ঢাকা মঙ্গলবার, ১২ই আগস্ট ২০২৫, ২৯শে শ্রাবণ ১৪৩২


আগস্টের ১০ দিনেই গণপিটুনিতে নিহত ৯


প্রকাশিত:
১২ আগস্ট ২০২৫ ১৪:১৫

দেশজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় একের পর এক গণপিটুনির ঘটনা ঘটছে। চলতি আগস্ট মাসের প্রথম ১০ দিনে দেশে অন্তত ১৩টি গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৯ জন, আহত হয়েছেন আরও ১৩ জন। এছাড়া এ বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত গণপিটুনিতে নিহতের সংখ্যা ৮৭ জন এবং আহত ২৬৬ জন। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএফএস) কাছ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশের মধ্যে যখন বিচারহীনতা দেখা যায় তখন মানুষ আরও বেশি সহিংস হয়ে উঠে। আর এর ফলে বিভিন্ন জায়গায় এমন হত্যাকাণ্ড ঘটছে। এছাড়া জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর পুলিশের ভূমিকা নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে ১০ আগস্ট পর্যন্ত কমপক্ষে ১১১ জন মানুষ ‘মব’ (উচ্ছৃঙ্খল জনতা) সন্ত্রাসের শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন।

সর্বশেষ ৯ আগস্ট রংপুরে তারাগঞ্জ উপজেলায় চোর সন্দেহে দুজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। তাদের নাম রূপলাল দাস ও প্রদীপ দাস। সম্পর্কে তারা ছিলেন জামাই-শ্বশুর। স্বজনেরা বলছেন, প্রদীপকে এগিয়ে আনতে গিয়েছিলেন রূপলাল। তারা দুজন বাড়ি ফিরছিলেন। প্রদীপ নিজের ভ্যানগাড়ি চালাচ্ছিলেন। ভ্যানচোর সন্দেহে তাদের হত্যা করা হয়। একই দিন মাদারীপুরে চোর সন্দেহে তিনজনকে গণপিটুনির পর একজনের চোখ তুলে ফেলার চেষ্টা হয়।

ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) ‘পালস সার্ভে ৩’ শিরোনামের এক জরিপে উঠে এসেছে, মব সহিংসতা নিয়ে উদ্বিগ্ন মানুষের হার ৮০ শতাংশ। নারীর নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ৫৬ শতাংশ, রাতে চলাচলের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন ৬১ শতাংশ এবং পোশাকের কারণে রাস্তায় হয়রানি নিয়ে উদ্বিগ্ন ৬৭ শতাংশ মানুষ। জরিপটি গতকাল প্রকাশিত হয়েছে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর পুলিশি কার্যক্রমের দুর্বলতার সুযোগে দেশে একের পর এক চুরি, ডাকাতি ও দস্যুতার (ছিনতাই) ঘটনা মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। পাশাপাশি আগে থেকেই এ ধরনের অপরাধে বিচার না হওয়ার প্রবণতা রয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাজ্জাদ সিদ্দিকী বলেন, যখন বিচারহীনতার সংস্কৃতি বেড়ে যায়, তখন মানুষও মানুষের প্রতি সহিংস হয়ে ওঠে।

অবশ্য মানবাধিকারকর্মীরা মনে করেন, গণপিটুনি ও মব দমনে সরকার কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি বলেই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পরও একের পর এক এমন ঘটনা ঘটছে।

গুম তদন্ত কমিশনের সদস্য ও মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, সরকারের দিক থেকে দৃশ্যমান পদক্ষেপ দুর্বল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেওয়ার পরেও তারা একধরনের বিভ্রান্তিতে ভুগছে বলে মনে হয়। মানুষ এসব ঘটনায় সরকারের ওপর আস্থা রাখতে পারছে না। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকারের দৃশ্যমান শক্ত পদক্ষেপ দরকার।