‘১৫ বছরের কৃতকর্মের জন্য ফ্যাসিবাদের দোসর সাংবাদিকদের ক্ষমা চাওয়া উচিত’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, গত ১৫ বছরের কৃতকর্মের জন্য যারা ফ্যাসিবাদের দোসর সাংবাদিক, তাদের ক্ষমা চাওয়া উচিত। সাংবাদিকতা গত ১৫ বছরে মানুষের অধিকার হরণ করেছে ‘আমি সরি’ এই কথা আপনাকে বলতে হবে। অথবা ইন্টারনাল কমিশন করে বলতে হবে যে ওই সময়ে আমার সাংবাদিকতার মূল্য ছিল। মানুষ যেন আস্থা পায় যে আপনি নতুন করে শুরু করছেন। আমরা গণমাধ্যমের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনতে চাই।
বৃহস্পতিবার (১৫ মে) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে “ফ্যাসিবাদ মুক্ত গণমাধ্যম চাই” ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
শফিকুল আলম বলেন, মিডিয়ার একটা বড় অংশ হাসিনাকে বৈধতা দিয়ে আসছেন। শেখ হাসিনাকে আপনি বৈধতা দিচ্ছেন, তাই গণভুথানে অংশগ্রহণকারীদের সন্ত্রাসী বলছেন। আমরা সাংবাদিকের চাকরি খাচ্ছি না। কিন্তু তারা একদিনের নোটিসে আমার দেশ, দিগন্ত টিভি, ইসলামী টিভি বন্ধ করেছেন। আবুল আসাদকে অফিসে ঢুকে টেনে হেঁচড়ে বের করেছে, তাতেও আপনার কোনো কথা বলেননি।
কিছু কিছু সাংবাদিক চাকরি হারিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এর দায় অন্তর্বর্তী সরকারের না, মালিকের। মালিকরাই সাংবাদিকদের চাকরি খাচ্ছে। আমার কারো প্রশ করার জন্য চাকরি খাচ্ছি না, জোট কঠিন প্রশ্ন আছে করেন আমাদের কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু সঠিক প্রশ্নটি করেন। কোনো তথ্য বা এভিডেন্স দেখাতে পারবেন না যে আমরা মালিককে বলেছি চাকরি খেতে। প্রেস একরিডিশন কার্ড খুব দ্রুত দেওয়া শুরু হবে। আগে এই কার্ড নিষিদ্ধ ছাত্রলীগসহ অনেকের ছিল। সেটা বন্ধ করতে আমরা চেষ্টা করেছি।
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার বিষয়ে তিনি বলেন, ডেইলি স্টারে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ‘২৬৬ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয়েছে’। কিন্তু এটা কি সরকার করেছে? কে করেছে? এর পেছনে অন্তর্বর্তী সরকার দায়ী না। আমরা স্বচ্ছভাবে এই বিষয়টি তদন্ত করছি। আমরা কাউকে হয়রানি করছি না। খুব দ্রুত এই বিষয়টা সমাধান হবে।
প্রেস সচিব বলেন, আমরা কারো কথা বলার অধিকার কেড়ে নিচ্ছি না। কিন্তু তারপরও আমাদের বিরুদ্ধে অনেক সাংবাদিকরা লিখে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে আমরা কিছু জানতে চাইলেও পরে বলবে যে আমাকে হুমকি দিচ্ছে। আগে যে টেলিভিশন ছাত্রদের জঙ্গি ও সন্ত্রাসী বলেছে, এখন ওই ছাত্ররা যদি বলে আপনারা আমাদের হত্যার উস্কানি দিয়েছেন। এখন কেউ এটি বলতে গেলে সাংবাদিকরা বলবে যে মব তৈরি করা হচ্ছে। আমার নিজেদের ব্যর্থতার জন্য আমরা বিশ্বাস হারিয়েছি।
প্রেস সচিব বলেন, সাংবাদিকদের নতুন ইকনমিক রুল দরকার। বিশাল সাংবাদিকদের সংসার চলছে না, দিন আনতে পান্তা ফুরায়। কিন্তু ইউনিয়ন, মালিক ও দালালরা সব চুষে নিচ্ছে। আমাদের সাংবাদিকদের বিশ্বাসের জায়গাটা ফিরিয়ে আনতে হবে।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, প্রত্যেকটা মিডিয়ার জন্য সোশাল মিডিয়া গাইড লাগবে। এই পলিসি থাকলে কোনো গণমাধ্যম ক্ষতিগ্রস্থ হবে না। সোশাল মিডিয়ায় আপনি আমাকে ক্রিটিসাইজ করছেন, আপনার রিপোর্টেও তো তাহলে সে ভাবে আসবে। আপনি বলছেন এটা আপনার ব্যক্তিগত মত প্রকাশের জায়গা। আমরা কারো মুখ বন্ধ করছি না। কারো স্বাধীনতা বন্ধ করছি না। আমরা চাই নতুন বাংলাদেশে গণমাধ্যম স্বাধীনতা থাকুক, আপনি যেই দলই করুন না কেন। আবুল আসাদের মত সাংবাদিককে টেনে হিঁচড়ে যেন আর বের করা না হয়। মাহমুদুর রহমানের উপর হামলা করে যে রক্তাক্ত করা হয়েছিল সেখানে লিড দিয়েছে সাংবাদিক।
সংবাদ সম্মেলনে পিআইবির মহাপরিচালক ফারুখ ওয়াসিফ বলেন, জুলাই আগস্টে আমরা শত্রু ও বন্ধু চিনতাম কিন্তু এখন আমরা সেটা চিনতে পারছি না। ফ্যাসিবাদের দোসর সাংবাদিকরা অনুতপ্ত না। আসলে অপরাধে তাদের ভেতরটা নষ্ট হয়ে গেছে। আমরা সংগেস্কার ও ন্যায় বিচারের কথা বলছি কিন্তু সেটা কতটুকু হচ্ছি। তিন বছর পর হতাশার কথা বলার চেয়ে আজকে বলা ভালো।
তিনি বলেন, আমাদের যে মিডিয়া প্রথমে রয়েছে তারাই অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা ষড়যন্ত্রমূলক সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে ফেসিবাদকে। ৫ আগস্টের পর জুলাই যোদ্ধাদের উপর ৩৮টি হামলার ঘটনা করেছে। আমরা সজাগ না থাকলে জুলাই যোদ্ধাদের ওপর হামলা চালিয়ে যাওয়া হবে যে সরকারই আশুক না কেন। এ জন্য গণমাধ্যমকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, বিগত সরকারের সময়ে তাদেরকে তেল দেওয়া, তাদের গুণগান ও বয়ান দেওয়া ছিল গনমাধ্যমের কাজ। ৫ আগস্টের পর এখনও গনমাধ্যমে পরিবর্তন আসেনি। পতিত সরকারের সময়ে যেমন ছিল সেই রূপে ফিরে যাচ্ছে গণমাধ্যম।