ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও পটুয়াখালী জেলা বাদে সব কমিটিতেই পুরনোরাই বহাল থেকেছে,
পুরনো ও বিতর্কিতরাই বহাল

সম্মেলনের মধ্য দিয়ে সংগঠনের সর্বস্তরে নতুন নেতৃত্ব তুলে আনা হবে এমন বার্তা দিলেও কার্যত সারা দেশে পুরনো নেতৃত্বের ওপরই আস্থা রাখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব। ফেনী, নোয়াখালী, রংপুর, নড়াইল, কুষ্টিয়া, যশোর, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও পটুয়াখালী মিলে এ পর্যন্ত এক ডজন জেলার সম্মেলন সম্পন্ন করেছে দলটি। ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ ও পটুয়াখালী জেলা বাদে সব কমিটিতেই পুরনোরাই বহাল থেকেছে, নতুন করে দায়িত্ব পেয়েছে। এ নিয়ে দলের মাঠকর্মীদের ভেতরে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
তৃণমূল নেতারা বলছেন, নেতৃত্ব পরিবর্তনের যে বার্তা কেন্দ্র থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সে কথা রাখছে না কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তৃণমূল নেতারা বলেন, যদি পুরনোরাই নেতৃত্বে থাকবেন তাহলে সম্মেলন আয়োজনের প্রয়োজন কী? এতে করে দলাদলি বাড়ে। দলের ভেতরে একে অন্যের প্রতিপক্ষ হয়ে উঠে। পরে মারামারির পরিবেশ সৃষ্টি হয়। সম্মেলনে যারা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী থাকে তাদের কর্মী-সমর্থকরা হতাহতের শিকার হয়। যশোর জেলা আওয়ামী লীগের গত কমিটির সহসভাপতি পর্যায়ের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, সম্মেলন শেষে ঢাকার নেতারা চলে যান। কিন্তু সম্মেলনকে ঘিরে পরে যেসব মারামারি হয় তার কোনো খবর রাখে না, ব্যবস্থাও নেয় না কেন্দ্র থেকে। তাই আমি মনে করি পুরনোদের দায়িত্বে বহাল রাখতে হলে কেন্দ্র থেকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রেসে পাঠিয়ে দিলেই হয়। তাতে দলাদলিও হবে না, মারামরিও হবে না।
তৃণমূল নেতারা দেশ রূপান্তরকে আরও বলেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে সর্বস্তরের নেতৃত্ব পরিবর্তনের আভাস দেওয়া হলেও সেটি না করে পুরনোদেরই নতুন করে দায়িত্ব দিয়ে ঢাকায় ফিরে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় নেতারা। নড়াইল ও নোয়াখালী জেলার গত কমিটির দুই শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দেশ রূপান্তরকে বলেন, সংগঠন শক্তিশালী করার মতো নেতৃত্ব বেছে নিতে ব্যর্থ হচ্ছে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। কুষ্টিয়া ও রংপুর জেলার সাবেক চার নেতা বলেন, দলীয় সংসদ সদস্যদের ইচ্ছার বাইরে যেতে পারছে না সম্মেলনে আসা কেন্দ্রীয় নেতারা। ওই চার নেতা বলেন, সম্মেলনের আগে ঢাকায় গিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের ‘ম্যানেজ’ করে জেলায় ফেরেন পুরনো নেতারা। সে অনুযায়ী আবারও তারা পদ-পদবি বাগিয়ে নিচ্ছেন। যোগ্য ও ত্যাগী নেতারা বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছেন। ওই নেতারা আরও বলেন, চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযান প্রশ্নবিদ্ধ করার মতো নেতারাও আসছেন জেলার দয়িত্বে। যা অনাকাি•ক্ষত, অপ্রত্যাশিত। তৃণমূলের এসব নেতা বলেন, আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জেলার নেতৃত্ব নিয়ে একাধিকবার বলেছেন, দলীয় সংসদ সদস্যরা জেলা-উপজেলায় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাবেন না। ঢাকা থেকে সম্মেলন স্থলে এসে কেন্দ্রীয় নেতারা কার্যত সেই সিদ্ধান্তও বেমালুম ভুলে যাচ্ছেন। উপজেলায়ই অন্তত এক ডজন দলীয় সংসদ সদস্যরা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের পদ পেয়েছেন। সাতড়্গীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার সভাপতি হয়েছেন দলীয় সাংসদ এসএম জগলুল হায়দার, যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলায় সভাপতি হয়েছেন রণজিৎ রায়, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলায় সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন আনোয়ারুল আজিম, পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় সভাপতি হয়েছেন আ স ম ফিরোজ, কলাপাড়া উপজেলায় সভাপতি হয়েছেন মহিবুর রহমান মহিব।
তৃণমূল নেতাদের এ অসন্তোষ নিয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, এখানে নতুন-পুরনো বলে কোনো নিয়ম নেই। যারা সংগঠন পরিচালনায় নিজেদের দক্ষতা-যোগ্যতা প্রমাণ করতে পেরেছেন তারাই নেতা হচ্ছেন। কেন্দ্রীয় নেতারা মনে করেন ভবিষ্যতেও তারা যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারবেন। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে পারবেন। কেন্দ্রীয় নেতারা বলেন, নেতা নির্বাচনের ড়্গেত্রে সবার আগে সংগঠনের কথা ভাবা হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেন, নেতৃত্ব কি সরকারি চাকরি যে তিন-পাঁচ বছর পর তাকে বদলে দিতে হবে। জেলা সম্মেলনগুলোতে গিয়ে আমরা দেখেছি রাজনৈতিকভাবে কে যোগ্যতা প্রমাণ করতে পেরেছে, সেটি। যাকে আমরা যোগ্য-দক্ষ মনে করছি তাকেই দায়িত্ব দিয়ে আসছি। এখানে পুরনো-নতুন বলে কোনো নিয়ম নেই। তিনি বলেন, তাছাড়া কাউন্সিলরদের ভোটকে আমরা মেনে নিই। কোনো জেলাই তো ভোট হয়নি জানতে চাইলে এ নেতা বলেন, সরাসরি ভোট না হলেও কণ্ঠভোট আছে, কাউন্সিলররা কণ্ঠভোটে সমর্থন দেন।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, সারা দেশে সর্বস্তরের নেতৃত্ব বদলের একটি সিদ্ধান্ত দলের রয়েছে। সংসদ সদস্যদেরও পদ না দেওয়ার ব্যাপারটি আমাদের সিদ্ধান্তে রয়েছে। তিনি বলেন, সংগঠন পরিচালনা করার মতো দক্ষ কোনো নেতা না থাকলে সেখানে পুরনো নেতারাই দায়িত্ব পাচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, আমাদের নেতা শেখ হাসিনা বয়স্ক রাজনীতিবিদদের সম্মান করেন। ফলে প্রবীণ রাজনীতিবিদদের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত অনেক ক্ষেত্রে শিথিল করতে হচ্ছে।