ঢাকা রবিবার, ৪ঠা মে ২০২৫, ২১শে বৈশাখ ১৪৩২


শাপলা চত্বরে গণহত্যার আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল কেন গঠন হয়নি, প্রশ্ন হেফাজতের


৩ মে ২০২৫ ১৩:৫৩

আপডেট:
৪ মে ২০২৫ ০৩:২৩

ছবি : সংগৃহীত

২০১৩ সালে ৫ মে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে গণহত্যার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এখনো কেন গঠন হয়নি বলে প্রশ্ন করেছেন হেফাজতের সিনিয়র নেতারা। অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে তারা বলেন, আপনারা পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য কমিশন করেছেন, জুলাই আন্দোলনের গণহত্যার জন্য কমিশন করেছেন, ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছেন, কিন্তু মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে সংঘটিত গণহত্যার বিচারের জন্য কেন তদন্ত কমিশন গঠন করলেন না?

শনিবার (৩ মে) নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিলসহ চার দফা দাবিতে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশে এই প্রশ্ন তোলেন হেফাজতের নেতারা।

সংগঠনটির আমির আল্লামা শাহ্ মুহিব্বুল্লাহ্ বাবুনগরীর সভাপতিত্বে মহাসমাবেশে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

সকাল ৯টার দিকে হেফাজতে ইসলামের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা মহাসমাবেশ স্থলে পৌঁছান। শীর্ষ নেতারাসহ দেশ বরেণ্য উলামায়ে কেরাম মহাসমাবেশে বক্তব্য রাখবেন।

হেফাজতের চার দফা দাবি ১. নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন ও এর প্রতিবেদন বাতিল করা। ২. সংবিধানে বহুত্বদের পরিবর্তে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস পুনর্বহাল করতে হবে। ৩. হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া সব মামলা প্রত্যাহার ও শাপলা চত্বরের কথিত হত্যাকাণ্ডসহ সব গণহত্যার বিচার করতে হবে। ৪. ফিলিস্তিন ও ভারতে ‘মুসলিম গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধে’ সরকারকে ভূমিকা রাখতে হবে।

বক্তারা বলেন, 'শেখ হাসিনার মতো ভুল করবেন না। ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে কুরআন-সুন্নাহবিরোধী কোনো নীতি বাস্তবায়ন করার সাহস করবেন না। অবিলম্বে প্রতিবেদনসহ নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন বাতিল ঘোষণা করুন। শাপলা চত্বরে সংঘটিত গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করুন। হেফাজতে ইসলাম স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় জীবন দিতে প্রস্তুত। কিন্তু কোরআন সুন্নাহ বিরোধী কোনো কর্মকাণ্ড বরদাস্ত করবে না।'

তারা বলেন, 'বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার করা হলেও হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার আমলে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করা হয়নি। এসব মামলা অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।'

নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন সম্পর্কে সমালোচনা করে হেফাজতে ইসলাম নেতারা বলেন, 'সরকার নারী বিষয়ক যে সংস্কার কমিশন গঠন করেছেন এর সদস্যরা নারী না পুরুষ তা বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু তারা যেসব প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে তা কোরআন সুন্নাহ বিরোধী। তাদের সংস্কার প্রতিবেদন যদি পাস করা হয় তাহলে জীবন দিয়ে রুখে দেওয়া হবে। মার্চ টু ঢাকার কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবে হেফাজতে ইসলাম।'

মুফতি ফখরুল ইসলাম বলেন, 'নির্যাতিত হলাম, জেল খাটলাম অথচ আমাদের মামলা প্রত্যাহার করা হয়নি। নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন যে প্রতিবেদন দিয়েছে তা ১৮ কোটি মুসলমানের বিরুদ্ধে। তা অবিলম্বে বাতিল করতে হবে।'

ধর্ম অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে ব্ল্যাসফেমি আইন পাস করার দাবি জানিয়ে আলোচিত ইসলামি বক্তা ও জৌনপুরের পীর মুফতি ড. সাইয়্যেদ এনায়েত উল্লাহ আব্বাসী বলেন, 'এই সরকার নারী কমিশন করে মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেছে। করিডোর (মায়ানমারের রাখাইনে মানবিক করিডোর) দিয়ে স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে।’

হেফাজতে ইসলাম রাজনীতি করবে না, তবে রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘৫৩ বছর আমাদের ঘাড়ে পা দিয়ে ইসলামবিরোধী শক্তি ক্ষমতায় গেছে। আগামীতে আলেম-ওলামাকে ছাড়া কোনও সিদ্ধান্ত জনগণ মানবে না। কেউ আমাদের দিকে চোখ তুলে তাকালে চোখ উপড়ে ফেলতে হবে। আলেমদের মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।’

এ সময় তিনি কাদিয়ানীদের অমুসলিম ঘোষণারও দাবি জানান। মহাসমাবেশ থেকে ফিলিস্তিন ও ভারতে ‘মুসলিম গণহত্যা ও নিপীড়ন বন্ধে’ সরকারকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়। তবে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশে অধিকাংশ বক্তার বক্তব্যে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন ও প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে অবস্থান স্পষ্ট করা হয়েছে।