একটি বাঁশের সাঁকোই হাজার-হাজার মানুষের চলাচলের একমাত্র ভরসা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার চাতলপাড়ে যাতায়াতের একমাত্র ভরসা একটি বাঁশের সাঁকো। এই সাঁকো দিয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়তই বেমালিয়া নদী পাড় হতে হচ্ছে এলাকাবাসীর। সাঁকোটি এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ যেকোনো সময় ভেঙ্গে পড়ে ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। স্বাধীনতার পর থেকে এভাবেই ভোগান্তি নিয়ে পথ চলছেনএলাকার হাজার হাজার মানুষ।
উপজেলার চাতলপাড় ইউনিয়নের চাতলপাড় বাজার, চক বাজার ও ইউনিয়নের উত্তর পাশ দিয়ে মেঘনা নদী এবং ইউনিয়নের মধ্যে দিয়ে বেমালিয়া নদী বয়ে যাওয়ায় কারণে নাসিরনগর উপজেলা থেকে চাতল পাড়ের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ২১ টি গ্রামের মানুষের যোগাযোগের শেষ ভরসা এই সাঁকো। সাঁকোটি দিয়ে হেঁটে কোনো রকম পারাপার সম্ভব হলেও কোনো যানবাহন কিংবা প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে পারাপার হওয়া যায় না।
জানা যায়, জেলার সদর ও উপজেলার দূর্গাপুর,বিলের পাড়,চাতল পাড়,রতনপুর, পতুইর, নিযাজপুর,কাঠালকান্দি,হাতপাড়া,কচুয়া,বীকিনগর,ফকিরদিয়া,ঘুজিইয়াখাইল,বড়নগর,ধানতুলিয়া,ফুলকারকান্দি,কান্দি ,ইছাপুর,তেলিকান্দি,জয়ধরকান্দি, মহিষবেড়, মোহাম্মদপুর, বাঘী, বালিখোলা, খাগালিয়া সোনাতোলা, কান্দিপাড়া,ভলাকুট বাজারসহ এলাকার একুশটি গ্রামের মানুষের উপজেলা সদরসহ জেলার সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম বাঁশের তৈরি সাঁকোটি।বর্ষা আসলে নৌকা দিয়ে এ পথ পার হতে হয়। শহরে যেতে হলে তিনটি সাঁকো পাড়ি দিয়ে যেতে হয় এলাকাবাসীর।
স্রোতের কারণে খেয়া দিয়ে পারাপার সম্ভব না বিধায় খেয়ার মাঝির উদ্যোগে খালের ওপরে দুইশত মিটার বাঁশের সাঁকোটি নির্মাণ করেন। পারাপারের জন্য জনপ্রতি ৫ টাকা দিতে হয়।নদীর দুই পাড়ে রয়েছে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। স্থানীয়দের আক্ষেপ বাঁশের সাঁকোটি দিয়ে পার হতে বৃদ্ধ শিশু ও শিক্ষার্থীদের প্রায়ই দুর্ঘটনায় পরতে হয়। এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শত শত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এই সাঁকোটির কারণে এলাকার উৎপাদিত খাদ্যশস্য,কৃষিপণ্যসহ বিভিন্ন কাঁচামাল বাজারজাতকরণ ও রোগীর জরুরি চিকিৎসার ক্ষেত্রে বড় ধরনের বিপদে পরতে হয়। নদীতে ব্রিজ না থাকায় শিক্ষা, চিকিৎসা ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন দিক থেকে পিছিয়ে রয়েছে এ অঞ্চলের মানুষ।স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, নদীর ওপর সেতু নির্মিত হলে পাল্টে যাবে দুই পাড়ের মানুষের জীবনযাত্রা। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নির্বাচনের সময় জনপ্রতিনিধিরা প্রতিশ্রুতি দিলেও নির্বাচন শেষ হলে তা আর বাস্তবায়ন করেন না। এখন পর্যন্ত সেতু নির্মিত হয়নি, তাই এলাকাবাসী বাধ্য হয়ে এ বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হতে হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের শতাধিক শিক্ষার্থী প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসায় যাতায়াত করছে। এই সাঁকো দিয়ে পার হয়ে প্রতিদিন চাতলপাড় ডিগ্রী কলেজ, রতনপুর দাখিল মাদ্রাসা, কচুয়া দাখিল মাদ্রাসা, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ওয়াজ উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সহস্রাধিক শিক্ষার্থী যাতায়াত করছে। স্থানীয় জসিম ফকির বলেন, একটি সেতুর অভাবে আমাদের জমি থেকে উৎপাদিত কৃষি পণ্য বাজারজাত করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। এতে আমরা উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হই। তিনি আরও বলেন, এখানে সেতুর জন্য জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টরা উদ্যোগ নেননি তাই সেতু নির্মাণের জন্য বর্তমান সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছে এলাকাবাসী ।
স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তানভীর জানায়, বাঁশের সাঁকো পার হয়ে প্রতিদিন বিদ্যালয়ে যেতে ভয় করে। তারপরও যেতে হয়। বর্তমান সরকার আমাদের লেখাপড়ার কথা চিন্তা করে এখানে যেন একটি সেতু করে দেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আবুর কাসেম বলেন, নির্বাচনের আগে সকলেই ব্রিজ করে দেওয়ার কথা বলেন। এমনকি আমাদের স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্যগণ নির্বাচনের আগে এসে আমাদেরকে ব্রিজ করে দেওয়ার ব্যাপারে আশ্বাস দিয়ে ছিলেন। তাদের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে কিন্তু ব্রিজ হলো না।
চাতলপাড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বলেন, এখানে সেতু নির্মাণে আমাদের চেষ্টার কোনো কমতি নেই। গ্রামের মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) মাধ্যমে সেতু নির্মাণের চেষ্টা করা হচ্ছে।
নাসিরনগর উপজেলা প্রকৌশলী মোঃশাহ আলাম ভূইয়া প্রতিনিধি কে বলেন, দুই শত মিটারের চেয়ে বড় আকারের সেতু নির্মাণের জন্য আলাদা প্রকল্প প্রয়োজন। এই নদীর ওপর সেতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা ঢাকায় পাঠানো হবে। সেখান থেকে প্রক্রিয়া শেষে অনুমোদন হলে সেতু নিমার্ণের কাজ শুরু হতে পারে। এ ব্যাপারে এলাকাবাসী উর্ধতন কতৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছে।