ঢাকা শনিবার, ১০ই মে ২০২৫, ২৮শে বৈশাখ ১৪৩২


প্রার্থিতা হারাতে পারেন তাবিথ


২৪ জানুয়ারী ২০২০ ১৩:১৫

আপডেট:
১০ মে ২০২৫ ১৫:৫৪

উত্তর সিটি করপোরেশনের দলের মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়াল

জমজমাট প্রচারণা আর গণসংযোগে যখন সরগরম ভোটের মাঠ তখন বিএনপি নেতাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।

নির্বাচনের আগেই নির্বাচনি লড়াইয়ের মাঠ থেকে ছিটকে পড়ার আশঙ্কা প্রকট হয়ে উঠেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের দলের মেয়রপ্রার্থী তাবিথ আউয়ালের।

সম্প্রতি হঠাৎ করেই যখন তিন বছর আগের প্যারাডাইস পেপার্স কেলেঙ্কারিতে তাবিথ আউয়ালের নাম আসার ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

ঠিক তার কয়েকদিনের মধ্যেই নির্বাচন কমিশনে আসে প্রায় দুই মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সম্পত্তি গোপনের অভিযোগ। নির্বাচনের আগের এই স্বল্প সময়ে যদি নির্বাচন কমিশন তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পায় তাহলে তার প্রার্থিতা বাতিল নিশ্চিত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বৃহস্পতিবার বিকালে নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে কিছু বিষয়ে অভিযোগ দিয়ে তাবিথের প্রার্থিতা বাতিলের আবেদন করেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক।

তিনি জানান, ‘সিঙ্গাপুরে এনএফএম এনার্জি (সিঙ্গাপুর) প্রাইভেট কোম্পানি লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানিতে তাবিথ আউয়ালসহ তিনজনের শেয়ার রয়েছে।

এই তিনজন শেয়ারহোল্ডারের একজন তাবিথ আউয়াল। অন্য দুজন তার সহযোগী। তাবিথসহ তিনজন মিলে এ কোম্পানির সব শেয়ারের মালিক হয়েছেন।

এ কোম্পানির মূল্য দেখানো হয়েছে দুই মিলিয়ন মার্কিন ডলারের ওপরে।’ এএইচএম শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক বলেন, ‘এনএফএম এনার্জি (সিঙ্গাপুর) প্রাইভেট কোম্পানির কথা তাবিথ আউয়াল তার হলফনামায় উল্লেখ করেননি।

আইন হচ্ছে তার ও তার পরিবারের সব সদস্যের সব সম্পদ হলফনামায় দেখাতে হবে। কিন্তু তাবিথ আউয়াল তা দেখাননি। তাই তার মনোনয়ন আইনত বাতিল হতে বাধ্য।

’ যদি এটি না করা হয় তাহলে আগামী রোববার উচ্চ আদালতে একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে তাবিথের প্রার্থিতা বাতিলে উচ্চ আদালতে রিট করবেন বলেও জানান তিনি।

জানা গেছে, এই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে অবসরপ্রাপ্ত এই বিচারপতি ইসিকে উপযুক্ত প্রমাণও দিয়েছেন। বিষয়টি অস্বীকার না করলেও স্বীকারও করেননি তাবিথ আউয়াল।

তবে কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়া এখনই এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসতে নারাজ ইসি। নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম মানিককে আশ্বস্ত করেছেন, ইসির কমিশন সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।

কমিশনের সম্মতিতেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অভিযোগকারী এএইচএম শামসুদ্দীন বলেন, ‘এখন সমস্যা হচ্ছে সময়টা খুব কম। তাবিথ জিতে গেলেও যদি তার বিরুদ্ধে আমার দেওয়া এ অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অভিযোগে তিনি টিকতে পারবেন না।

ফলে তার সিট শূন্য হয়ে যাবে। আবার নতুন নির্বাচন হবে। এত ঝামেলার মধ্যে না গিয়ে আমার মনে হয় ইসি নির্বাচনের আগেই তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করে তার প্রার্থিতা বাতিল করবে।

’ অন্যদিকে এই প্রার্থীর বিরুদ্ধে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক)। ২০১৭ সালে প্যারাডাইস পেপার্স কেলেঙ্কারিতে নাম আসে বিএনপি নেতা আব্দুল আউয়াল মিন্টুসহ তার পরিবারের আরও চার সদস্যের।

এর মধ্যে ছিলে মিন্টুর স্ত্রী নাসরিন ফাতেমা আউয়াল, তাদের ছেলে তাবিথ আউয়াল, তাফসির মোহাম্মদ আউয়াল ও তাজওয়ার মোহাম্মদ আউয়াল।

এদের সঙ্গে আরও চার ব্যবসায়ীর নাম থাকলেও আসন্ন ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে সামনে রেখে পুনরায় তাবিথের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে সংস্থাটি। জানা গেছে, ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত অনুসন্ধান এগিয়ে নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্র্ড (এনবিআর) এবং বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে তাবিথের সম্পর্কে আরও খোঁজখবর জানতে চেয়েছে দুদক।

এ বিষয়ে এর আগে দুদক চেয়ারম্যানও বলেছিলেন, প্যারাডাইস পেপার্সে যাদের নাম এসেছে তারা সবাই প্রাইভেট পারসন। যাদের নাম ওই প্রতিবেদনে ছিল তাদের সম্পর্কে জানার জন্য বিভিন্ন দেশে এমএলএআর (মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্ট) পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এখনও এর জবাব আসেনি।

তাই আমাদের অনুসন্ধানও আর এগিয়ে যায়নি। তবে অনুসন্ধান চলছে। এমএলএআরের জবাব এলেই দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে একে গণতন্ত্র হত্যার জন্য সরকারের একটি ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘ষড়যন্ত্র হচ্ছে গণতন্ত্র হত্যা করার জন্য। এই অভিযোগটা ষড়যন্ত্রমূলক অভিযোগ। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে একটি তথ্য খোঁজ করা হচ্ছে।

এই কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশে সঠিকভাবে গণতন্ত্রের চর্চা করার সুযোগ হচ্ছে না।’ এর মাধ্যমে গণতন্ত্র ধ্বংস করার পাঁয়তারা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। অভিযোগের বিষয়ে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সময়ে কয়েকবার চেষ্টা করা হলেও তাবিথ আউয়ালের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।