নেছারাবাদে সমবায় সমিতির সম্পাদকের বিরুদ্ধে গ্রাহকের কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তার অভিযোগ

পিরোজপুরের নেছারাবাদে সদস্যদের জমা দেওয়া সঞ্চয়ের প্রায় এককোটি টাকা নিয়ে উন্নয়ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সম্পাদক গাঁঢাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, উন্নয়ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি নামে ২০১৬ সালের ২৭ নভেম্বর প্রথমে একটি লাইসেন্স বের করে প্রতিষ্ঠানটির আত্মপ্রকাশ হয়। যার রেজিস্ট্রেশন নং- ৫২ (বায়ান্ন) পিডি। পাঁচ বছরে দ্বিগুণ মুনাফা দিয়ে আসছিল প্রতিষ্ঠানটি। প্রথম পর্যায়ে গ্রাহকদের জনপ্রিয়তা অর্জন করলেও ২০২৩ ইং সালের শেষের দিক থেকে প্রতিষ্ঠানটির সম্পাদক হরিপদ মন্ডলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন গ্রাহকরা। প্রথমে সম্পাদকের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠানটির ক্যাশিয়ার শিশির মন্ডল ভারতে চলে যান। তার কিছু দিনের মধ্যেই গ্রাহকের কোটি টাকা ও সমিতির মাধ্যমে ক্রয়কৃত জমি বিক্রির নগদ টাকা নিয়ে আত্মগোপনে চলে যান সম্পাদক হরিপদ মন্ডল। পরবর্তীতে গ্রাহকদের চাঁপে ফিল্ড অফিসার হরষিত মন্ডল আত্মগোপনে চলে যান। প্রতিষ্ঠানের পরিচালক হিসাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত সম্পাদক হরিপদ মন্ডল সহ কর্মচারীরা পালিয়ে থাকায় সদস্যরা তাদের সঞ্চয়কৃত টাকা উদ্ধার করতে পাগলের মতো ছুটে বেড়াচ্ছেন।
পলাতক অবস্থায় থাকা উন্নয়ন সমবায় সমিতির ফিল্ড অফিসার রামচন্দ্রপুর গ্রামের হরষিৎ মন্ডল মুঠোফোনে বলেন, এলাকার অনেক মানুষ তার মাধ্যমে ওই সমিতিতে টাকা জমা রেখেছেন। টাকার পরিমাণ কোটি টাকার কাছাকাছি হবে। এছাড়াও তিনি ঋণ বিতরণ ও কিস্তি আদায় করতেন। অফিসে গিয়ে মালিক (সম্পাদক) হরিপদ মন্ডল ও ব্রাঞ্চ ম্যানেজার শুভ বিশ্বাসের কাছে বড় বড় অঙ্কের সঞ্চয়ের টাকা জমা দিয়েছেন। ফিল্ড অফিসারের কাজ করেন তিনি। এখন গ্রাহক ও এলাকার লোকজন তাকে খুঁজে বেড়াচ্ছেন। হয়রানির ভয়ে তিনি এলাকা থেকে দূরে পালিয়ে রয়েছে।
ভুক্তভোগী গ্রাহক ফরিদা বেগম বলেন, প্রায় তিন বছর আগে এই সমিতিতে ৭ লক্ষ টাকা জমা রেখেছিলাম। কিন্তু এখন মালিকপক্ষ ও কর্মচারীরা পালিয়ে যাওয়ায় অফিস বন্ধ হয়ে গেছে। আমার স্বামী অসুস্থ তিনটি মেয়ে কোন ছেলে সন্তান নেই। স্বামীর চিকিৎসাও চলে না, ঘরে বাজারও করতে পারিনা। আদৌ টাকা পাবো কিনা জানিনা।
ভুক্তভোগী নুর আমিন জানান, ডাবল পাবার আশায় সঞ্চয় ও ডিপিএস রেখেছিলাম। আমার এই সমিতিতে প্রায় ৬ লক্ষ টাকা জমা আছে। মালিকপক্ষ পালিয়ে যাবার পরে টাকা পাবার আশা ছেড়ে দিয়েছি। শুনেছি কিস্তি বাবদ গ্রাহকদের কাছে কিছু টাকা অফিসের মাধ্যমে ফিল্ডে দেয়া আছে। অফিস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই টাকাও তারা উঠাতে পারছে না। যদি মালিকপক্ষ পুনরায় অফিস খুলে কিস্তি কালেকশন করে তাহলে কিছু টাকা আমরা পেতাম।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে উন্নয়ন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সম্পাদক হরিপদ মন্ডল ও ক্যাশিয়ার শিশির মন্ডলের কাছে মোবাইল ফোনে কথা বলতে চাইলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে নেছারাবাদ উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসান রকি জানান, নেছারাবাদ উপজেলায় সমবায় সমিতির বিষয়টি নিয়ে আমি চিন্তিত। একাধিক সমবায় সমিতির মালিক-কর্মচারীরা পালিয়ে গেছে। আমি এখানে যোগদানের পূর্বে গণহারে সমবায় সমিতির লাইসেন্স দেয়া হয়েছিল। আমি এসে একশত দশটি লাইসেন্স বাতিল করেছি। যদি কেহ সমবায় সমিতির লাইসেন্স নিয়ে অপরাধ করে অবশ্যই কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।