ঢাকা বুধবার, ৮ই মে ২০২৪, ২৫শে বৈশাখ ১৪৩১


হৃদরোগের পর্যাপ্ত চিকিৎসা নেই বিএসএমএমইউতে


৫ মার্চ ২০১৯ ২১:৩২

আপডেট:
৮ মে ২০২৪ ০০:০৮

হৃদরোগের পর্যাপ্ত চিকিৎসা নেই বিএসএমএমইউতে

দেশের একমাত্র চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয় ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে’ হৃদরোগের পর্যাপ্ত চিকিৎসা নেই। কার্ডিয়াক সার্জারি, কার্ডিওলজি ও শিশু কার্ডিওলজি বিভাগের অনেক গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি নষ্ট।

এমনকি এই বিভাগে কর্মরত কয়েকজন ‘অধ্যাপক’ পদবির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের হৃদরোগ চিকিৎসার দক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ফলে এখানে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কার্ডিওলজি বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, চিকিৎসাধীন রোগীদের বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বাইরের হাসপাতালে যেতে হয়। বছরের পর বছর ধরে অনেক যন্ত্রপাতি নষ্ট। ফলে হৃদরোগের পূর্ণ চিকিৎসা এখানে সম্ভব নয়। এমনকি সংকটাপন্ন জটিল রোগীদের ক্ষেত্রে অনেক সময় চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নিতেও হিমশিম খেতে হয় এখানকার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের।

আরেক চিকিৎসক দেশে হৃদরোগ চিকিৎসায় বঙ্গবন্ধুর অবস্থান বর্ণনা করে বলেন, হৃদরোগ চিকিৎসায় এই হাসপাতাল ‘ডি’ গ্রেডের। বর্তমানে ঢাকায় যে চারটি হাসপাতালে হৃদরোগের ভালো চিকিৎসা হয়, সে তালিকায় এই হাসপাতাল নেই। এখানকার চিকিৎসকদের দক্ষতা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।

এই চিকিৎসক একটি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ১০-১২ বছর আগে জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালের এক চিকিৎসক এই হাসপাতালে যোগ দিয়েছেন। তখন তিনি সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। তার সার্জারির দক্ষতা নিয়ে আমাদের যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। এমন আরও কিছু চিকিৎসক এখানে রয়েছেন। এসব চিকিৎসক হৃদরোগের চিকিৎসায় বা ওপেন হার্ট সার্জারিতে জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালের চিকিৎসকদের তুলনায় অনেক পিছিয়ে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসার ব্যাপারে এই চিকিৎসক বলেন, হৃদরোগ বিভাগ ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসার ব্যাপারে ভয় পাচ্ছিল। এমনকি তারা রিং পর্যন্ত পরাতে রাজি ছিল না। তার চিকিৎসায় বাইরের অন্তত চার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে রাখা উচিত ছিল বলে মনে করেন তিনি। তার মতে, বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের চেয়ে ওই চার চিকিৎসক অনেক বেশি যোগ্য ও দক্ষ।

হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, কার্ডিওলজি বিভাগের দুটি গুরুত্বপূর্ণ মেশিন নষ্ট। এর মধ্যে একটি ‘ইন্ট্রা অ্যারোটিক বেলুন পাম্প’ ও অন্যটি ‘আইভার’ মেশিন। প্রথমটি ব্যবহার হয় হার্ট ফোলানোর কাজে। পরেরটি এনজিওগ্রাম করার আগে রোগীর রক্তচাপ কমে গেলে তা বৃদ্ধি করতে। রিং পরানো রোগীর জন্য বেলুন পাম্প খুবই প্রয়োজনীয়।

এই দুই মেশিন নষ্ট থাকার কথা স্বীকার করেছেন কার্ডিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মো. হারিসুল হক। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, এ মেশিন দুটি নষ্ট। তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেগুলো ঠিক করার উদ্যোগ নিয়েছে।

একইভাবে এই বিভাগের তিনটি ক্যাথল্যাব মেশিনের মধ্যে দুটিই নষ্ট। এর মধ্যে বয়স্কদের জন্য দুটি মেশিনের একটি প্রায় দুই বছর ধরে নষ্ট। অন্যটিও প্রায় ছয় মাস ধরে নষ্ট। এর আগে দুবার মেরামত করা হলেও এগুলো দিয়ে বেশি দিন কাজ চালানো সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে শিশুদের জন্য নির্ধারিত পেডিয়াট্রিক ক্যাথল্যাবটি এক মাস হলো ঠিক করে আনা হয়েছে। এর আগে এই মেশিনও বেশ কিছুদিন ধরে নষ্ট ছিল। ক্যাথল্যাব নষ্ট থাকার কারণে বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে সব ধরনের এনজিওগ্রাম ও এনজিওপ্লাস্টি দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এ ব্যাপারে শিশু কার্ডিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান ও অধ্যাপক ডা. জাহিদ হোসেন দেশ হৃদরোগের পর্যাপ্ত চিকিৎসা নেই বিএসএমএমইউতে রূপান্তরকে বলেন, শিশুদের যে ক্যাথল্যাব সেটি মাসখানেক আগে ঠিক করে আনা হয়েছে। তবে অন্য ক্যাথল্যাব মেশিনগুলো অনেক পুরনো হয়ে যাওয়ায় মেরামত করেও কাজ চালানো যাচ্ছে না।

চিকিৎসকরা বলেন, ক্যাথল্যাব চালু থাকলে গড়ে ১০টি এনজিওগ্রাম ও এনজিওপ্লাস্টি করা সম্ভব। অ্যাডাল্ট মেশিন দুটিতে করা যায় গড়ে ২০ থেকে ২৫টি।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কার্ডিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আলী আহসান বলেন, অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। মোটামুটি সেবা দিয়ে যাচ্ছি। তিনটি ক্যাথল্যাব দীর্ঘদিন নষ্ট ছিল। দুটি ঠিক করেছি। একটি প্রক্রিয়াধীন। বেলুন পাম্প মেশিনটি নষ্ট। তবে অসুবিধা হয় না। আশপাশ থেকে নিয়ে আসি। এটার দাম ৭০ লাখ টাকার মতো। আইভার মেশিন বেশি কাজে লাগে অ্যাকাডেমিকে। সেটাও ঠিক হয়ে যাবে। আমরা মিটিং করেছি।

‘তবে সবচেয়ে বড় সংকট আমাদের জায়গার স্বল্পতা’ উল্লেখ করে এই চিকিৎসক আরও বলেন, মাত্র ১০০ শয্যা। রোগীর সংকুলান হয় না। জায়গা ছোট। সেজন্য দিনে ১০০টির বেশি ইকো করাতে পারি না। মাত্র একটি ইটিটি মেশিন। দুটি হলে ভালো হয়। সবকিছু পেলে চিকিৎসার মান বাড়বে।