ঢাকা শুক্রবার, ১৭ই মে ২০২৪, ৩রা জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১


সুদমুক্ত ঋণের টাকার গাড়ি চলে উবারে


৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ১১:৫৯

আপডেট:
১৭ মে ২০২৪ ০৩:১০

মতিঝিলে নামকরা স্কুলের সামনে দাঁড়ানো একটি সরকারি গাড়ি। ড্রাইভার অপেক্ষা করছে কখন তার বসের ছেলে স্কুল থেকে বের হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই ড্রাইভার জানালেন, গাড়িটি একটি প্রকল্পের।

আরও একজন ড্রাইভারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, গাড়িটি তার বসের অধীনস্ত একটি সংস্থার। অনেক প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেল, সুদমুক্ত ঋণের টাকার গাড়ি এখন উবারে চলে।

সচিবালয়ের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিজের গাড়ি থাকা সত্বেও অন্যদের সঙ্গে মাইক্রোবাসে যান তার বাড়িতে।

কোথায় তার নিজের অফিসের গাড়ি আর কোথায় তার ঋণের টাকার গাড়ি? এসব প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, তার সরকারি গাড়ি বাসার ছেলেমেয়েদের কাজে ব্যবহার হচ্ছে। আর ঋণের টাকার গাড়ির ব্যাপারে কোনো উত্তর দিতে পারলেন না।

এই মন্ত্রণালয়ের ২৮ জন কর্মকর্তা সুদমুক্ত ৩০ লাখ টাকা পেয়েছেন গাড়ি কেনার জন্য। আর প্রতি মাসে বেতনের সঙ্গে পাচ্ছেন গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ ৫০ হাজার টাকা। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এদের অধিকাংশ কর্মকর্তার গাড়ি অফিসে আর আনেন না। কোথায় থাকে এই গাড়ি?

সরকারি কর্মকর্তাদের এই সুদমুক্ত গাড়ি নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ উঠেছে। আর এই অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় একটি চিঠি পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ সচিবসহ সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবের কাছে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো কোনো কর্মকর্তা সুদমুক্ত ঋণের অর্থে কেনা গাড়ি ও সরকারি যানবাহন ব্যবহারে বিভিন্ন অনিয়ম করছেন। যা সরকারি কর্মচারীর অসদাচরণ ও দুর্নীতির আওতাভুক্ত অপরাধ। সুদমুক্ত ঋণের টাকায় কেনা গাড়ি ও সরকারি যানবাহন অপব্যবহার রোধ করতে বেশ কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আর নির্দেশনায় প্রথমেই বলা হয়েছে, প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত বিশেষ অগ্রিম ও গাড়ি সেবা নগদায়ন নীতিমালা অনুযায়ী শতভাগ রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় গ্রহণের ক্ষেত্রে সুদমুক্ত ঋণের অর্থে কেনা গাড়ি ব্যবহার করতে হবে।

এ ক্ষেত্রে সরকারি কিংবা অধীনস্ত দফতর কিংবা সংস্থার যানবাহন ব্যবহার করা যাবে না। দ্বিতীয় নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রেষণ কিংবা মাঠ প্রশাসনের কিংবা প্রকল্পে কর্মরত কোনো কর্মকর্তার সার্বক্ষণিক সরকারি যানবাহন ব্যবহারের সুবিধা থাকলে সুদমুক্ত ঋণের অর্থে কেনা গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বাবদ নির্ধারিত অর্থের ৫০ শতাংশ প্রাপ্য হবেন। তৃতীয় নির্দেশনা হচ্ছে, কর্মস্থলে যাতায়াতের ক্ষেত্রে সুদমুক্ত ঋণের অর্থে কেনা গাড়ি ব্যবহার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারি কিংবা অধীনস্ত দফতর কিংবা সংস্থার যানবাহন ব্যবহার করা বিধিসম্মত নয়।

চিঠিতে বেশ স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়েছে, যারা সুদমুক্ত ঋণের অর্থে কেনা গাড়ি কিংবা যানবাহন ব্যবহার নীতিমালা অনুসরণ করবেন না তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে নীতিমালা অনুসরণ করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের জন্য সব সচিবদের অনুরোধ করা হয়েছে।

সরকার ২০১১ সালে সুদমুক্ত ৩০ লাখ টাকা ঋণের অর্থ দিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ি কেনার সুযোগ করে দেন। তবে এই সময় প্রথমে সচিব থেকে শুরু করে যুগ্ম সচিব পর্যায়ে দেওয়া হয়। ২০১৭ সালে উপসচিব পর্যায়ে কর্মকর্তাদের জন্য একই সুযোগ দেওয়া হয়। গাড়ি কেনার পাশাপাশি গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণসহ ড্রাইভারদের বেতন বাবদ প্রতি মাসে বেতনের সঙ্গে ৫০ হাজার টাকা নগদায়ন ব্যবস্থা করে। কিন্তু এই সুযোগকে অপব্যবহার করেছে বলে একাধিক সূত্রে অভিযোগ উঠে। যে কারণে বাধ্য হয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতে হলো।