ঢাকা মঙ্গলবার, ৩০শে এপ্রিল ২০২৪, ১৮ই বৈশাখ ১৪৩১


আওয়ামী লীগে প্রকট দ্বন্দ্ব, জামায়াত বিএনপি জোট


১৯ নভেম্বর ২০১৮ ১৮:১৩

আপডেট:
১৯ নভেম্বর ২০১৮ ১৮:২১

দিনাজপুর-৬ আসনে চাচা-ভাতিজা মনোনয়ন প্রত্যাশী। বিএনপি-জামায়াত দলীয় সিদ্ধান্তের উপর র্নিভর।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দলীয় পর্যবেক্ষণ এবং বিভিন্ন জরিপের ভিত্তিতে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য
ব্যক্তিদের বেছে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিএনপি নির্বাচনে
আসবে এমনটা ধরে নিয়েই প্রার্থী তালিকা করা হচ্ছে। নানা কারণে বিতর্কিত হয়েছেন কিংবা দল ও সরকারের ভাবমূর্তি
প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন এমন শতাধিক এমপি-মন্ত্রী দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারেন।


দিনাজপুর জেলার আসনে মহাজোটের শরিক ১ জন । তবে মহাজোটের শরিক দলগুলোকে কয়টি আসন দেয়া হবে এ বিষয়টি
এখন পর্যন্ত নিশ্চিত না হওয়ায় মনোনয়ন প্রত্যাশিদের দুশ্চিন্তা আরো বেড়ে গেছে।


দিনাজপুর জেলায় সংসদীয় আসন ৬টি। এখানে ৪ জনের মনোনয়ন নিশ্চিত হলেও ২টি আসনের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোন
সিদ্ধান্ত হয়নি। দিনাজপুর- ২ আসনে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ৩ আসনে ইকবালুর রহিম, ৪ আবুল হাসান মাহমুদ আলী, ৫
মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এর মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়েছে।


দিনাজপুর-১ বীরগঞ্জ-কাহারোল আসনের সাংসদ মনোরঞ্জন শীল। তার বিরুদ্ধে অনেক দূর্ণীতি এর অভিযোগ তুলেছে দলের
নেতাকর্মীরা।গত ৫ সেপ্টেম্বর স্থানীয় নেতাকর্মীরা তাকে অবাঞ্চিত ঘোষনা করে। ওই আসনে বর্তমান সাংসদ ছাড়াও অন্তত
চারজন প্রার্থী মাঠে আছেন।


দিনাজপুর-২ আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত হলেও দিনাজপুর-২ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসাবে এলাকায় গনসংযোগ করতে দেখা
গেছে সাবেক মন্ত্রী সতীশ চন্দ্র রায় এর সুযোগ্য ছেলে ডাঃ মানবেন্দ্র রায় (মানব)। ডাঃ মানবেন্দ্র রায় বলেন, মাননীয়
প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা মানেই উন্নয়ন, নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতু, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, রাস্তা-ঘাট এমনকি বাংলাদেশ
এখন ডিজিটাল বাংলাদেশে রুপান্তরিত হয়েছে। জননেত্রী শেখ হাসিনার মাধ্যমে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং যাবে। তবে
এলাকাবাসীর দাবী, দিনাজপুর-১ আসনে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ও দিনাজপুর-২ আসনে ডাঃ মানবেন্দ্র রায় (মানব) কে
নৌকা প্রতিক এ দেখতে চায়।


দিনাজপুর- ৩,৪,৫ আসনে আওয়ামীলীগ প্রার্থী চূড়ান্ত। বিএনপি-জামায়াত দলীয় সিদ্ধানের উপর । দল যদি
নির্বাচনে অংশগ্রহন করে তবেই তারা নির্বাচন করবেন এবং মাঠে গনসংযোগ করবেন বলে স্থানীয় দলীয় সূত্রে
জানা গেছে।
দিনাজপুর-৬ দিনাজপুর জেলার সবর্দক্ষিণ-পূবার্ঞ্চলের চার উপজেলা বিরামপুর, নবাবগঞ্জ, হাকিমপুর ও ঘোড়াঘাট
উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদীয় এলাকা-১১ ও দিনাজপুর-৬ আসন। আর আওয়ামীলীগের যত দ্বন্দ এই

