যমুনায় যাওয়ার চেষ্টাকালে আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জ

জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলনরত বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর জলকামান ও লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। তৃতীয় ধাপে বাদ পড়া এসব শিক্ষক প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ মারমুখী হয়ে ওঠে। এতে অন্তত পাঁচজন শিক্ষক আহত হয়েছেন।
আজ বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
বাংলাদেশ বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির ব্যানারে আন্দোলনরত শিক্ষকেরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি আদায়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছেন। বারবার আশ্বাসের পরও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় তাঁরা আজ প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে রওনা দেন। তবে কদম ফোয়ারা মোড়ে আগে থেকেই সতর্ক অবস্থানে ছিল পুলিশ।
শিক্ষকদের মিছিলটি কদম ফোয়ারার কাছাকাছি পৌঁছালে তাঁদের বাধা দিয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এত মানুষের একসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাঁরা চাইলে কয়েকজন প্রতিনিধি পাঠাতে পারেন। শিক্ষকেরা এতে রাজি হননি।
পরে তাঁরা বাধা উপেক্ষা করে এগোতে চাইলে পুলিশ প্রথমে জলকামান থেকে গরম পানি ছোড়ে। কিন্তু শিক্ষকেরা পিছু না হটলে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। এতে অন্তত পাঁচজন শিক্ষক আহত হন।
এর আগে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মো. ফিরোজ উদ্দিন বলেন, বৈষম্যের শিকার হচ্ছে সারা দেশের তৃতীয় ধাপে জাতীয়করণ থেকে বাদ পড়া চলমান যোগ্য বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো। গত ৩ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পাঠানো চিঠির দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে আমরা অবস্থান করছি। ২০১৩ সালে সারা বাংলাদেশের ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করলেও সমযোগ্যতা থাকার পরেও শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে সারা বাংলাদেশের চলমান যোগ্য ৪ হাজারের অধিক বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ থেকে বাদ পড়ে যায়। এর সঙ্গে ৮ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী তাদের মৌলিক অধিকার হতে বঞ্চিত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ২০১৫ সাল থেকে আমরা জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন করছি। ২০১৮ সালে ১৮ দিন, ২০১৯ সালে ৫৬ দিন, ২০২৪ সালের ১০ ও ১১ সেপ্টেম্বর এবং সর্বশেষ ২০২৫ সালের ২৫ থেকে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি। ২৫-২৭ জানুয়ারির আন্দোলনের ফলে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে একটি চিঠি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। আমরা এর দ্রুত বাস্তবায়নের জোর দাবি জানাচ্ছি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের এডিসি মীর আসাদুজ্জামান বলেন, ‘শিক্ষকদের আমরা অনেকবার বুঝিয়েছিলাম, আমাদের ডিসি মহোদয় ছিলেন। তাঁদের বলা হয়েছে, তাঁরা একটি প্রতিনিধি দল ঠিক করবেন, তাঁদের মূল বার্তা স্মারকলিপি আকারে মন্ত্রণালয়ে পৌঁছে দেওয়া হবে। তাঁরা এটাতে রাজি হয়েছিলেন। তারপর কথা ছিল তাঁরা মোড় পর্যন্ত যাবেন, আবার ঘুরে আসবেন। কিন্তু আপনারা দেখেছেন, তাঁরা রাস্তা অবরোধ করে রেখেছিলেন, যান চলাচল আটকে রেখেছিলেন। অনেকবার বলার পরও তাঁরা কথা শোনেননি। যেহেতু রমজান মাস, রাস্তা ব্লক থাকায় অনেকের কষ্ট হচ্ছিল। তখন তাঁদের আস্তে আস্তে ঠেলে আমরা রাস্তার পাশে সরিয়ে দিই। একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা পানি নিক্ষেপ করেছি।’