের সংখ্যা দেখানো হয়েছে মাত্র ৩০৪ জন।

সরকারি এই হিসাব নিয়ে নানা মহলে প্রশ্নের মাঝে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় জানিয়েছে, তারা শুধু সরকারি হাসপাতালে শনাক্ত হওয়া আক্রান্তের হিসাব নিয়েছেন। বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে শনাক্ত হওয়ার রোগীর হিসাব এর মধ্যে নেই।

ডেঙ্গু আক্রান্তের দিকে থেকে দাউদকান্দি উপজেলা কুমিল্লার ‘হটস্পট’ হয়ে ওঠেছে। জুন মাসের শুরু থেকেই দাউদকান্দি পৌরসভার ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডকে ‘হটস্পট’ ঘোষণা করে প্রশাসন।

এই অবস্থার মধ্যেই মঙ্গলবার ডেঙ্গু উৎস খুঁজতে দাউদকান্দিতে গিয়ে অনুসন্ধান চালায় সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগ।

জেলার কীটতত্ত্ববিদ আল ইমরান ভূঁইয়া বুধবার বলছিলেন, “সাধারণ মানুষের ধারণা ছিল দাউদকান্দিতে বাড়ির বাইরে অপরিচ্ছন্ন এবং ডোবা-নালায় বৃষ্টির পানি জমে এডিস মশা বৃদ্ধি পেয়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ হয়েছে।

“কিন্তু আমরা সংক্রমিত এলাকায় গিয়ে পেলাম আরো ভয়ংকর তথ্য। এডিস মশা লার্ভা উৎপাদন হচ্ছিল বাড়ির ভেতরেই। বৃষ্টির পানি জমানোর জন্য পৌরবাসী যেসব প্লাস্টিক ও মাটির ড্রামে পানি ধরে রেখেছিলেন, সেগুলোতেই পাওয়া গিয়েছে বিপুল পরিমাণে এডিস মশার লার্ভার নমুনা।”

আল ইমরান ভূঁইয়া আরও বলেন, “আমরা দাউদকান্দি পৌরসভার সবজিকান্দি এলাকায় গিয়ে দেখেছি প্রায় সব বাড়িতেই বৃষ্টির পানি জমানোর পাত্র। আর সেগুলোতেই এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গিয়েছে। ডেঙ্গু সংক্রমণ ছড়ানোর জন্য বাইরের কিছু নয় বরং ঘরে-বাড়িতে এই পানির পাত্রগুলোই দায়ী। আমরা পৌর কর্তৃপক্ষকে সেসব ড্রাম দ্রুত অপসারণের পরামর্শ দিয়েছি।”

দাউদকান্দি পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রেদোয়ান ইসলাম বলেন, “পৌরসভায় ডেঙ্গুর ‘হটস্পট’ যেসব এলাকা সেখানে বৃষ্টির পানি ধরে রাখার পাত্রে বিপুল এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গিয়েছে। এটা ঘরে ঘরে ডেঙ্গু ছড়ানোর অন্যতম কারণ।

“বাড়ি বাড়ি গিয়ে এসব জমানো পানি ফেলে দিয়ে এসেছি। কিন্তু সবাইকে সচেতন হতে হবে। এসব পানি যতদিন না ফেলা হবে, ততদিন ডেঙ্গু সংক্রমণ কমবে না। আমরা আশা করছি, স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে নিয়ে এই সচেতনতা তৈরি করতে পারব।”

দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, “কীটতত্ত্ববিদ পরামর্শ দিয়েছেন, দাউদকান্দির বাসাবাড়ি থেকে বৃষ্টির পানি জমানোর পাত্র অপসারণ করতে হবে। সেগুলোতে ডেঙ্গু ভাইরাস ছড়ানোর জন্য একমাত্র কারণ এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গিয়েছে।”

উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, শুধু জুন মাসের ২৫ দিনে প্রায় এক হাজার ৮৫০ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৮৫০ জন। ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ছয়জন; এর মধ্যে চারজন নারী এবং দুজন পুরুষ।

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে যারা মারা গেছেন তারা হলেন- ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দৌলতদী গ্রামের খোকন মিয়া (৬৫), ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নাগের কান্দি গ্রামের নুরুল আমিন (৫৫), মারুকা ইউনিয়নের লিমা আক্তার (২৪), দোনারচর গ্রামের সালমা বেগম (৫৬), শাহীনূর আক্তার (২৪) এবং সবজিকান্দি গ্রামের জ্যোস্না বেগম (৬০)।