নেছারাবাদে চিহ্নিত তিন চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে থানায় মামলা; আসামীরা পলাতক

পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলার গুয়ারেখা ইউনিয়নের তিনজন চিহ্নিত চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পিরোজপুর জেলা পুলিশ সুপার খান মোহাম্মদ আবু নাসের এর নির্দেশে শনিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে বিজন রায় নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে মামলা করেছেন।
আসামিরা হলেন, (১) মোঃ সোহেল মোল্লা, পিতা- মোঃ আব্দুল হাই মোল্লা, (২) মোঃ আরিফ ফকির, পিতা- মোঃ ইদ্রিস ফকির, (৩) মোঃ রুবেল সিকদার ওরফে শাকিল, পিতা- মোঃ কুদ্দুস সিকদার। আসামীরা সবাই নেছারাবাদ উপজেলাধীন গুয়ারেখা ইউনিয়নের পাটিকেলবাড়ি ৮ নং ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা।
এলাকবাসীর তথ্যমতে, আসামীরা গুয়ারেখা ইউনিয়নের চিহ্নিত চাঁদাবাজ বলে পরিচিত। গত ২৫ নভেম্বর রাতে আসামিরা মামলার বাদী বিজন রায়ের ছেলেকে জিম্মি করে তার পরিবারের কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে এবং ছেলেকে ধরে নিয়ে বেধম মারধর করে। এমতাবস্থায় বিজন ছেলের প্রান বাঁচাতে আসামীদের চাহিদানুযায়ী ঐ চাঁদা দিতে বাধ্য হন বলে জানান ভুক্তভোগী পরিবার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, আসামীরা অনেক আগে থেকেই প্রকাশ্যে বা গোপনে প্রায়ই অসহায় সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন দোষত্রুটি দেখিয়ে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে, মামলা হামলার ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক বিভিন্ন অংকের চাঁদার দাবি করতো এবং চাঁদা আদায় করতো। এলাকাটি হিন্দুপ্রধান বিধায় ভুক্তভোগীরা তাদের ভয়ে মুখ খোলা বা অভিযোগ করার সাহস পেতনা। গত ৫ আগষ্টের পর থেকে তারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে।
উল্লেখ্য আসামী সোহেল মোল্লা দীর্ঘদিন যাবৎ নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে অসংখ্য সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করেছে এবং চাঁপ প্রয়োগ ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে টাকা পয়সা আত্মসাৎ করেছে। সে বিভিন্ন সময় স্বরুপকাঠি প্রেসক্লাবের বিভিন্ন সাংবাদিক ও সংগঠনের নাম ভাঙ্গিয়ে অসহায় মানুষকে ব্লাকমেইল করে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিয়েছে। তার নামে এলাকায় এযাবৎ একাধিক তথ্যবহুল অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিন প্রমান স্বরুপ সোহেল মোল্লার সাংবাদিকতার কোনো কার্ড বা অনুমোদিত লাইসেন্সের প্রমান পাওয়া যায়নি। আসামি সোহেল মোল্লা কিছুদিন আগে ৫ আগষ্টের পর নেছারাবাদের সোহাগদল ইউনিয়নের বাসিন্দা এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রোশে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে অপপ্রচার করে এবং কয়েকজন সহযোগী নিয়ে হোন্ডা যোগে ঐ সাংবাদিকের বাড়িতে হামলা করে এবং তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। তাকে না পেয়ে তার বৃদ্ধা মা- বাবাকে হুমকি দিয়ে আসে এই বলে যে, তার ছেলেকে উপস্থিত না করলে পরবর্তীতে যেখানেই পাবে সেখানেই মেরে হাড্ডি মাংস আলাদা করে টুকরো টুকরো করে মেরে ফেলবে এবং তার লাশও আপনারা খুজে পাবেন না। পরবর্তীতে ঐ সাংবাদিকের বৃদ্ধা মা- বাবাকে বিশৃ ভাষায় গালিগালাজ করে ১০ হাজার টাকার চাঁদা দাবি করে।
বিজন রায় বলেন, এতোদিন এদের জালাতনের বিরুদ্ধে জীবনের ভয়ে ভুক্তভোগীরা কেউ অভিযোগ দিতে বা মামলা করতে সাহস পাইনি। কারন এরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে চলছিলো। এবার এসপি মহোদয়কে কাছে পেয়ে আমরা তার সহযোগিতায় অভিযোগ ও মামলা করতে সাহস পেয়েছি। প্রশাসনের প্রতি আশা রাখছি এবার যেনো আমরা এলাকার অসহায় সাধারণ মানুষগুলো এই সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজদের থেকে রেহাই পাই এবং এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা নিয়ে বসবাস করতে পারি।
এর আগে চাঁদাবাজির ব্যপারে নেছারাবাদ উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ও সদস্য সচিবের কড়া নির্দেশনা মতে, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশ আছে যে, চাঁদাবাজ যেই হোক না কেনো তাকে ছাড় দেয়া হবেনা। সন্ত্রাস, মাদক ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজী সহ সকল অপকর্ম যদি দলের নাম ভাঙ্গিয়ে কেউ করে এর দায়দ্বায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে, দল এর দায়ভার কখনোই বহন করবেনা এবং দলের শৃঙ্খলাভঙ্গের প্রমান পেলে দল থেকে তারা বহিষ্কৃত হবে।
এ ব্যপারে নেছারাবাদ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বনি আমিন জানান, মাদক সন্ত্রাস, ইভটিজিং, বাল্য বিবাহ এবং চাঁদাবাজির ব্যপারে কাউকে কোনোরূপ ছাড় নয়, বিজন রায় অভিযোগ দেওয়ার পর এসপি মহোদয়ের নির্দেশে উল্লেখিত তিন জনের নামে দ্রুত মামলাটি রজু করা হয়েছে। আসামিরা পলাতক রয়েছে। তবে গ্রেফতারের প্রকৃয়া চলমান রয়েছে।