আসনেই।এই আসনেই চাচা-ভাতিজা মনোনয়ন প্রত্যাশী। একজন বতমান সাংসদ শিবলী সাদিক অপর জন
জাতীয় পার্টির দেলওয়ার হোসেন। এই আসনে ২৪টি ইউনিয়ন, তিনটি পৌরসভায় প্রায় চার লাখ ভোটার। এই আসনে
একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনের হাওয়া ফেলেছে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। বতর্মান সময় লেগে থাকা দলীয়
কোন্দল এভাবে চলতে থাকলে এই আসনটি আবারও আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন খোদ
আওয়ামী লীগের নেতাকমীর্রা।


আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নিবার্চনকে সামনে রেখে বতর্মান সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন আওয়ামী লীগের
মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। তাদের মধ্যে একজন জেলা আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা আলতাবুজ্জামান মিতা, অপরজন ২০০৮
সালের নির্বাচিত সাবেক সংসদ সদস্য ড. আজিজুল হক চেীধুরী। তবে নতুন মুখের মধ্যেও বেশ জোরে সোরে মাঠে রয়েছেন
বিরামপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ এর সভাপতি মোঃ মিজানুর রহমান ও নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ
সম্পাদক আতাউর রহমান। বতর্মান সংসদ সদস্য শিবলি সাদিকের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্ণীতি, নিয়োগ বাণিজ্য, স্বজনপ্রীতি ও
দলীয় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ তুলেছেন নেতাকর্মীরা। তার নিজ দলের নেতাকর্মীরা হয়েছেন আঙ্গুর ফুলে কলাগাছ।এ
ছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরী নিয়োগকে কেন্দ্র করে উপজেলা নিবার্হী অফিসার ও উপজেলা শিক্ষা কমর্র্কতাকে
শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগের অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশী মিজানুর রহমান
অভিযোগ করে বলেন, বতর্মান সংসদ সদস্য শিবলি সাদিক ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নিবার্চনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত
হওয়ার পর দলের ত্যাগী নেতাকমীদের বাদ দিয়ে তার নিজস্ব বাহিনী(জামায়াত-বিএনপি) গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।
এতে প্রতিটি উপজেলায় দলীয় ও অঙ্গসংগঠনগুলোতে দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। শুধু তাই নয়, স্থানীয় নিবার্চনগুলোতে দলীয়
মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে, তার পছন্দের ব্যক্তিকে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেন, এতে স্থানীয় নিবার্চনে দলীয়
প্রাথীদের পরাজয় ঘটে। এ কারণে দলের ত্যাগী নেতাকমীর্রা তার বিপক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন। আগামী নিবার্চনকে সামনে
রেখে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে বতর্মান সংসদ সদস্য শিবলি সাদিকের বিপরীতে মাঠে নেমেছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী।
তাদের মধ্যে অনেকে ব্যানার-ফেস্টুন দিয়ে নিজেকে মানোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে ঘোষণা দিলেও মাঠে গণসংযোগ করছেন
বিরামপুর উপজেলা আওয়ামীলীগ এর সভাপতি ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর ঘনিষ্ট সহচর ডাঃ মোঃ
ওয়াকিল উদ্দিন মন্ডল এর ভাতিজা মোঃ মিজানুর রহমান মন্ডল ও নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক
আতাউর রহমান, তারা দিনরাত সভা-সেমিনার, গণসংযোগ ও উঠানবৈঠক শুরু করেছেন।


এদিকে আগামী নিবার্চনে দিনাজপুর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক লুৎফর রহমান
মিন্টু এবং কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সভাপতি ও ড্যাব নেতা ডা. জাহিদ হোসেন ও নবাবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ
সম্পাদক এ. জে. সাহাবুদ্দিন সুজন সম্ভাব্য দলীয় প্রার্থী হিসেবে নাম শোনা গেলেও মাঠে আছেন সাবেক ছাত্র নেতা ও নবাবগঞ্জ
উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এ. জে. সাহাবুদ্দিন সুজন। এ ব্যাপারে দিনাজপুর জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও
জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক লুৎফর রহমান মিন্টু বলেন, দল নিবার্চনের সিদ্ধান্ত নিলে মাঠে নামবেন। এ ছাড়া আছেন
কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-সভাপতি ও ড্যাব নেতা ডা. জাহিদ হোসেন। তার বাড়ি নবাবগঞ্জ উপজেলায়। গত আগস্ট মাসে
বিরামপুর ও নবাবগঞ্জে বিএনপির সদস্য সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধন করেন ডা. জাহিদ।

