ঢাকা শনিবার, ৪ঠা মে ২০২৪, ২১শে বৈশাখ ১৪৩১


নির্বাচনে যাচ্ছে বিএনপি !


১০ নভেম্বর ২০১৮ ১৪:২৭

আপডেট:
৪ মে ২০২৪ ০৫:০৩

 

আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে বিএনপি। দলের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি দেশি-বিদেশিরাও বিএনপিকে এবার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জোর পরামর্শ দিচ্ছেন। বিগত দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনের মতো আর 'ভুল' না করার অনুরোধ করছেন তারা। একই সঙ্গে ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারাও নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করছেন। বৃহস্পতিবার রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি এবং ২০ দলীয় জোটের বৈঠকেও বেশিরভাগ নেতা আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে মত দিয়েছেন। দলের কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে প্রাথমিকভাবে 'ইতিবাচক বার্তা' পাঠিয়েছেন। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে দল ও ২০ দলীয় জোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতাদের বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

তবে দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, সরকারের সঙ্গে সংলাপ ফলপ্রসূ না হলেও দলীয় প্রধান খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আন্দোলনের অংশ হিসেবেই শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যেতে পারে বিএনপি। আজ বা কাল দল ও জোট এবং ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বৈঠকে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

নির্বাচনে যেতে হলে আজ শনিবার বা আগামীকাল রোববারের মধ্যে 'চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত' নিতেই হবে বিএনপিকে। কারণ, আগামীকালের মধ্যে কোন দল কোন জোটের সঙ্গে 'নির্বাচনী মোর্চা' করবে- তা নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) লিখিতভাবে জানাতে হবে। এমনকি দলীয় 'প্রতীক' কার স্বাক্ষরে বরাদ্দ করা হবে, তার নাম ও নমুনা স্বাক্ষরসহ ইসিকে জানাতে হবে। ইসির পক্ষ থেকে এ-সংক্রান্ত চিঠি সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়েছে বলে গতকাল জানিয়েছেন সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।

অবশ্য বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দৈনিক আমাদের দিনকে বলেন, সরকার আবার একটি একতরফা নির্বাচনের ষড়যন্ত্র করছে। সে লক্ষ্যে তারা রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত উপেক্ষা করে নির্বাচন কমিশনকে দিয়ে একতরফা তফসিল ঘোষণা করিয়েছে। সমান সুযোগ ছাড়া কোনো নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে না। এ পরিস্থিতিতে আজ বিএনপি দলীয় ফোরাম, ২০ দল এবং সর্বোপরি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বৈঠকে নির্বাচনে অংশ নেবে কি নেবে না, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।

রাজনৈতিক মাঠ অনুকূলে না থাকায় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে 'কৌশলগত' ভূমিকা নেবে বিএনপি। এ কারণে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে রাজি নন দলটির নীতিনির্ধারক নেতারা। দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত, দলের স্থায়ী কমিটির সিদ্ধান্ত, ২০ দল এবং সর্বোপরি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তের আগে কেউ এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছেন না।

তবে নাম প্রকাশ না করে দলের একাধিক সিনিয়র নেতা বলেন, বিএনপির সামনে এখন দুটি পথ খোলা- রাজপথে আন্দোলন অথবা নির্বাচনে অংশ নেওয়া। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনসহ বেশ কিছু দাবিতে দীর্ঘদিন থেকে আন্দোলন করে আসছে বিএনপি। রাজনীতির মাঠে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করতে গত অক্টোবরে আরও কয়েকটি দলের সঙ্গে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয় তারা। কিন্তু আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কঠোর অবস্থানের মুখে রাজপথে আন্দোলন করে দাবি আদায়ের মতো সাংগঠনিক শক্তি কারও নেই। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী ছাড়া আর কোনো শরিক দলের নেতাকর্মী রাজপথে নামার মতো নেই। এ পরিস্থিতিতে নেতাকর্মীদের নির্যাতন, হামলা-মামলার মুখে ঠেলে না দিয়ে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অংশ হিসেবেই নির্বাচনে যাওয়া উচিত হবে।

দলীয় সূত্র জানায়, দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে অনেক আগে থেকে বিএনপি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দল থেকে মাঠপর্যায়ের নেতাদের আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে দলের চেয়ারপারসন ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিশেষ বার্তাও পাঠানো হয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো আর ভুল করতে রাজি নয় তারা। দলের সিনিয়র নেতারা এরই মধ্যে 'খালি মাঠে গোল' দিতে দেওয়া হবে না বলে বক্তব্য-বিবৃতি দিচ্ছেন। বিনা চ্যালেঞ্জে মাঠ ছেড়ে দেবেন বলে না সরকারি দলকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে আসছেন।

সূত্র আরও জানায়, এরই মধ্যে বিএনপি ৩০০ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে একাধিক জরিপও চালিয়েছে। জরিপে প্রতি আসনে ত্যাগী, যোগ্য ও জনপ্রিয় প্রার্থীদের ক্রমানুসারে তিনজনের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি ২০ দলীয় জোট এবং সম্প্রতি গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের জন্য প্রায় একশ' আসনের খসড়া তালিকা তৈরি করে রেখেছেন। দলের থিঙ্কট্যাঙ্ক ও সিনিয়র নেতারা নির্বাচনী মেনিফেস্টোর খসড়াও তৈরি করে রেখেছেন। কেন্দ্রের নির্দেশে গোপনে সারাদেশে প্রতিটি ওয়ার্ডকেন্দ্রিক নির্বাচন পরিচালনা কমিটিও গঠন করে রেখেছেন। ওই কমিটি ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট হিসেবে একাধিক সৎ ও সাহসী কর্মীর নাম তালিকাভুক্ত করে রেখেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ সমকালকে বলেন, সরকার আবারও একতরফা নির্বাচন করার সব আয়োজন সম্পন্ন করেছে। এ পরিস্থিতিতে তাদের নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। সার্বিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন করে দল ও জোট নেতারা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান সমকালকে বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের ব্যাপারে বৈঠকে বেশির ভাগ নেতা মত দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে না যাওয়ার ব্যাপারেও মত দিয়েছেন। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

এদিকে, জামায়াতসহ নিবন্ধন না থাকা দলগুলোর সঙ্গে জোটবদ্ধ নির্বাচন নিয়েও জটিলতা রয়েছে বিএনপির। জামায়াতে ইসলামী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে চাচ্ছে না বলে সূত্র জানিয়েছে। অন্যদিকে, নতুন ঐক্যফ্রন্ট নিয়ে আসন জটিলতা হতে পারে। শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলেও নিজ দল, ২০ দল এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আসন বণ্টন নিয়ে নতুন সংকটে পড়বে দলটি। আশানুরূপ আসন না পেলে শেষ মুহূর্তে জোটে ভাঙন ধরার আশঙ্কা রয়েছে।