ঢাকা শনিবার, ১০ই মে ২০২৫, ২৮শে বৈশাখ ১৪৩২


হাঁক-ডাকেই শেষ আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী দমন


২৫ জানুয়ারী ২০২০ ২১:৩৬

আপডেট:
২৫ জানুয়ারী ২০২০ ২১:৪২

অনেক হাঁক-ডাক দিয়েও সিটি নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিবারণ করতে পারেনি আওয়ামী লীগ। কাউন্সিলর পদে বহাল তবিয়তে রয়ে গেছেন দলটির শতাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল  "বিজনেস ট্রিবিউন" এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য  উঠে এসেছে । 

প্রতিবেদনে  জানানো হয়, এ নিয়ে দলের অনেক নেতাই বিরক্ত, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আশঙ্কা এর ফলে সহিংসতা বাড়তে পারে। আবার এসব বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অনেকেই ‘শিথিলতা’ অবলম্বন করছেন, স্থানীয় নেতা-এমপিদের অনেকে এসব বিদ্রোহী প্রার্থীদের আস্কারাও দিচ্ছেন।

আওয়ামী লীগের কিছু কেন্দ্রীয় নেতার মতে, সিটি নির্বাচন জমজমাট করতে বিদ্রোহী প্রার্থীদের মাঠে রাখা প্রয়োজন। তবে দলের বেশিরভাগ নেতা মনে করেন, যেহেতু বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে; তাই এ নির্বাচনি মাঠে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী রাখা দলীয় বিশৃঙ্খলার নামান্তর।

আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, কৌশলগত কারণে শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহীদের বিষয়ে যেকোনো কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া থেকে সরে এসেছে ক্ষমতাসীনরা। তার বড় কারণ নির্বাচনে অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং জোর করে কাউকে বসিয়ে দিয়ে মেয়র পদের ভোটের হিসাব হিতে বিপরীত হয়ে যেতে পারে।

দলীয় সমর্থন থাকলেও শেষ পর্যন্ত ঢাকার দুই সিটির কাউন্সিলর পদে এক রকম উন্মুক্ত ভোট হবে। তবে সব প্রার্থীদের নৌকার পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচনের সমন্বয়ক দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু ও উত্তর সিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন।

কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। এর আগে উপজেলা নির্বাচনেও তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ও তাদের মদদদাতাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য সবার তালিকা প্রস্তুত করেও দল থেকে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি।

সেবারও দলের এমপি-মন্ত্রী-নেতারা নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করেছিলেন। তাদের বিরুদ্ধে তো ব্যবস্থা নেওয়াই হয়নি; উল্টো তাদের অনেকের দলে প্রমোশন হয়েছে।

আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে দলের জন্য কাজ করলেও মনোনয়ন পাননি অনেকেই। এ ক্ষোভ থেকে তারা প্রার্থী হয়েছেন।

তাদের দাবি, কেন্দ্রীয় নেতাদের ভুল বুঝিয়ে মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর পেছনে স্বজনপ্রীতি, অবৈধ অর্থের লেনদেন ও নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের ঘটনা রয়েছে।

দলের নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পেছনে অতীতের উদাহরণই বেশি দায়ী। কেননা এর আগের নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকলেও এ নির্বাচনে দলীয় সমর্থন পেয়েছে, এমন প্রার্থীর অভাব নেই।তাদের শাস্তি না দিয়ে পুরস্কৃত করা হয়েছে।

এতে নতুন করে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। এবার সিটি নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এটা আমাদের ওপর ছেড়ে দিন। অ্যাবস্যুলেটলি ইন্টারন্যাল ম্যাটার অব আওয়ার পার্টি।

আমাদের সমস্যাগুলো আমরা সমাধান করতে পারি বা না পারি তাতে আপনাদের (গণমাধ্যম) অসুবিধা কী? আমি একটু জানতে চাই, ‘বিদ্রোহী’ থাকলে আপনাদের অসুবিধা কী?’ তিনি বলেন, ‘১১ বছর ধরে আমরা ক্ষমতায় আছি, এত বড় দলে বিদ্রোহী প্রার্থীর মতো বিষয়গুলো থাকে। আমরা নির্বাচন করছি, এসব ছোটখাটো সমস্যাকে নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি।

আমরা নির্বাচনেও বিজয়ী হচ্ছি এবং বিরোধী দলের চ্যালেঞ্জও মোকাবেলা করছি।’ সূত্রগুলো জানায়, সাংগঠনিক শাস্তির ভয় না থাকায় আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা নেতারাও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর আনিসুর রহমান নাঈম। কিছুদিন আগে তিনি ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।

গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে থেকেও তিনি দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এমন অধিকাংশ বিদ্রোহীর পেছনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও স্থানীয় এমপিদের মদদ রয়েছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দলের পক্ষ থেকে হুমকি-ধমকি তো অনেক দেওয়া হয়েছে, কিন্তু অনেক বিদ্রোহী প্রার্থীই কথা শুনছেন না।

একটা কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া গেলে এ প্রবণতা কমত। তবে অতীতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার উদাহরণ নেই। দেখা যায় নির্বাচনের পর বিদ্রোহীরা আবার বিভিন্ন নেতাদের কাছে ঘুরঘুর করেন, মাফ চান। পরে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়।

এই বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে সংগঠনের অনেক ক্ষতি হয়। যিনি দলের সমর্থন পান আর যিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হন; পরে আর তাদের মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক হয় না।