ঢাকা মঙ্গলবার, ৩০শে এপ্রিল ২০২৪, ১৮ই বৈশাখ ১৪৩১


কেন এমপি হতে চান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাফ ডজন শিক্ষক?


১৯ নভেম্বর ২০১৮ ২৩:৫৩

আপডেট:
৩০ এপ্রিল ২০২৪ ১৫:২৯

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দীন দায়িত্ব পালন করছেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আহবায়ক হিসেবে। বাংলাদেশ সমাজবিজ্ঞান সমিতির যুগ্ম সম্পাদক পদেও রয়েছেন তিনি। এখন সংসদ সদস্য (এমপি) হতে চান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সিনেট সদস্য। ভোলা-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে মনোনয়নপত্রও তুলেছেন।

শিক্ষকতা ছেড়ে কেন এমপি হতে চান— এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রাথমিক থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবক মিলিয়ে প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ সরাসরি শিক্ষা পরিবারের সঙ্গে জড়িত। আইনসভায় শিক্ষক সমাজের প্রতিনিধিত্ব সে তুলনায় অনেক কম। তাই শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অধিকার থেকে শুরু করে শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়নে শিক্ষা পরিবার থেকে আসা সংসদ সদস্যরাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে মনোনয়নপত্র কিনেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ শিক্ষক। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের হয়ে ৪ ও বিএনপির হয়ে ২ জন শিক্ষক নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান।

বিএনপির মনোনয়নপ্রার্থী শিক্ষকদের একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞানের অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম। মনোনয়নপত্র তুলেছেন বাগেরহাট-৩ আসন থেকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের আহ্বায়ক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক পদেও দায়িত্ব পালন করছেন মনোনয়নপ্রার্থী এ শিক্ষক।

নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জাতীয় সংসদ আইন প্রণয়নের প্লাটফর্ম। সেখানে শিক্ষা পরিবার থেকে প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তির উপস্থিতি জরুরি। বর্তমানে রাজনীতির ময়দানে ক্লিন ইমেজের প্রার্থী পাওয়া দুষ্কর। কলুষমুক্ত ও শিক্ষিত বিবেচনায় মনোনয়নের ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকব বলেই আমার বিশ্বাস।’

এছাড়া লক্ষ্মীপুর-১ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন চান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক।

মনোনয়নপ্রার্থী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইছেন। তাদের একজন সমুদ্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান জোবায়ের আলম। নীলফামারী-৩ আসন থেকে মনোনয়নপত্র তুলেছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির এ সদস্য। তিনি বলেন, ‘আমি কানাডায় পড়তে গিয়ে সেখানে পার্মানেন্ট রেসিডেন্টশিপ পাই। তবে আমি সেখান থেকে দেশে ফিরে এসেছি। কারণ আমি আমার দেশকে ভালোবাসি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসাবে অনেকদিন ধরে সেবা দিয়ে আসছি। তরুণ বয়সে বিভাগীয় চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনসহ বেশকিছু কারণে আমি এলাকার মানুষের কাছে জনপ্রিয়। বিশেষ করে এলাকার তরুণ প্রজন্মের দাবি সংসদ নির্বাচনে আমি যেন প্রতিনিধিত্ব করি। ’

সাতক্ষীরা-৩ আসনের সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র তুলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) অধ্যাপক ড. আবু ইউসুফ মো. আবদুল্লাহ। মনোনয়ন লাভের আশায় বেশ কিছুদিন ধরেই সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় জনসংযোগ করে আসছেন নর্দান ইউনিভার্সিটি ও নর্দান ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের এ প্রতিষ্ঠাতা। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিভাগের শিক্ষক ড. সেলিম মাহমুদ চাঁদপুর-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরিং কমিশনের (বিইআরসি) ট্রাইব্যুনালের প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।

এছাড়া রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারীরও বিকল্পধারা থেকে নির্বাচন করার সম্ভাবনা রয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশে শিক্ষকদের সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিষয়ে কী বলা হয়েছে?

স্বায়ত্তশাসনের ফলে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে আইনগত কোনো জটিলতা নেই বলে মনে করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তাঁরা বলছেন, শিক্ষকদের রাজনৈতিক সংগঠনে যুক্ত হওয়া ও জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশে সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। সে আলোকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন তারা।

শিক্ষকদের রাজনৈতিক সংগঠনে অংশগ্রহণ ও সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ বিষয়ে বলা হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয় অধ্যাদেশ ৫৬ (২) ধারায়। সেখানে বলা হয়েছে, যদি কোন শিক্ষক নির্বাচনে অংশ নিতে চান তাহলে নমিনেশন দাখিলের পূর্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে পদত্যাগ করতে হবে।

অধ্যাদেশের অংশটুকু পাঠকের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো- “Article 56 (2), " The service conditions shall be determined without any prejudice to the freedom of the teacher officer to hold any political view and to keep association with any lawful organization outside the university and shall be clearly stated in the country,...
Provided that if a teacher or other salaried employee of the University seeks election as a Member of Parliament, he shall before the date for filing the nomination resign from the service of the University.”