ঢাকা রবিবার, ৫ই মে ২০২৪, ২২শে বৈশাখ ১৪৩১


আবার আসিব ফিরে এই সংসদে: শেখ হাসিনা


৩০ অক্টোবর ২০১৮ ০৬:০৮

আপডেট:
৫ মে ২০২৪ ০১:৩১

কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার ভাষায় দৃঢ়তার প্রতিজ্ঞা এবং কবি জীবনানন্দ দাসের আশায় আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিজয়ী হয়ে ফের সংসদে ফিরে আসার আশাবাদ ব্যক্ত করলেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে যে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে, ইনশাল্লাহ এটা অবশ্যই সামনে থাকবে। আমি বিশ্বাস করি, এই উন্নয়নের ছোঁয়া আজকে বাংলাদেশের মানুষের জীবনে লেগেছে। নিশ্চয়ই বাংলাদেশের জনগণ আমাদেরকে নৌকা মার্কায় ভোট দেবে।

সোমবার (২৯ অক্টোবর) দশম জাতীয় সংসদের ২৩তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে তিনি এই আশাবাদ করেন। এদিন বিকেল ৪টা ২৫ মিনিটে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়।

স্পিকারের মাধ্যমে দেশের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই যে মেগাপ্রজেক্টগুলি নিয়েছি, বাংলাদেশের মানুষের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে চাই। আমাদের তরুণ প্রজন্মের জন্য একটা সুন্দর ভবিষ্যত গড়ে তোলার যে পদক্ষেপগুলো নিয়েছি, সেইগুলো শেষ করার জন্য আরও কিছু সময় আমাদের প্রয়োজন। আর সেই সময়টা, সেই সুযোগটা দিতে পারে বাংলাদেশের জনগণ। যদি তারা আগামী ইলেকশনে আমাদেরকে ভোট দেন এবং ভোট দিয়ে আবার তাদের সেবা করার সুযোগ দেয় নিশ্চয়ই আমরা আমাদের যে লক্ষ্য স্থির করেছি, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশই শুধু হবো না- বাংলাদেশ হবে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্রমুক্ত দেশ।’

‘লক্ষ্যটা এই জন্য স্থির করেছি, ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালন করব। ২০২০ সালের মার্চ মাস থেকে ২০২১ সালের মার্চ আমরা মুজিব বর্ষ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছি। এরই মধ্যে বাংলাদেশ হবে ক্ষুধামুক্ত দারিদ্রমুক্ত দেশ। এই বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় একটা উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই ২০৪১ সালের মধ্যে। ২০৪১ সাল পর্যন্ত হয়তো বেঁচে থাকব না কিন্তু যে পরিকল্পনা আমরা নিয়েছি এবং এটা বাস্তবায়নের কাজ যেভাবে শুরু করেছি, তাতে আমার দৃঢ় বিশ্বাস ভবিষ্যতে যারাই আসবে এটা অব্যাহত রেখে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবে।
বাংলাদেশের জনগণের এই ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আরও সুদূরপ্রসারি পরিকল্পনা নিয়েছি। সেটা হলো ডেলটা প্লান-২১০০। কেন করেছি, কারণ প্রত্যেকটা জাতিকে যদি উন্নত হতে হয় তার জন্য দিক নির্দেশনা থাকতে হবে। একটা স্থির লক্ষ্য থাকতে হবে। সেই লক্ষ্যটা সামনে নিয়েই সেই দেশটা এগিয়ে যাবে। তাহলেই আমরা আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব। আমরা লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে এদেশ স্বাধীন করেছি। স্বাভাবিকভাবে আমাদের সব সময় এটাই চিন্তা বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে দেওয়া, উন্নত জীবন করে দেওয়া’ বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘অনেক দেশ উন্নত দেখি। সে দেশের মানুষ যদি সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে, আমার দেশের মানুষ কী অপরাধ করেছে, কি অন্যায় করেছে- যে তাদেরকে দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত হতে হবে। বাংলাদেশ আজকে দারিদ্র্যমুক্ত, সে পথে আমরা অগ্রসর হয়েছি। বাংলাদেশের মানুষের জীবন মান আরও উন্নত হবে। বিশ্বের সাথে তারা প্রতিযোগিতা করে চলতে পারবে সেটা বিশ্বাস করি। সেটা আমরা করতে পারব, এই দৃঢ় বিশ্বাস আমার আছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরীতা নয়। বাংলাদেশ আজকে সারা বিশ্বের প্রতিটি দেশের সাথেই একটা সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলছে। সকলের সাথে বন্ধুত্ব জাতির পিতা যে পররাষ্ট্র নীতিমালা দিয়ে গিয়েছিলেন আমরা কিন্তু সেই নীতিমালা মেনেই চলেছি এবং তা করতে সক্ষম হয়েছি।’

