ঢাকা রবিবার, ১১ই মে ২০২৫, ২৯শে বৈশাখ ১৪৩২


এলজিইডির কাজী মিজানের বিরুদ্ধে ২৮ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ


২৪ নভেম্বর ২০১৯ ১২:৫৫

আপডেট:
১১ মে ২০২৫ ১১:০৯

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কাজী মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন পৌরসভার রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ কাজের জন্য প্রায় ২৮ কোটি টাকা উৎকোচ গ্রহণ ও নিয়মবহির্ভূতভাবে একাধিক প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের অভিযোগ তদন্ত শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সম্প্রতি দুদকের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল ওয়াদুদকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত দল এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলীর কাছে তদন্তের জন্য প্রয়োজনীয় নথি ও রেকর্ডপত্র চেয়ে চিঠি দিয়েছে। আজ সকাল ১০টার মধ্যে দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছে রেকর্ডপত্র জমা দিতে বলা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এলজিইডির প্রকল্প পরিচালক কাজী মিজানুর রহমান সম্প্রতি পদোন্নতি পেয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হয়েছেন। তাকে রাঙ্গামাটি অঞ্চলে পদায়ন করা হলেও সেখানে তিনি নিয়মিত অফিস না করে ঢাকায় থাকেন। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পদোন্নতি পাওয়ার পরও তিনি প্রকল্প পরিচালক পদে থাকতে মন্ত্রণালয়ে তদবির করছেন। দুদকের কাছে আসা অভিযোগে বলা হয়েছে এলজিইডির আওতাধীন গুরুত্বপূর্ণ নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের প্রায় তিন হাজার ৪০০ কোটি টাকায় ২৮৭টি পৌরসভার রাস্তা ও ড্রেন নির্মাণ কাজের জন্য ‘ক’ শ্রেণি পৌরসভার জন্য ১৪ কোটি টাকা, ‘খ’ শ্রেণির পৌরসভার জন্য ১০ কোটি এবং ‘গ’ শ্রেণির পৌরসভার জন্য আট কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রথম পর্যায়ে উল্লিখিত প্রকল্প থেকে ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভার জন্য সাত কোটি টাকা, ‘খ’ শ্রেণির পৌরসভার জন্য পাঁচ কোটি টাকা এবং ‘গ’ শ্রেণির পৌরসভার জন্য চার কোটি টাকার দরপত্র আহ্বানের সিদ্ধান্ত হয়। এভাবে ২৮৭টি পৌরসভার মধ্যে যেসব পৌরসভা নির্ধারিত চাহিদামতো ঘুষ দেয় শুধু তাদেরই দরপত্র আহ্বানের অনুমতি দেন উল্লিখিত প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক কাজী মিজান।

অভিযোগে আরও বলা হয়, এভাবে প্রতিটি পৌরসভায় বরাদ্দ অনুমোদনের পূর্বে ২ শতাংশ হারে মিজানুর রহমান ঘুষ গ্রহণ করেন এবং প্রতিটি পৌরসভার মেয়র, প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানের অফিসে ঘুষের টাকা পৌঁছে দেন। এ জন্য তিনি এক শ্রেণির দালালও নিয়োগ করেন এবং তাদের মাধ্যমে ঘুষের টাকা আদায় করেন। এভাবে সে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় কোটি কোটি টাকা ঘুষ গ্রহণ করেছেন বলে জানা গেছে। কাজী মিজান বৃহত্তর বরিশাল অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, পিরোজপুর জেলার ৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সাইক্লোন সেন্টার প্রকল্প, জলবায়ু পরিবর্তন প্রকল্প, গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প ঝালকাঠীসহ বেশ কয়েকটি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময়ও তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। ওই প্রকল্পসমূহে মাঠ পর্যায় থেকে শুরু করে প্রধান কার্যালয়ে কেনাকাটা, ভুয়া বিল-ভাউচার, অর্থ ছাড়ে উৎকোচ আদায়, অর্থ বরাদ্দে উৎকোচ আদায়সহ নানা অভিযোগ রয়েছে মিজানের বিরুদ্ধে।

নিয়মানুযায়ী একজন প্রকল্প পরিচালক একটির বেশি প্রকল্পের দায়িত্ব পালন করতে পারেন না এবং এই বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় একাধিকবার তাগিদ দিলেও এলজিইডি কর্তৃপক্ষ অজ্ঞাত কারণে কাজী মিজানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না। কাজী মিজানের বেনামে একাধিক বাড়ি, ফ্ল্যাট ও প্লট রয়েছে এবং নিজ এলাকা নড়াইলে তার আত্মীয়স্বজনদের নামে প্রচুর সম্পদ ক্রয় করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি তার বিরুদ্ধে এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর তিনি বিষয়টি ধামাচাপা দিতে সক্ষম হন।

এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করে এলজিইডির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী কাজী মিজানুর রহমান বলেন, তিনি কোনো দুর্নীতি অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নন। তার বিরুদ্ধে একটি মহল মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দফতরে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে তাকে হয়রানি করছে।