ঢাকা মঙ্গলবার, ৩রা ডিসেম্বর ২০২৪, ২০শে অগ্রহায়ণ ১৪৩১


সাফজয়ী সাতক্ষীরার তিন কন্যাকে গণসংবর্ধণা


২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:২৯

আপডেট:
৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০:৪৭

সাফজয়ী সাতক্ষীরার তিনকন্যা সাবিনা, মাছুরা ও আফঈদাকে গণসংবর্ধণা প্রদান করা হয়েছে। টানা দ্বিতীয় বার সাফ জয়ের পর প্রথমবারের মতো একসাথে সাতক্ষীরায় পা রাখলেন এ তিন গর্বিত কন্যা। আর নিজ জেলাতে পৌঁছেই পেলেন গণসংবর্ধনা।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ও জেলা ক্রীড়া সংস্থা এই গণসংবর্ধনার আয়োজন করে। বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় সাতক্ষীরা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে জেলা প্রশাসন, ক্রীড়া সংস্থা ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে এই গণসংবর্ধনা দেওয়া হয়। বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের নতুন এই অধ্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় নিজ জেলায় শুরু হয়েছে বাঁধভাঙা উচ্ছ¡াস।

বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন বক্তব্য রাখতে গিয়ে আক্ষেপ করে বলেন, শুধু ফুটবলে নয়, বিভিন্ন খেলায় সাতক্ষীরার ছেলেমেয়েরা নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আমার ১৫ বছরের ক্যারিয়ারে সাতক্ষীরা জেলা স্টেডিয়ামে মহিলাদের বড় ধরনের কোনো টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়নি, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। পরবর্তী প্রজন্মের সাবিনা, মাছুরা-প্রান্তিদের উঠিয়ে আনার জন্য কোনো ব্যবস্থা নেই। আমরা চাই আমাদের মতো সাতক্ষীরা থেকে আরও ভালো ভালো খেলোয়াড় উঠে আসুক, পরবর্তীতে তাদের যেন আমরা সম্মানিত করতে পারি। আমি সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের কাছে আহŸান করবো, ফুটবলের পাশাপাশি ক্রিকেট, ভলিবল, খো খো খেলোয়াড়রা সাতক্ষীরা গর্বিত করেছে। এজন্য অন্যান্য খেলাকেও প্রাধান্য দিয়ে সঠিক পরিচর্যা করা দরকার।

তিনি আরও বলেন, আমাদের সাফল্যের পেছনে আমার এবং মাছুরার কোচ আকবার স্যার ছিলেন। প্রান্তিকে তার বাবা নিজের জায়গা থেকে চেষ্টা করেছে। আজ আকবার স্যার নেই। কিন্তু আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য আকবার স্যারের মত মানুষ দরকার। তাহলে আগামীতে আরো অনেক সাবিনা, মাছুরা, প্রান্তি সাতক্ষীরার মাটিতে জন্ম নেবে। আপনাদের এই ভালোবাসা আমাদের আরও বড় স্বপ্ন দেখতে প্রেরণা হয়ে থাকবে।

মাছুরা পারভীন বলেন, আমি গুছিয়ে কথা বলতে পারিনা। তবে মাঠে গুছিয়ে খেলতে পারি। একটা টুর্ণামেন্ট জেতার পরে আমাদের সম্মানিত করা দেখে অনেকে অনুপ্রাণিত হয়। আজকের এ সম্মান আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার অনুপ্রেরণা। আফঈদা খন্দকার প্রান্তি বলেন, প্রতিবন্ধকতা পার হতে পারলেই সফলতা আসবে আমরা জানি। কিন্তু সফলতা আসার পেছনে যে কষ্টটা করতে হয় এটা সবারই জানা। সাতক্ষীরাকে যেন আমরা আরো উচ্চ স্থানে নিয়ে যেতে পারি সেই দোয়া করবেন।

অনুষ্ঠানে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, এই তিন মেয়ে শুধু সাতক্ষীরার নয়, পুরো বাংলাদেশের গর্ব। তাদের সাফল্য নতুন প্রজন্মকে আরও অনুপ্রাণিত করবে। এ সময় সাতক্ষীরার খেলোয়াড়দের জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ সুবিধা বৃদ্ধির আশ্বাস দেন জেলা প্রশাসক।

গণসংবর্ধণা অনুষ্ঠানে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদের সভাপতিত্বে এবং ফিফা রেফারী তৈয়ব হাসান বাবু ও জেলা কালচারাল অফিসার ফাইজা হোসেন অন্বেষার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, পুলিশ সুপার মো. মনিরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আবুল হাসেম, সরকারী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর বাসুদেব বসু, জেলা বিএনপির আহবায়ক সৈয়দ ইফতেখার আলী, আফঈদা খন্দকার প্রান্তির গর্বিত পিতা খন্দকার আরিফ হাসান প্রিন্স, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সাতক্ষীরার সমন্বয়ক ইমরান হোসেন প্রমুখ।

অনুষ্ঠান শেষে সাতক্ষীরার এই তিন গর্বিত কন্যাকে ফুলেল শুভেচ্ছা, ক্রেস্ট এবং সংবর্ধনা স্মারক দেওয়া হয়। এই আয়োজনে ফুটবলপ্রেমীদের পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন বয়সী মানুষজনের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়। সাতক্ষীরা যেন নতুন করে সাফল্যের মানচিত্রে নিজেদের অবস্থানের জানান দিল। এই তিন কৃতি ফুটবলারের সাফল্য সাতক্ষীরার ক্রীড়াঙ্গনের জন্য এক নতুন যুগের সূচনা বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

উল্লেখ্য, টানা দ্বিতীয়বারের মতো সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে দেশকে গর্বিত করেছেন নারী ফুটবলাররা। ২০২২ সালে নেপালের দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে রচিত হয়েছিল এক নতুন গল্প। একই মাটিতে, ২০২৪ সালে, সেই গল্পের নতুন অধ্যায় লেখে বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল। এবারের সাফল্যে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন সাতক্ষীরার তিন কৃতি সন্তান, অধিনায়ক সাবিনা খাতুন, ডিফেন্ডার মাছুরা পারভীন ও আফঈদা খন্দকার প্রান্তি।