মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
সুইস ব্যাংকে এতো টাকা কীভাবে গেল

এক বছরের ব্যবধানে সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশের নামে এক লাফে ৩৩ গুণের বেশি বাড়ার খবরে ‘হতাশা’ প্রকাশ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তার প্রশ্ন, সুইস ব্যাংকে কীভাবে এত টাকা গেল?
শনিবার বিকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আজকে পত্রিকায় একটা খবর দেখে মনটা খারাপ হলো। সুইস ব্যাংকে অনেক টাকা জমা হয়েছে এক বছরের মধ্যে। আমি জানি না এই টাকাগুলো কাদের, কবে কীভাবে জমা হয়েছে। কিন্তু এই খবরটা দেখলে প্রতিটি দেশপ্রেমিক মানুষের মনে হবে তাহলে কী কোনো পরিবর্তন হয়নি?”
ফখরুল বলেন, “আমরা যে কথাগুলো এর আগে বললাম, সম্পদগুলো নিয়ে গেছে সেই মাফিয়ারা, ফ্যাসিবাদীরা, হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে তাহলে কি? আমি জানি না, এটা কখন হয়েছে? ২৪ সাল যদি হয়ে থাকে, এটা সঠিকভাবে হয়েছে এবং ফ্যাসিস্ট আমলে হয়েছে। আরেকটা হচ্ছে, এটা প্রমাণ হয়েছে যে, একটি পরিবার লুটপাট করে সব নিয়ে গেছে। ওরা সব ধবংস করে গেছে’
মির্জা ফখরুল বলেন, “আজকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ধবংস করে দিয়েছে। তারা নির্বাচন ব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় কাঠামো, বিচার ব্যবস্থা, আমলাতন্ত্র, শিক্ষা ব্যবস্থা, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সব কিছুকে তারা ধবংস করে দিয়ে গেছে।”
রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলোকে আবার ‘একটা জায়গায়’ নিয়ে আসার চেষ্টার চলছে তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমরা আশা করি যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তারা কাজ শুরু করেছে। নিঃসন্দেহে তারা অনেক কাজ করেছে। তারা ভালো কাজ করছে, আমাদেরকে পথ দেখাচ্ছে। আমরা আশা করবো, আমরা সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ছিলাম তারা সবাই একযোগ হয়ে তাদেরকে সহযোগিতা করবো। আমাদের যে লক্ষ্য একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র সেই জায়গায় আমরা গিয়ে পৌঁছাতে পারব।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আজকে এই জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা সবাই মিলে যারা এই ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে একসাথে আন্দোলন করেছি, সংগ্রাম করেছি সবাই মিলে আমরা একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নির্মাণ করতে চাই। আমি এই ব্যাপারে এখনো আশা হারাইনি। আমি বিশ্বাস করি যে, আমরা যদি সবাই একযোগে সেই সময়ে আন্দোলন করেছি সেই বিষয়গুলো নিয়ে যদি আমরা কাজ করি এবং আমরা একমত হই, অবশ্যই আমরা সেই লক্ষ্যে গিয়ে পৌঁছাতে পারব।”
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে আশা প্রকাশ করে ফখরুল বলেন, “আমরা অনুপ্রাণিত হয়েছি, আমরা খুশি হয়েছি যখন দেখলাম আমরা, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস, তিনি একটা সভা করলেন এবং সেই সভায় তারা কতগুলো বিষয় একমত হলেন। এটা নিঃসন্দেহে আমাদের কাছে, একটি অত্যন্ত আশার বাণী সামনে এনেছেন। আমরা আশ্বস্ত হয়েছি যে, সামনে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হবে। তার মাধ্যমে আমাদের কিছুটা হলেও সেই আশাগুলো পূরণ করার একটা সুযোগ তৈরি হবে।”
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির মিলনায়তনে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির ২১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীত উপলক্ষে এই পুনর্মিলনী সভা হয়।
‘এনসিপির নিবন্ধন আবেদনে সাধুবাদ’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “বেশ কয়েকটা নতুন তৈরি হয়েছে। একটা গুরুত্বপূর্ণ দল আগামীকাল তারা নিবন্ধনের জন্য জমা দেবে, ছাত্ররা সেখানে আছেন। আমরা নতুন দল হওয়ার জন্য স্বাগত জানিয়েছি। এখনো স্বাগত জানাচ্ছি। আমাদের প্রত্যাশা তাদের প্রতি অনেক বেশি। আমরা প্রত্যাশা করি যে তরুণেরা, এই নবীনের, যারা বিগত আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নিয়েছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন…যাদের সহকর্মীরা রক্ত ঢেলে দিয়েছেন, তারা এই দেশকে…আমরা আশা করি, তারুণ্যের যে নেতৃত্ব, সেই নেতৃত্ব নিসন্দেহে আমাদের সেই লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করবে।”
‘সরকারের নিরপেক্ষতা জরুরি’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “আমরা আশা করি, এই সরকার একটা নিরপেক্ষ সরকার, এখনো থাকবে, নির্বাচনের সময়েও থাকবে। সবার আশা পূরণ করতে হলে একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এই সরকারের নিরপেক্ষতা অত্যন্ত জরুরি। যদি আমাদের মধ্যে, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরস্পর সহনশীল রাজনৈতিক সংস্কৃতি চালু করতে না পারি, কোনো সংস্কার এখানে কাজ করবে না। দ্বিমত থাকবে, আমাদের মধ্যে সন্মানবোধ থাকবে না কেন? এটা আমাদের ফিরিয়ে আনতে হবে।”
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন বাসদের উপদেষ্টা খালেকুজ্জামান, বিএনপি আবদুস সালাম, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, গণফোরামের মিজানুর রহমান, সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, জেএসডির শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, ভাসানী জনশক্তি পার্টির শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল, এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।