ঢাকা শনিবার, ৪ঠা মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ ১৪৩১


ধর্মঘটের নামে সড়কে অরাজকতা


২৯ অক্টোবর ২০১৮ ০৩:০৫

আপডেট:
৪ মে ২০২৪ ২২:২৪

সংসদে সদ্য পাস করা সড়ক পরিবহন আইনের কয়েকটি ধারা পরিবর্তনসহ আট দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘটের প্রথম দিন রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে নৈরাজ্য কায়েম করেছে পরিবহন শ্রমিকরা। পরিত্যাক্ত পোড়া মবিল আর অালকাতরার টিন হাতে নিয়ে তারা ত্রাস সৃষ্টি করেছে সড়কে সড়কে। ধর্মঘটের মধ্যে সড়কে গাড়ি বের করলেই চালকদের মুখে মবিল-আলকাতরা মেখে দিচ্ছেন পরিবহন শ্রমিকরা। দেশের যে কোনো আন্দোলনে এরকম ঘটনা এবারই প্রথম।

এদিকে কালি লেপনের ঘটনা শ্রমিকরা ঘটায়নি বলে দাবি করেছে ধর্মঘট আহ্বানকারী বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। সংগঠনটির নেতাদের দাবি, আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে এ ঘটনা ঘটানো হতে পারে। এর পেছনে কোনও চক্রান্ত থাকতে পারে বলেও ধারণা তাদের।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার সকাল থেকেই পোড়া মবিল আর অালকাতরার টিন হাতে নিয়ে পরিবহন শ্রমিকরা রাজধানী ও তার আশেপাশের এলাকার বিভিন্ন সড়কে অাতঙ্ক তৈরি করে।ব্যক্তিগত গাড়ি, অটোরিকশা ও রিকশা থেকে যাত্রীদের নামিয়ে হেনস্থা করা হয়েছে। এ সময় প্রাইভেটকার চালকদের মুখে কালো রঙ, পোড়া মবিল ও আলকাতরা মেখে দিতে দেখা গেছে কিছু শ্রমিককে। ধর্মঘটে ব্যক্তিগত গাড়িও চলতে বাধা দেওয়া হয়।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় বেশ কয়েকজন চালকের মুখে পোড়া ইঞ্জিন ওয়েল, কালো রঙ ও আলকাতরা মাখিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড থেকে বা চিটাগাং রোড থেকে যাত্রাবাড়ী মোড় দিয়ে ঢুকতেই বাধা সবধারনের যানবাহন পরিবহন শ্রমিকদের বাঁধার মুখে পড়েছে। মানিকনগর, সায়েদাবাদ, কমলাপুর, গুলিস্তানের দিক থেকে আসা গাড়িগুলোকেও আটকে দেওয়া হয় যাত্রাবাড়ী মোড়ে। যাত্রাবাড়ীর ব্যারিকেডের সামনে আসতেই প্রথমে গাড়ির ওপর মবিল ঢেলে দেওয়া হচ্ছে। আবার গাড়ির ড্রাইভারের গায়েও পোড়া মবিল-আলকতার ঢেলে দেওয়া হয় ।

বিভিন্ন স্থানে গণপরিবহন চালকসহ মোটরসাইকেল চালকরাও রেহাই পায়নি না শ্রমিকদের পোড়া-মবিল আর আলকাতরা থেকে। রিকশা এবং সিএনজিচালিত অটোরিকশা ওপরও চড়াও হয়েছে শ্রমিকরা। এমনকি ছাত্রী, সাধারণ যাত্রী আর পথচারীর লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন পরিবহন শ্রমিকদের হাতে। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় ওঠেছে।

রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সও রেহাই পায়নি শ্রমিকদের মবিল আলকাতরা থেকে। বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রোগী বহন করা আরাফাত নামের একটি অ্যাম্বুলেন্সের ওপর গুলিস্তান এলাকায় চড়াও হয় পরিবহন শ্রমিকরা। অ্যাম্বুলেন্সটির ওপর আলকাতরা ঢেলে দেওয়া হয়।।

নারায়ণগঞ্জে সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রীদের বহন করা বাসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করার পাশাপাশি চালক ও ছাত্রীদের গায়ে পোড়া মবিল লেপন করেছেন আন্দোলনরত পরিবহন শ্রমিকরা। রোববার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্দিরগঞ্জ উপজেলার শিমরাইল এলাকায় একটি পাম্পের কাছে এ ঘটনা ঘটে। পরে বাসটি সেখানে থামিয়ে দিয়ে আর যেতে দেয়নি।

শিক্ষার্থীরা জানায়, দুপুর ১২টার দিকে সাইনবোর্ড এলাকা পার হওয়ার সময় হঠাৎ শ্রমিকরা বাসটি থামিয়ে চালককে মারধর করে ও তার মুখে শরীরে পোড়া মবিল লেপে দেন। পরে এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে কয়েকজন ছাত্রীকেও পোড়া মবিল লেপে দেন শ্রমিকরা। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও শুরু করেন। পরে বাসের কয়েকটি গ্লাস ভাঙচুর করে বাস থেকে সবাইকে নামিয়ে দেওয়া হয়।

পোড়া মবিল- আলকাতরা মাখানোর ঘটনায় পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কেউ জড়িত নয় দাবি করে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেছেন, কালি লেপনের দায়ভার শ্রমিক ফেডারেশন নেবে না। এরা শ্রমিক ফেডারেশনের লোক না, দায়ভার আমরা নিব না, এরা দুষ্কৃতকারী, সন্ত্রাসী। এ ধরনের নিচু কাজ আমরা সমর্থন করি না। যদি আমাদের লোক করে থাকে তাহলে এ বিষয়ে সাংগঠনিক ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, যারা এরকম ঘটনা ঘটাচ্ছে আমরা তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। তাদের ফেডারেশন থেকে বহিষ্কার করা হবে।। এরই মধ্যে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। কমিটি তদন্ত করে দেখবে এর পেছনে কোনও ইন্ধন আছে কিনা।

পরিবহন শ্রমিকদের ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘটেরর সকাল যানবাহন না পেয়ে এলাকার কর্মজীবী মানুষদের পায়ে হেঁটে বা রিকশায় গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। এই অচবলাবস্থার ফলে রাজধানীতে এক প্রকারের মানবিক বিপর্যয় ঘটেছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নগরবাসী।