কোম্পানির মুনাফার জায়গা গোখাদ্য হতে পারে না-মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, কৃষির উন্নতি হয়েছে সত্যি, কিন্তু একই সাথে আমরা গোখাদ্য নষ্ট করেছি। গরুর, তথা প্রাণিকূলের নিজের খাবারের পছন্দ-অপছন্দ আছে। খামারিদের অভিব্যক্তির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, গোখাদ্য কখনও বাণিজ্যিক কোম্পানিগুলোর মুনাফার জায়গা হতে পারে না। সেই জায়গা থেকে বিএলআরআই নেপিয়ার নিয়ে, ঘাসভিত্তিক খাদ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে কাজ করছে তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি আমাদের মাথায় রাখতে হবে, ঘাস উৎপাদনের জায়গা পর্যাপ্ত নয়। তাই আমাদের যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার মঙ্গলবার ২৯ এপ্রিল ২০২৫ খ্রি: সকালে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) এ আয়োজিত “Strengthening Partnership for Innovation in Livestock Research and Development” শীর্ষক সেমিনার উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা আরও বলেন, কৃষি ও প্রাণিসম্পদ আলাদা নয়; বরং অবিচ্ছেদ্য। তাই কৃষকদের মত প্রাণিসম্পদ লালন-পালনকারীদের সকল সুযোগ-সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। ইতোমধ্যেই প্রাণিসম্পদ খামারিদের জন্য পৃথক ব্যাংক তৈরির বিষয়ে সরকার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি খামারিদের স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যেও মন্ত্রণালয় কাজ করছে।
প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বলেন, দেশের মানুষের প্রয়োজনীয় আমিষের সরবরাহ নিশ্চিত করা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রধান দায়িত্ব। খামারিরা যেভাবে ডিম, দুধ, মাংস উৎপাদন করছে এর ফলেই আমাদের লক্ষ্য পূরণ হবে। কৃষি কাজ বা প্রাণিসম্পদ পালনকে মর্যাদাপূর্ণ কাজ হিসেবে নিতে হবে।
এসময় তিনি বিএলআরআই ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের ভালো বিজ্ঞানী আছে, ভালো কর্মকর্তা আছে। বিএলআরআই ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে আলাদা ভাবা যাবে না, তাদেরকে একসাথে কাজ করতে হবে।
সেমিনারে বিএলআরআই এর মহাপরিচালক ড. শাকিলা ফারুকের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অস্ট্রেলিয়ার চার্লস স্টার্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং ডেপুটি ডিরেক্টর গুলবালি ড. ক্যামেরন ক্লার্ক। এসময় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইনস্টিটিউটের অতিরিক্ত পরিচালক ড. এ বি এম মুস্তানুর রহমান।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অস্ট্রেলিয়ার চার্লস স্টার্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং ডেপুটি ডিরেক্টর গুলবালি ড. ক্যামেরন ক্লার্ক। প্রবন্ধে তিনি প্রাণিসম্পদ গবেষণা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে সম্পর্ক জোরদারকরণ এবং যৌথ কর্মকাণ্ড গ্রহণের সফলতা ও সম্ভাবনা এবং স্থানীয় সম্পদ ও জাতসমূহ ব্যবহার করে স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। এসময় তিনি অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ পালনের সাদৃশ্য ও সম্ভবনা নিয়েও আলোচনা করেন।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের পরে প্রবন্ধ সম্পর্কে আলোচনা করেন অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল এগ্রিকালচারাল রিসার্চ এর সাউথ এশিয়ান রিজিয়নের রিজিওনাল ম্যানেজার ড. প্রতিভা সিংহ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবু সুফিয়ান বলেন, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও বিএলআরআই এর মধ্যে চমৎকার একটি সম্পর্ক রয়েছে। প্রযুক্তিসমূহ মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারণের লক্ষ্যে প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পরপরই তা হস্তান্তরের লক্ষ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। একই সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারকরণের ওপরেও তিনি গুরুত্বারোপ করেন।
সেমিনারে বিএলআরআই এর বিভিন্ন পর্যায়ের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাবৃন্দ এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অংশগ্রহণকারী উদ্যমী খামারি ও উদ্যোক্তা এসময় উপস্থিত ছিলেন।