এ ছাড়া মাঠে রয়েছেন জাতীয় পার্টি (জাপা) দিনাজপুর জেলা কমিটির সভাপতি ও বতর্মান সংসদ সদস্য শিবলি সাদিকের
বড় জ্যাঠা বিনোদনকেন্দ্র স্বপ্নপুরীর মালিক দেলওয়ার হোসেন। তবে জোটগত নিবার্চন হলে এই আসনটি জামায়াতে
ইসলামীকে ছেড়ে দেয়া হতে পারে বলে দাবি করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতারা। সে ক্ষেত্রে জোটের প্রার্থী হতে পারেন
জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির আনোয়ারুল ইসলাম। তার বাড়ি হাকিমপুর উপজেলায়।

বিরামপুর উপজেলা
আওয়ামীলীগ এর সভাপতি মোঃ মিজানুর রহমান মন্ডল বলেন, গত ইউপি নিবার্চনে সংসদ সদস্যের দেয়া বিদ্রোহী প্রার্থী জন্য
চার উপজেলায় ২৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৭টি ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী পরাজিত হন। শুধু ইউপি নিবার্চনে নয়, একইভাবে
উপজেলা নিবার্চনে চারটি উপজেলার মধ্যে তিনটিতে পরাজয় হয়, তিনটি পৌরসভার মধ্যে দুটি পরাজিত হয় দলীয় প্রার্থী। এ
ছাড়া নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান বলেন, সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী প্রতিটি
উপজেলায় একটি করে স্কুল-কলেজ জাতীয়করণ করা হয়।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, নবাবগঞ্জ উপজেলা ঐতিহ্যবাহী
কলেজ হচ্ছে দাউদপুর ডিগ্রি কলেজ। এই কলেজটি ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। অথচ সংসদ সদস্য শিবলি সাদিক স্বজনপ্রীতির
মাধ্যমে তার নিজ এলাকায় উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে আফতাবগঞ্জ কলেজকে জাতীয়করণের
করছেন। প্রধান মন্ত্রী ঘরে ঘরে বিদ্যুত দিয়েছেন আর এমপির দলের নেতারা গ্রামের অসহায় মানুষের কাছ থেকে মিটার প্রতি
৫ থকে ৭ হাজার করে টাকা নিয়েছেন। মসজিদের বরাদ্দের ৫৮ হাজার টাকা দিয়েছে ৫ হাজার টাকা।

কাবিখার বরাদ্দের এক
কোদাল মাটিও দেয়নি সব হরিলুট। ভূমিহীনদের বাড়ী দিচ্ছে সরকার আর তাতে নাম ঢুকিয়ে দেওয়ার কথা বলে হাজার
হাজার টাকা প্রায় ইউনিয়ন ওয়ার্ড এর গরীব দুঃখী মানুষের কাছ থেকে নিয়েছে এমপির নেতারা। দিনাজপুর-৬ আসনের
অনেক মুক্তিযোদ্ধাদের মিথ্যা মামলা দিয়েছে বর্তমান এমপি মহোদয়। ইউনিয়ন ও পৌর নির্বাচনে প্রকাশ্য নৌকার বিরোধিতা
করেছে এমপি মহোদয় বলেছে, এসব ছোট ছোট নির্বাচনে নৌকায় ভোট না দিলেও চলবে। নবাবগঞ্জ উপজেলার মতিহারা
দিঘীপাড়া কয়লা খনিতে খনিতে চাকুরী দেওয়ার নাম করে ৩শত মানুষের কাছে ৫ লক্ষ টাকা করে নিয়েছেন এমপির পিএস।
অপর মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বলেন, বতর্মান সংসদ সদস্য শিবলি সাদিককে বাদ দিয়ে যে কাউকে মনোনয়ন দিলে তারা এক
হয়ে কাজ করবেন ।

এ জন্য অনেক সময় বতর্মান সংসদ সদস্যকে বাদ দিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের বিশাল বহর সঙ্গে নিয়ে
বাকি মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এক সঙ্গে সভা-সমাবেশ করেছেন। তবে এলাকাবাসীর দাবী নৌকা প্রতিকে এই আসনে এবার
নতুন মুখ দেখতে চান।বতমান সময়ে দুই নেতাকে এক সঙ্গে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে তারা হলেন, বিরামপুর উপজেলা
আওয়ামীলীগ এর সভাপতি মিজানুর রহমান ও নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ এর সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান।
এদিকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, জনগণের আকাক্ষার বহিঃপ্রকাশ ঘটনার জন্য
নিরপেক্ষ নিবার্চন হলে কেবল বিএনপি সেই নিবার্চনে অংশগ্রহণ করবে। তার দল যাকে মনোনীত করবে তাকে নিয়ে তিনি
নিবার্চনে কাজ করবেন।