সম্ভাবনাময় ব্লু-ইকোনমি’র কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা বিশাল সমুদ্রসীমা অর্জন করেছি। ব্লু-ইকোনমি নিয়ে আমরা পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। বিশাল সমুদ্র সম্পদ আমাদের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখবে। সেটাও আমাদেরকে বাস্তবায়ন করতে হবে। ইতোমধ্যে যে কাজগুলো আমরা করে যাচ্ছি, পরিকল্পনা নিয়েছি যদি আরেকটি বার ক্ষমতায় আসতে পারি, নিশ্চয়ই আমরা এই ব্লু-ইকোনমি বাস্তবায়ন করতে পারব। যা আমাদের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখবে।

বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং এই উন্নয়নের ছোঁয়াটি কিন্তু সকলের কাছে পৌঁছে গেছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে সকলের সহযোগিতায় আমরা এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি।
এর আগে তো বহুবার সংসদে ছিলাম। সংসদের যে পরিবেশটা সৃষ্টি করা হতো এই সংসদের দাঁড়িয়ে কত কটুক্তি শুনতে হয়েছে। কত নোংরা কথা শুনতে হয়েছে। কত অঙ্গভঙ্গি দেখতে হয়েছে। সেটা বলার মতো না। কিন্তু এই দশম জাতীয় সংসদে ওই ধরনের বর্বরতা অসভ্যতা বা অশালীন বাক্য, এগুলো কাউকে শুনতে হয়নি। সংসদ সম্পর্কে মানুষের মনে যে একটা বিরূপ ধারণা জন্মাতে শুরু করেছিল, দশম জাতীয় সংসদ মানুষের মন থেকে সেই বিরুপ ধারণা দূর করে দিয়ে সংসদ যে জাতির স্বার্থে কাজ করে, জনগণের স্বার্থে কাজ করে, মানুষের স্বার্থে কাজ করে, সেটাই কিন্তু নিশ্চিত করেছে। গণতন্ত্রের ভিত্তিটা আরও মজবুত হয়েছে, আরও শক্তিশালী হয়েছে। গণতন্ত্রের প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে। বিশ্বাস বেড়েছে এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকলে দেশের যে উন্নতি হয় সেটাও আজকে প্রমাণিত। তাই মানুষের জীবনে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই, এই দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব। আমি সুকান্তের ভাষায় বলতে চাই, ‘চলে যাব, তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ, প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল। এই বিশ্বকে এই শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার’। আমার জীবনের কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। আমার বেঁচে থাকাটাই হচ্ছে একটা দুর্ঘটনা। গ্রেনেড হামলা, গুলি, বোমাবাজি অনেক কিছু আমাকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। এবং আমি জানতাম আমার জীবনে এ রকম আঘাত আসবে। কারণ যে দেশের মাটিতে আমার বাবা-মা ভাই সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। তাই যেকোনো সময় আমি মৃত্যুর কোলে পড়তে পারি। এটা আমি জানি। এটা জেনেও যতক্ষণ, আমার দেহে প্রাণ আছে ততক্ষণ আমি দেশের মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চাই। আমি যে দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করি। কার জন্য- এটা তো আমার স্বার্থে না। আমার দেশের মানুষের কল্যাণে। মানুষের স্বার্থে। জনগণকে একটা সুন্দর জীবন দেবো, সেই আকাঙ্ক্ষা নিয়ে। শুধু সেই আকাঙ্ক্ষা নিয়েই কিন্তু এই শ্রম আমি দিয়ে যাচ্ছি এবং যতক্ষণ আছি দিয়ে যাব। যেন এই দেশের মানুষ সুন্দর জীবন পায়। যে জীবনের স্বপ্নটা আমার বাবা দেখেছিলেন। আমি সেটাই মানুষের জন্য নিশ্চিত করে দিয়ে যেতে চাই।

তাই আবারও আমি দেশবাসীকে অনুরোধ করব, আপনারা আমাদেরকে ভোট দেন। আবার সেবা করার সুযোগ দেন। ইনশাল্লাহ এই বাংলাদেশ আর পিছিয়ে থাকবে না, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, অদম্য গতিতে এগিয়ে যাবে। জাতির পিতা বলেছেন, তার ৭ মার্চের ভাষণে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। ইনশাল্লাহ বাংলাদেশকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।

কবি জীবনানন্দ দাসের কবিতা ‘আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে- এই বাংলায়’ উচ্চারণ করে, আবার আসিব ফিরে এই সংসদে- বলেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।